রাজ্যসভাতেও থাকল না তৃণমূল, সরকারকে সমর্থন বিএসপির
রেলকে লাভের মুখ দেখানোই অগ্নিপরীক্ষা মুকুলের
কেই বোধহয় বলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি!
জুলাই মাসে কানপুরে কালকা মেল দুর্ঘটনার পরে রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। আর আজ দীনেশের পরিবর্তে যখন রাষ্ট্রপতির প্রতিভা পাটিলের সামনে রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন মুকুল রায়, ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা আগেই উত্তরপ্রদেশের হাতরাসের কাছে রেল-দুর্ঘটনা। প্রহরাবিহীন লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময়ে একটি যাত্রিবাহী গাড়ি ও প্যাসেঞ্জার ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষে মৃত্যু ১৬ জনের।
কালকা-দুর্ঘটনার পরেই সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রেলমন্ত্রী দীনেশ জানিয়েছিলেন, আগামী দিনে রেলের সুরক্ষাব্যবস্থা মজবুত করাই হবে মন্ত্রকের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। আজ দায়িত্ব পেয়ে নতুন রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বললেন, “যাত্রী নিরাপত্তা, সময়ে ট্রেন চালানো এবং পরিষেবার উন্নতি করাই মন্ত্রকের পাখির চোখ।”
গত তিন বছরে এই নিয়ে তিন বার রেলমন্ত্রী পরিবর্তনের সাক্ষী থাকল রেল মন্ত্রক। আর্থিক ভাবে বেহাল রেলকে আয়ের রাস্তা দেখিয়ে চাঙ্গা করে তোলাই মুকুলবাবুর অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি রেলের সার্বিক পরিকাঠামোগত উন্নতিতেও নজর দিতে হবে নতুন রেলমন্ত্রীকে। সমান ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলিতেও। মুকুল নিজে আজ ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তিনি শক্ত হাতেই মন্ত্রকের হাল ধরতে চান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন যে ‘ভিশন-২০২০’ তৈরি করেছিলেন, তা রূপায়ণে মন্ত্রক অগ্রাধিকার দেবে বলে জানা গিয়েছে।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নতুন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। মঙ্গলবার। ছবি: পি টি আই।
আজ থেকে সংসদের উভয় কক্ষে রেল বাজেট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লোকসভা-রাজ্যসভায় যতটা সম্ভব থাকার চেষ্টা করেছেন মুুকুল। সেই কারণে রেল মন্ত্রকে যাওয়ার পরিকল্পনাও আজ বাতিল করে দেন তিনি। সকালে বাজেট বিতর্ক শুরু হওয়ার ঠিক আগে রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান-সহ সমস্ত বোর্ড সদস্যকে সংসদে নিজের কামরায় ডেকে নেন মুকুল। বাজেট-বিতর্কে বিরোধী সাংসদদের প্রশ্নবাণের মোকাবিলা করার রণকৌশল তৈরির পাশাপাশি সুরক্ষা প্রশ্নে তিনি যে কোনও গাফিলতি মেনে নেবেন না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন রেলকর্তাদের। মন্ত্রক সূত্রের খবর, সমস্ত সুরক্ষা-নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখতে সমস্ত জোনগুলিকে অবিলম্বে একটি নির্দেশ পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
তবে সবার আগে রেলকে কী ভাবে লাভের রাস্তায় ফিরিয়ে আনা যায়, সেই সমাধানসূত্র খোঁজাই মুকুলের সবথেকে কঠিন পরীক্ষা। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে যাত্রিভাড়ার বর্ধিত হার আংশিক প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে রেলকে বাড়তি অর্থ দিয়ে অক্সিজেন জোগানোর রাস্তায় যে যোজনা কমিশন বা অর্থ মন্ত্রক হাঁটবে না, তা বুঝতেই পারছেন রেল কর্তারা।
আজ আবার রেলের পাঁচটি ইউনিয়নের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে ভাড়া না কমানোর জন্য অনুরোধ করা হবে বলে স্থির করা হয়েছে। একান্তই যদি ভাড়া কমানো হয়, তাহলে সমপরিমাণ অনুদান (ম্যাচিং গ্রান্ট) যাতে অর্থ মন্ত্রক দেয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হবে। নইলে বিক্ষোভের রাস্তায় হাঁটবে ইউনিয়নগুলি। মুকুলকে তাদের সঙ্গেও একটা বোঝাপড়ায় আসতে হবে। মমতা নিজে রাজ্যের জন্য যে প্রকল্পগুলি ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলো সময়ে শেষ করার জন্য মুকুলের উপর চাপ থাকবে। মমতার ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, রাজ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বে (পিপিপি) যে রেল কারখানাগুলি গড়ে ওঠার কথা, সেগুলির জন্য এখনও কোনও সংস্থা বিনিয়োগে এগিয়ে আসেনি। স্বভাবতই মুকুলবাবুর অন্যতম কাজ হবে, বড় শিল্প সংস্থার আস্থা অর্জন করে রাজ্যের রেল প্রকল্পে বিনিয়োগে রাজি করানো। তাতে এক দিকে রাজ্যের প্রকল্পগুলিতে চাকরির সুযোগ হবে। অন্য দিকে শিল্পপতিদের কাছে রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এ ছাড়া কলকাতা-সহ শহরতলিতে মেট্রো পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়ার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী, আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই কাজ শেষ করাও নতুন রেলমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকতে চলেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.