|
|
|
|
শরিকদের সঙ্গে সপ্তাহে ৩ দিন বসবে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
শরিক তৃণমূল ভোটদানে বিরত থাকলেও সোমবার লোকসভায় সরকারের ত্রাতার ভূমিকার অবতীর্ণ হয়েছিল মুলায়ম সিংহের সমাজবাদী পার্টি। আর আজ রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু সরকার শুধু সপা-র নয়, সমর্থন পেল লোকসভায় ওয়াকআউট করা বিএসপি-রও। এই দুই পরস্পরবিরোধী দলকে পাশে নিয়ে অঙ্কের হিসেবেই রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ধন্যবাদ প্রস্তাব পাশ ও বিরোধীদের আনা সংশোধনী প্রস্তাব খারিজ করে দিতে সফল হল কংগ্রেস তথা সরকার।
কেন্দ্রে সরকারের স্থিতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনাক্রমের যথেষ্টই গুরুত্ব রয়েছে। তবু আজকের ‘সাফল্যের’ পরেও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখানোর ঝুঁকি নিতে নারাজ কংগ্রেস। বরং সতর্ক পদক্ষেপ করে ইউপিএ-র অভ্যন্তরীণ সমন্বয় আরও বাড়ানোরই বার্তা দিতে চেয়েছে তারা। আর তাই সনিয়া গাঁধী-মনমোহন সিংহের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় আজ সিদ্ধান্ত নেন, সংসদে জোটের সমন্বয় ধরে রাখতে এ বার থেকে সপ্তাহে তিন দিন বৈঠকে বসবে ইউপিএ-র শরিকরা। কোনও বিষয়ে শরিকদের কারও কোনও বক্তব্য বা আপত্তি থাকলে, তা ওই বৈঠকেই নিরসন করে ফেলার চেষ্টা হবে। |
|
মুকুল রায়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে মনমোহন সিংহ। মঙ্গলবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই |
সংসদের গত অধিবেশনেই এই ধরনের একটা সমন্বয় কমিটির প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি নিয়ে শরিকদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতেই ওই ধরনের কমিটির কথা ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও মনমোহনের সেই প্রস্তাবের রূপায়ণ কংগ্রেসই এত দিন করেনি। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা বুঝতে পারছেন, যে ভাবে তৃণমূল বা ডিএমকে-র মতো শরিকরা সংসদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে ও বিপক্ষে ভোট দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে, তার পর জোটের সমন্বয় কমিটি গঠন নিতান্তই সময়ের দাবি। উদ্দেশ্য এই যে, শরিকরা প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করার আগে যেন সমন্বয় বৈঠকেই তাঁদের ক্ষোভকে প্রশমিত করে ফেলা যায়। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল ওই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।
প্রসঙ্গত, ইউপিএ-তে সমন্বয়ের অভাব নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেসকে কাঠগড়ায় তুলছে তৃণমূল। গত কালও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে, শরিকদের মতকে গুরুত্ব দিচ্ছে না কংগ্রেস। মমতার সেই অভিযোগের জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি আজ বলেন, “কংগ্রেস বরাবরই স্পর্শকাতরতার সঙ্গে শরিকদের সঙ্গে আচরণ করেছে। এটা ঠিকই, সব রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ এক নয়। আর তা মাথায় রেখে সবাইকে নিয়ে চলার লক্ষ্যে অতিরিক্ত পথ হাঁটতে কংগ্রেস দ্বিধা করেনি। সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম (রেল বাজেট, দীনেশ ত্রিবেদীর ইস্তফা ও রেলমন্ত্রী হিসেবে মুকুল রায়ের শপথ গ্রহণ) শরিকদের সঙ্গে মানিয়ে চলার ব্যাপারে কংগ্রেসের মনোভাবকেই তুলে ধরেছে। ভবিষ্যতে শরিক সমন্বয় আরও বাড়াতে সচেষ্ট হবে কংগ্রেস।”
এ দিনই অবশ্য কংগ্রেসের পক্ষে কিছুটা অস্বস্তির কারণ হয়ে ওঠেন এনসিপি প্রধান তথা কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার। গত কাল প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, জোটের বাধ্যবাধকতার কারণে অনেক কঠিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিনতর হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যে তিনি যে ‘ব্যথিত’ তা জানিয়ে পওয়ার বলেন, “এমন একটাও উদাহরণ নেই, যেখানে আমরা সরকারের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছি।” শরিক নেতার ক্ষোভ কমাতে কংগ্রেসের তরফে পরে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর গত কালের মন্তব্য কোনও নির্দিষ্ট দলকে উদ্দেশ করে বলা হয়নি। কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা, এ নিয়ে আর বেশি জলঘোলা হবে না।
সব মিলিয়ে সংসদে আজকের যাবতীয় ঘটনা শরিকি ঘাত-প্রতিঘাতে দীর্ণ ইউপিএ তথা কংগ্রেসকে কিছুটা হলেও অক্সিজেন যুগিয়েছে। শরিক সঙ্কটের মুখে এত দিন সরকারের সম্ভাব্য সঙ্কটমোচন হিসেবে মুলায়মকেই তুলে ধরা হচ্ছিল। কিন্তু আজ রাজ্যসভার ছবিটা বুঝিয়ে দিল, প্রয়োজনে মায়াবতীকেও পাশে পেতে পারে কংগ্রেস। তবে সেই সঙ্গে শরিকি সমন্বয় বাড়ানোর চেষ্টাও যে তারা চালিয়ে যাবে, তারও ইঙ্গিত আজ মিলেছে।
আজ লোকসভায় রেল বাজেট নিয়ে বিতর্কের সূচনা করে কংগ্রেস সাংসদ পি সি চাকো তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসার পাশাপাশি সিপিএম তথা বামেদের কটাক্ষ করেন। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে চাকো বলেন, “আমাদের কিছু সমস্যা থাকলেও সেটা আমরা নিজেরাই মিটিয়ে ফেলবো।” রেলের বর্ধিত ভাড়া আংশিক প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গরিব-দরদী মনোভাবের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “ভাড়া কোথায় কতটা কমানো হবে, সে ব্যাপারে সংসদ সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে ভাড়ার পুনর্বিন্যাসের পুরো ব্যাপারটাই যে অযৌক্তিক, এমন কোনও সিদ্ধান্তেও আমরা আসতে পারি না।”
গত কালের মতোই রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ধন্যবাদ প্রস্তাবে আজ জবাবি বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সেই সঙ্গে জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি) নিয়ে বিরোধী ও সরকারের শরিকদের আনা সংশোধনী প্রস্তাবের ব্যাপারে সরকারের ভাবনা স্পষ্ট করে দেন। মনমোহন জানিয়ে দেন, সরকার এনসিটিসি গঠন করতে চায় ঠিকই, তবে এ ব্যাপারে রাজ্যগুলির উদ্বেগও মাথায় রাখা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যাখ্যা সত্ত্বেও সংশোধনী প্রস্তাবে অনড় থাকেন বাম, বিজেপি সাংসদরা। তাঁরা ভোটাভুটি দাবি করেন। এই অবস্থায় গত কালের মতো আজ রাজ্যসভাতেও তৃণমূল ভোটাভুটির সময় অনুপস্থিত থাকে। এমনিতেই রাজ্যসভায় সরকার সংখ্যালঘু। ২৪৫ সদস্যের সভায় ইউপিএ-র শক্তি মাত্র ৯৭। তার মধ্যে তৃণমূলের ৬ জন সাংসদ ভোটাভুটিতে অনুপস্থিত থাকলেও সপা-র পাশাপাশি বিএসপিও সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। ফলে সরকার সহজেই জিতে যায়। তাৎপর্যপূর্ণ হল, গত কাল বিএসপি লোকসভায় ভোটাভুটির সময় কক্ষ ত্যাগ করেছিল। তা ছাড়া, কাল তাদের সমর্থন বিশেষ প্রয়োজন ছিলও না সরকারের। কিন্তু আজ তা অপরিহার্য হতেই মায়াবতীর দলের সাংসদরা সরকারের পাশে দাঁড়ান। গোটা ঘটনায় এটাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মুলায়মের পাশাপাশি মায়াবতীর সঙ্গেও দৌত্য অব্যাহত রেখেছেন কংগ্রেসের রাজনৈতিক ম্যানেজারেরা।
সরকারের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, সঙ্কটের মুহূর্তে কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশের যুযুধান দুই আঞ্চলিক দলকেই যে পাশে পেতে পারে, তা প্রমাণিত। তা ছাড়া কেন্দ্রের সাহায্য মায়া-মুলায়ম উভয়েরই প্রয়োজন। বিশেষ করে কেন্দ্রে সরকারকে অস্থির করে মায়াবতীর এখনই কোনও লাভ হবে না। রাজ্যসভার এই সমীকরণ আজ স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি-র কপালে ভাঁজ ফেলেছে। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, এই সমীকরণ অটুট থাকলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেস অনায়াসে তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে পারবে। এই অবস্থায় আজ কংগ্রেসকে আক্রমণ করে দলের এক নেতা বলেন, “কংগ্রেস বরাবরই সিবিআইয়ের জুজু দেখিয়ে সপা-বিএসপিকে পাশে রাখার চেষ্টা করে। আজকের ঘটনাও তা বুঝিয়ে দিল।” তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব এই অভিযোগে বিশেষ কর্ণপাত করেনি। |
|
|
|
|
|