অনেক দুঃস্থ পড়ুয়া বই কিনতে পারে না। অনেকের আবার স্কুলের পোশাক কেনারও সামর্থ নেই। স্কুলে নেই সাইকেল স্ট্যান্ড। রোদে-জলে পড়ে থাকে ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল। ছাত্রছাত্রীদের এমনই নানা সমস্যা ৩৯ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তাঁকে বার বার পীড়া দিয়েছে। তাই অবসরের একমাস আগে স্কুলের উন্নয়নে এক লক্ষ টাকা দান করলেন সোনামুখীর পাঁচাল হাইস্কুলের গণিত শিক্ষক শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। সাইকেল স্ট্যান্ড গড়ার জন্য ৫০ হাজার এবং দুঃস্থ পড়ুয়াদের বই ও পোশাক কেনার জন্য আরও ৫০ হাজার টাকার ‘চেক’ স্কুল কর্তৃপক্ষকে দিলেন তিনি।
শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় |
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয় কুণ্ডু’র হাতে বুধবার শিবপ্রসাদবাবু টাকা তুলে দেন। প্রধান শিক্ষক বলেন, “স্কুলের উন্নয়নে শিবপ্রসাদবাবুর এই দান চিরকাল মনে থাকবে। পড়ুয়া। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সাইকেল রাখার স্ট্যান্ড ছিল না। সাইকেল স্ট্যান্ড গড়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই খাতে সরকারি কোনও সাহায্য মেলেনি। এ ছাড়া স্কুলের বহু দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীর বই ও পোশাক কেনার সামর্থ নেই। শিবপ্রসাদবাবুর দেওয়া টাকায় দু’টি সমস্যা অনেকটাই মিটবে।” সহকর্মীর এই মহৎ উদ্যোগে আপ্লুত শিক্ষক সুব্রত সরকার বলেন, “কিছুদিন আগে এক প্রবাসী ছাত্রের দানে স্কুলে বৈদ্যুতিকরণের কাজ হয়েছে। এ বার সাইকেল স্ট্যান্ডটিও হবে। দুঃস্থ পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে শিবপ্রসাদবাবু দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।” প্রিয় শিক্ষকের দানের কথা জেনে উচ্ছ্বসিত দ্বাদশ শ্রেণির বিজয়জিৎ চৌধুরী, অষ্টম শ্রেণির সংগ্রাম ঘোষ বলে, “শিবপ্রসাদবাবু দরদ দিয়ে আমাদের অঙ্ক বোঝান। তাই তাঁর অবসরের কথা শুনে আমাদের মনখারাপ লাগছে।”
শিবপ্রসাদবাবুর বাবা হরিমোহন চট্টোপাধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তিনি গ্রামের এই স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। প্রধান শিক্ষকও ছিলেন। শিবপ্রসাদবাবু বলেন, “এই স্কুল থেকেই পাশ করেছি। পরে এখানেই শুরু করি শিক্ষকতা। তাই স্কুলের সঙ্গে একটা টান তৈরি হয়েছিল।” নিজের স্কুলকে সাহায্য করেই তিনি থামতে চাইছেন না। উদার এই মানুষটির স্বপ্ন, “অনেকের প্রচেষ্টায় গ্রামে একটি বালিকা বিদ্যালয় হয়েছে। ইচ্ছে ওই স্কুলটির উন্নয়নেও কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে।” অবসরের পর সমাজকল্যাণ মূলক কাজে থাকতে চান তিনি। |