বিষক্রিয়ায় মরে গেল ২০ বিঘা আয়তনের একটি বিলের সমস্ত মাছ। মঙ্গলবার সকালে লিলুয়ার রামকৃষ্ণ পল্লিতে এই ঘটনায় অভিযোগ, প্লট করে বিক্রি করে দেওয়া জমিতে পৌঁছনোর রাস্তা করতে ওই বিলের জলে বিষ মিশিয়েছে জমি মাফিয়ারা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মরে গিয়েছে ৪ কুইন্টালের বেশি মাছ। এলাকার তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে অভিযোগ, এর পিছনে রয়েছে জমি মাফিয়াদের সিন্ডিকেট, হাওড়ায় যাদের দাপট চলছেই। পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা থানায় ডায়েরিও করেন। তাতে বলা হয়, রাস্তা তৈরিতে বাধা পেয়ে রাতের অন্ধকারে জলে বিষ মেশায় জমি মাফিয়ারা।
লিলুয়ার চামরাইলে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে রামকৃষ্ণ পল্লি ও দক্ষিণপাড়ার প্রায় ২৫০টি পরিবারের একমাত্র ভরসা পূর্ত দফতরের ওই বিল। বিলের জলে স্নান থেকে কাপড় কাচা, এমনকী রান্না-বান্নার কাজও হয়। পাশাপাশি, এলাকার উন্নয়ন এবং দুঃস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে বিলটি কোনও এক জন বাসিন্দাকে মাছ চাষের জন্য বাৎসরিক লিজও দেওয়া হয় গত ৪০ বছর ধরে। এ বছরও ভদ্রকান্ত বিশ্বাস নামে এক বাসিন্দাকে বিল লিজ দেওয়া হয়। তিনি মাছ-চাষও করেছিলেন। |
এ দিন সকালে এলাকার মানুষ দেখেন বিলের সমস্ত মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এই দৃশ্য দেখে অসুস্থ হয়ে পড়লে ভদ্রকান্তবাবুকে স্থানীয় কোনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে শুয়ে তিনি বলেন, “অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে মাছের ব্যবসায় লগ্নি করেছিলাম। আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম।”
সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয়েরা। কয়েক জন বিলে নেমে মরা মাছ সংগ্রহে ব্যস্ত। বিলের উল্টো দিকে একটি অংশ বাঁশের খুঁটি পুঁতে ঘেরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই অংশ থেকে ৯ বিঘা জমি প্লট করে বিক্রি করে দিয়েছে জমি মাফিয়ারা। যার মধ্যে একটি খালও রয়েছে, যেটি হাওড়ার মূল নিকাশি খাল, ড্রেনেজ ক্যানালের সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় বাসিন্দা সমীর বিশ্বাস বলেন, “বছর খানেক আগে ওই খালটিও বোজাতে চেষ্টা করে প্রোমোটারেরা। আমাদের বাধায় পারেনি।” তিনি জানান, বিলের মাঝখান দিয়ে রাস্তা করে ওই জমিতে পৌঁছনোর জন্য দিন পনেরো আগে জাতীয় সড়কের দিক থেকে কয়েক ট্রাক ঘেঁষ ফেলা হয়। ঘটনাটি কী হচ্ছে, বুঝতে পেরে তাঁরা প্রতিবাদ করলে সিন্ডিকেটের লোকজন শাসিয়ে যায়। লিলুয়া থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ উল্টে বাসিন্দাদেরই গ্রেফতারের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। এর পরেই তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের উদ্যোগে থানায় বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা। বিল ভরাটের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। বেগতিক দেখে বিল বোজানো বন্ধ করে সিন্ডিকেট। তার পরেই এ দিন সকালে গোটা বিল জুড়ে মরা মাছ ভেসে ওঠে।
ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। ওই এলাকায় জমি মাফিয়ারা দীর্ঘদিন ধরেই নানা অপরাধ করছে। পুলিশকে বলেছি, এই ঘটনায় জড়িতদের দল না দেখে গ্রেফতার করতে।” হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) সুকেশকুমার জৈন বলেন, “খবর পেয়ে ওই বিল ভরাটের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। মাছ কী ভাবে মারা গেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাওড়ায় জমি মাফিয়াদের এই তাণ্ডব নতুন নয়। গত বছর বালি-জগাছা গ্রাম পঞ্চায়েতে জলাজমি বুজিয়ে বিক্রির প্রতিবাদ করে খুন হন বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত। তদন্তে জানা যায়, এতে জড়িত জমি মাফিয়াদের সিন্ডিকেট। কয়েক জন গ্রেফতারও হন। এ দিন তৃণমূলের বালি-জগাছা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুভাষ রায়ের দাবি, “আখের গোছাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ওই সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। প্রকৃত তদন্ত হলে সব বেরিয়ে আসবে।” |