বিক্ষোভ আদালত চত্বরে
হারানো রাজ্যপাটে ঘোর বিড়ম্বনায় লক্ষ্মণ
প্রায় সাড়ে চার মাস পরে তিনি ফিরলেন তাঁর একদা খাসতালুকে। একদাই। কেননা, রাজ্যপাট আগেই গিয়েছে। প্রতিপত্তি কমার লক্ষণও দেখা যাচ্ছিল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঝুপড়িবাসী এক মহিলা তর্জনী উঁচিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমাদের জন্য কী করেছেন!’ তার পরেও হলদিয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ লক্ষ্মণ শেঠকে জুতো-ঝাঁটা দেখাবে এতটা ভাবা যায়নি। মঙ্গলবার তেমনই ঘটল হলদিয়া আদালত চত্বরে। এক সময়ে যে হলদিয়া চলত তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে, সেখানেই এ দিন লক্ষ্মণবাবু ফিরলেন ‘বন্দি’ হয়ে।
হলদিয়ার আদালত থেকে বেরোনোর পথে। ছবি: আরিফ ইকবাল খান।
নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে অভিযুক্ত প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ, পূর্ব পাঁশকুড়ার প্রাক্তন বিধায়ক অমিয় সাহু এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষকসভার সম্পাদক অশোক গুড়িয়াকে এ দিন হাজির করা হয় হলদিয়া এসিজেএম আদালতে। এই আদালতের এলাকাতেই নন্দীগ্রাম। ক্ষোভ-বিক্ষোভের সম্ভাবনা আঁচ করেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালতের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। মোতায়েন করা হয়েছিল বাড়তি পুলিশ। তা সত্ত্বেও সকাল দশটা থেকেই আদালত চত্বর এবং সামনের রাস্তায় ভিড় বাড়তে থাকে। আর সেই ভিড়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ছিলেন মহিলারা। ঠিক যেমন নন্দীগ্রামে জমি-রক্ষার আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকতেন তাঁরা। বস্তুত, এ দিনের ভিড়ের অনেক মুখই নন্দীগ্রামের। জমি-রক্ষা আন্দোলনের যে-সব কর্মীর ‘নিখোঁজ’ হওয়া নিয়ে এই মামলা, তাঁদের পরিজনেরা এসেছিলেন। সঙ্গী হয়েছিলেন তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আরও অনেক কর্মী-সমর্থক।
লক্ষ্মণ শেঠদের নিয়ে প্রিজন ভ্যান বেলা বারোটা নাগাদ আদালত চত্বরে পৌঁছয়। তার অনেক আগেই বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছিল। পুলিশকর্মীরা ব্যারিকেড করে বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে হিমসিম খান। এক সময়ে আদালতের একটি ফটক বন্ধ করে দিতে হয়। ফটকের বাইরেই ঝাঁটা-জুতো উঁচিয়ে লক্ষ্মণবাবুদের শাস্তির দাবিতে চলতে থাকে বিক্ষোভ। গরমে বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়েন। সংজ্ঞা হারান ‘নিখোঁজ’ সত্যেন গোলের স্ত্রী দুর্গাদেবী। পুলিশের শত অনুরোধেও বিক্ষোভ থামেনি। ‘নিখোঁজ’ আদিত্য বেরার স্ত্রী সোমাদেবী, ভগীরথ মাইতির স্ত্রী সুষমাদেবীরা ‘কঠোরতম শাস্তি’র দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
মঙ্গলবার হলদিয়া আদালতে অশোক গুড়িয়া (বাঁ দিকে) এবং অমিয় সাহু। নিজস্ব চিত্র।
এরই মধ্যে প্রিজন ভ্যান এসে পড়ে। দ্রুত গাড়িটিকে আদালত চত্বরের ফটক খুলে ঢুকিয়ে নেওয়া হয়। ক’দিন আগে মেদিনীপুর আদালতে প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে ঘিরে বিক্ষোভের মধ্যে এক জন তাঁকে জুতো দিয়ে মেরেছিলেন। হলদিয়ায় অবশ্য বিক্ষোভকারীদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব রেখেই লক্ষ্মণবাবুদের কোর্ট লক-আপে ঢোকানো হয়। পরে তাঁদের এসিজেএমের এজলাসে নিয়ে যাওয়া, ফের কোর্ট লক-আপে ফেরানো এবং সর্বশেষ কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার সময়ে আর গোলমাল হয়নি। কোর্ট লক-আপেই লক্ষ্মণবাবুর সঙ্গে দেখা করেন তাঁর স্ত্রী, হলদিয়ার পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডাশেঠ, দুই ছেলে সায়ন্তন ও দীপ্তম এবং পুত্রবধূ সুস্মিতা। দেখা করেন হলদিয়ার বেশ কয়েক জন বাম কাউন্সিলর এবং সিপিএম নেতা। কোর্ট লক-আপেই লক্ষ্মণবাবু পোশাক বদল করেন।
তমালিকাদেবী এ দিনও দাবি করেন, “উনি নির্দোষ। বিচারব্যবস্থার উপরে পূর্ণ আস্থা রয়েছে।” বাম কাউন্সিলর এবং কোর্টে আসা সিপিএম নেতাদের দাবি, “লক্ষ্মণবাবু ক্লান্ত হতে পারেন কিন্তু ভেঙে পড়েননি। বলেছেন, কোনও অন্যায় করেননি, ভেঙে পড়ারও প্রশ্ন নেই।’’
আদালত চত্বরে সংজ্ঞাহারা নিখোঁজ সত্যেন গোলের স্ত্রী দুর্গাদেবী।
মঙ্গলবার হলদিয়া মহকুমা আদালতে আরিফ ইকবাল খানের তোলা ছবি।
কিন্তু এক দিন যে আদালত-ভবন নির্মাণেও ছিল তাঁর মুখ্য ভূমিকা, সেখানেই বন্দি অবস্থায় হাজিরা দিতে এসে লক্ষ্মণবাবুর ঝাঁটা-জুতো আর কটূক্তির মধ্যে পড়াটা কি অভাবনীয় নয়? প্রাক্তন সাংসদের ঘনিষ্ঠ সিটু-নেতা সুদর্শন মান্নার মতো অনেকের দাবি, যা ঘটেছে তা ‘তৃণমূলের পরিকল্পিত’। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সোমবার আদালতের আইনজীবীদেরও লক্ষ্মণবাবুর পক্ষে না দাঁড়ানোর জন্য ‘প্রভাবিত’ করার চেষ্টা হয়েছিল। যদিও মঙ্গলবার কলকাতা ও হলদিয়া মিলিয়ে জনা চল্লিশ আইনজীবী লক্ষ্মণবাবুদের নির্দোষ দাবি করে জামিনের জন্য সওয়াল করেন। অন্য দিকে, তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছেন, বিক্ষোভে দল জড়িত নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.