যা কাল ছিল চাপা ক্ষোভ, আজ তা বিস্ফোরণের আকার নিল।
রাজ্যসভার প্রার্থী বাছাই থেকে কর্নাটকের পরিস্থিতি— সব নিয়ে দলের নেতাদেরই তোপের মুখে পড়লেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। আজ সংসদের অধিবেশন শুরুর আগেই লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক বসে। গডকড়ী না থাকলেও ছিলেন অরুণ জেটলি ও সুষমা স্বরাজরা। সেখানে প্রায় এক ডজন নেতা দলের কৌশল নিয়ে সরব হন।
বৈঠকের শুরুতেই যশবন্ত সিন্হা বলেন, “সংসদে আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হই, অথচ রাজ্যসভার প্রার্থী বাছাই নিয়ে যেন রীতিমতো বাজার বসেছে। এ ভাবে রাজ্যসভার প্রার্থী বাছা হলে আমাদেরই খেসারত দিতে হবে।” যশবন্তের সুরে সুর মিলিয়ে সরব হন হিমাচলের নেতা শান্তা কুমারও। বিহারে একটি আসনে রাজ্যসভার উপনেতা সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী না করে কেন জেডি(ইউ)-কে ছেড়ে দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দলের নেতারা। বলবীর পুঞ্জ বলেন, বিহারে নীতীশ কুমারকে জিতিয়ে আনতে বিজেপির ভূমিকা কিছু কম ছিল না। তা হলে কেন শরিক দলের কাছে নতিস্বীকার করা হল? বিহারের অন্য সাংসদ ভোলা সিংহও একই প্রশ্ন করেন। কর্নাটকে যে ভাবে ইয়েদুরাপ্পা চাপের রাজনীতি করছেন, তা সমাধানের জন্যও সরব হন সুরেশ অঙ্গারি। বিজেপি সাংসদ মানেকা গাঁধীও তাঁকে সমর্থন জানান। গডকড়ী এবং জেটলির সঙ্গে ফোনে কথাবার্তার পরে ইয়েদুরাপ্পা-ঘনিষ্ঠ বিধায়করা এ দিন অবশ্য বাজেট অধিবেশন বয়কটের সিদ্ধান্ত তুলে নিয়েছেন। আরএসএস-এর তরফে আবার বলা হয়েছে, ইয়েদুরাপ্পার বিদ্রোহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং বিজেপি এ ব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবে। গডকড়ী এ দিন নাগপুরে গিয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিজেপি সূত্রের মতে, গডকড়ী-জেটলি অক্ষের গতিবিধি নিয়ে আডবাণী-সুষমারা যে ভাবে চটে রয়েছেন, আজকের বৈঠকে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। এই নেতারা বৈঠকে মুখে কিছু না বললেও তাঁদের অনুগামীরা সরব হন। আডবাণী বলেন, সাংসদদের এই উদ্বেগ তিনি গডকড়ীকে জানাবেন। সুষমা বলেন, “আলোচনা ছাড়াই ঝাড়খণ্ডে অংশুমান মিশ্রকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁকে সমর্থন না করা উচিত। দিল্লি থেকেই রাজ্যের নেতাদের কাছে সেই নির্দেশ যাওয়া উচিত।” আজই আবার অহলুওয়ালিয়ার জন্মদিনে মিষ্টি খাইয়ে সুষমা তাঁকে আশীর্বাদ করে বলেন, আবার তাঁকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসা হবে। এর মধ্যে প্রকাশ জাভড়েকর বা অন্য কেউ যদি রাজ্যসভায় বিরোধী দলের উপনেতাও হন, তাঁকে সরানো অসম্ভব কিছু নয়। রাতে অংশুমান আবার একটি টিভি চ্যানেলকে বলেন, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বললেই তিনি সরে দাঁড়াবেন।
অহলুওয়ালিয়াকে মনোনয়ন না দেওয়ার প্রশ্নে অভিযোগের তির জেটলির বিরুদ্ধে যাওয়ায় তিনিও কিছুটা চাপের মুখে। জেটলির দাবি, বিহার থেকে শেষ পর্যন্ত অহলুওয়ালিয়াকে জিতিয়ে আনার চেষ্টাও তিনি করেছিলেন। কিন্তু কেন অহলুওয়ালিয়াকে তৃতীয় পছন্দের প্রার্থী হিসেবে রাখা হল, তার জবাব দিতে পারেননি। জেটলি-ও মনে করেন, যাঁরা বছরে ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা দলের হয়ে কাজ করেন, তাঁদের ইনাম দেওয়া প্রয়োজন। যাঁরা শুধু বছরে ৭০ দিন সংসদে কাজ করেই ক্ষান্ত, দলের কোনও কাজ করেন না, তাঁদের সাংসদ করে বসিয়ে রাখারও অর্থ হয় না। তবে আগামী মাসে অহলুওয়ালিয়ার বিদায় প্রসঙ্গে জেটলির বক্তব্য, “এ বারে রাজ্যসভায় আমাকে অনেক বাড়তি বোঝা নিতে হবে। অহলুওয়ালিয়া থাকায় আমাকে খুঁটিনাটি বিষয়ে ভাবতেই হত না।” |