আমাদের ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে, ফের সরব গুরুঙ্গ
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বিধানসভা বয়কট, রাজ্যসভার ভোট বয়কটের ঘোষণা করা ছাড়াও, তৃণমূল পরিচালিত সরকারের বিরুদ্ধে ‘ধোঁকা’ দেওয়ার অভিযোগ তুললেন খোদ মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ।
রবিবার দুপুরে কালিম্পঙের মংপুর রবীন্দ্র ভবনে মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গুরুঙ্গ বলেন, “গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) আওতায় তরাই-ডুয়ার্সের এলাকা আসবে বলে রাজ্যের তরফে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এখন তা নিয়ে নানা টালবাহানা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য মনোনীত জিটিএ-ও হবে না বলা হয়েছে। তার উপরে পাহাড় থেকে রাজ্যসভায় কাউকে পাঠানোও হল না!” তাঁর অভিযোগ, “আমাদের বিধায়কদের কোনও মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। গোর্খাদের অস্তিত্ব মুছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। রাজ্য সরকার আমাদের ধোঁকা দিচ্ছে।”
পাশাপাশি, এ দিনই মোর্চা নেতৃত্ব জিটিএ এলাকায় তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে এপ্রিল মাসে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে পদযাত্রা এবং ডুয়ার্সের নাগরাকাটায় জনসভা করার কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু আদিবাসী বিকাশ পরিষদের তরফ থেকে বাধা আসার সম্ভাবনা থাকায় ফের তরাই-ডুয়ার্স অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গুরুঙ্গের অভিযোগ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা যথেষ্ট সম্মান দিয়েছি। বিশ্বাস করেছি। কিন্তু উল্টে আমরাই বঞ্চিত হচ্ছি। ‘বাংলা ভাগ হবে না’ বলা ছাড়াও ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) নানা মন্তব্যের জন্য পাহাড়ে আমাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “উন্নয়নের কথা ভেবে আমরা এত দিন চুপ ছিলাম। আর থাকব না। আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে পদযাত্রা, জনসভা হবে। রাজ্য সরকার চাইলে আমাদের গ্রেফতার করতে পারে, গুলিও চালাতে পারে। আগেও হয়েছে। আমরা তার মোকাবিলা করব। এ রকম চললে আমরা আর কেন জিটিএ নেব?” তবে জিটিএ-র পরিবর্তে তাঁরা কী চান, তা এ দিন খোলসা করেননি গুরুঙ্গ। জানিয়েছেন, পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্সে পদযাত্রার পরে, আগামী ১৮ এপ্রিল ডুয়ার্সের নাগরাকাটার জনসভায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মংপুতে বৈঠকে গুরুঙ্গ। ছবি: রবিন রাই
গত ১৯ জুলাই ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পরে জিটিএ-তে তরাই, ডুয়ার্সের এলাকা নির্ধারণের জন্য প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি হয়। কমিটির রিপোর্ট এখনও পেশ হয়নি। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পরে জিটিএ আইনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। কিন্তু চুক্তি অনুসারে নির্বাচন ছাড়া জিটিএ গঠন সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে মোর্চা আপাতত মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠনের জন্য রাজ্যকে অনুরোধ করে। পাশাপাশি, পাহাড় থেকে রাজ্যসভায় এক জনকে পাঠানোর আবেদনও করা হয়। কিন্তু দু’টি দাবিই নাকচ হয়। মোর্চা নেতা হরকা বাহাদুর ছেত্রী এ দিন বলেন, “সেই ১৯৫২ সাল থেকেই কোনও না কোনও দলের তরফে পাহাড়ের প্রতিনিধি রাজ্যসভায় থাকতেন। এ বারই প্রথম তার ব্যতিক্রম হল।”
অন্য দিকে, দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের (ডিজিএইচসি) পুরনো এলাকায় (মোর্চার দাবি অনুযায়ী তরাই-ডুয়ার্সের কোনও এলাকার অন্তর্ভুক্তি ছাড়াই) নির্বাচন করে জিটিএ গঠন হবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ। তাতে ক্ষুব্ধ হন মোর্চা নেতারা। শুধু ডিজিএইচসি আওতাভুক্ত এলাকায় ভোট হলে ঘরে-বাইরে মোর্চাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। শুক্রবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরে মোর্চা নেতারা বলে দেন, “তরাই ও ডুয়ার্সকে অন্তর্ভুক্ত না-করে জিটিএ-নির্বাচন করা যাবে না। আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।”
এই পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন গুরুঙ্গের ‘তোপ’ কিছুটা প্রত্যাশিতই ছিল বলে মনে করছেন পাহাড়ে রাজনীতির কারবারীরা। তাঁদের মতে, এ দিন রাজ্য সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে কার্যত ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারার চেষ্টা করেছেন গুরুঙ্গ। এক দিকে রাজ্যের উপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন, পাশাপাশি নিজেদের সংগঠনকে চাঙ্গা করার ‘দাওয়াই’ দিয়েছেন। ঘটনা হল, কেন্দ্রীয় সরকারও মনে করছে, পাহাড়ে এই ‘পরিস্থিতি’ কিছুটা ‘অনিবার্য’ ছিল। কারণ, জিটিএ-র সীমানা নির্ধারণ এবং সংরক্ষিত বনাঞ্চল নতুন কর্তৃপক্ষের আওতায় আসবে কি না, তা এখনও অমীমাংসিত। কেন্দ্র চেয়েছিল, এই দু’টি বিষয় সমাধান করার পরে বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে সইয়ের জন্য পাঠানো হবে। এ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কথাও চলছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, কেন্দ্র জিটিএ নিয়ে গড়িমসি করছে। তার জেরে কেন্দ্র বিলের পুরনো খসড়াটিই রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেয়।
মোর্চার তরফে রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রীরা জানিয়েছেন, এ দিন থেকেই সরকারি কোনও কাজে তাঁদের পক্ষের চার বিধায়ক (পাহাড়ের ৩ এবং কালচিনির ১) যোগ দেবেন না। রাজ্যসভার ভোটে মোর্চা যোগ দেবে না। জিটিএ-তে তরাই ও ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে ৭ এপ্রিল দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়ি হয়ে ডুয়ার্সে পদযাত্রা হবে। ১৮ এপ্রিল নাগরাকাটার জনসভার পরে ২১ এপ্রিল ফের ‘কলকাতা চলো’ পদযাত্রা শুরু হবে। এ ছাড়া, পূর্ব ঘোষণা মতো আগামী ২৭ মার্চ প্রকাশ্যে জিটিএ চুক্তি পোড়ানো হবে।
গুরুঙ্গের এই ঘোষণার পরেই আসরে নেমেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। তাদের আপত্তির আর একটা কারণ এ দিন মংপুতে মোর্চার সভায় পরিষদ থেকে বহিষ্কৃত জন বারলা-সহ একাধিক আদিবাসী নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও মোর্চা নেতাদের সঙ্গেই পদযাত্রা, জনসভা করার কথা বলেছেন। পরিষদের রাজ্য সভাপতি বীরসা তিরকি বলেন, “তরাই-ডুয়ার্সে মোর্চা পদযাত্রা বা জনসভা করলে সংঘর্ষ হবে। আর জন বারলা পরিষদের পতাকা নিয়ে পদযাত্রায় থাকলে সংঘর্ষ আরও মারাত্মক হবে। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।”
বৃহস্পতিবারেই জিটিএ-তে তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তের ‘চেষ্টা’র বিরোধিতায় তরাই-ডুয়ার্সের নানা এলাকায় রেল অবরোধ করেছিল ১১টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ। মঞ্চের আহ্বায়ক অতুল রায়, মুকুন্দ মজুমদারদের অভিযোগ, “এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারই দায়ী।” তাঁদের ‘হুমকি’, “আমরা তরাই-ডুয়ার্সের কোনও এলাকা জিটিএ-তে ঢুকতে দেব না। আর মোর্চার পদযাত্রা সর্বশক্তি দিয়ে রোখা হবে।” জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসুও বলেন, “এত দিন রাজ্যের সঙ্গে মোর্চার কী চুক্তি ছিল, তা ওঁরাই জানেন। এত দিন দু’পক্ষই তো চুপচাপ ছিলেন! আমাদের সাফ কথা, তরাই-ডুয়ার্সের কোনও এলাকা জিটিএ-তে যাবে না। তবে কোনও রকম অশান্তিও বরদাস্ত করা হবে না।” জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতাও জানিয়েছেন, সুবাস ঘিসিং পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন। ‘সময়ে’ আন্দোলনে নেমে পড়তে পারে জিএনএলএফ। সব পক্ষের কাছে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করলেও মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধতে ছাড়েননি রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তব্য, “সমস্যার সব উপাদান তো তড়িঘড়ি করে করা জিটিএ চুক্তিতেই ছিল। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় সমস্যার গভীরে না-যাওয়ায়, আজ এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.