রাত জেগে পরীক্ষার প্রস্তুতি মা-ছেলের |
সুস্মিত হালদার • কৃষ্ণনগর |
ছেলের কাছ থেকে কখনও পড়া বুঝে নেন। কখনও নিজেই ছেলেকে পড়া বুঝিয়ে দেন। শান্তিপুর ৩ নম্বর রেলগেটের ঘোষপাড়ার দত্ত পরিবারে মা-ছেলের সম্পর্ক দুই সহপাঠীর মতোই। মা রুমা দত্ত ও ছেলে শুভজিৎ এ বার এক সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। |
তাঁত শ্রমিক সুশান্ত দত্তের পরিবারে তাই এখন সকাল থেকেই ব্যস্ততা তুঙ্গে। রাত জেগে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে রুমা আবার উঠে পড়েন ভোরে। রান্নাবান্না সেরে নিতে হয়। তারপরে ছেলেকে নিয়ে রাধারানি নারী শিক্ষা মন্দিরের ছাত্রী রুমা চলে যান পরীক্ষা দিতে। তাঁর আসন পড়েছে শরৎকুমারী গার্লসে। ওরিয়েন্টাল অ্যাকাডেমির ছাত্র শুভজিতের আসন পড়েছে শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে। পরীক্ষার পরে বাড়ি ফিরে প্রথমেই রান্নাটা সেরে নেন রুমা। তারপরে আবার পড়তে বসা। তিনি যখন রান্না করছেন, শুভজিৎ সামনে বসে পড়া ধরে। শুভজিৎ যখন খেতে বসে, তখন তিনি পড়া ধরেন ছেলের। সুশান্তবাবু হেসে বলেন, “নিজের জেদেই এগিয়ে যাচ্ছে রুমা। মাধ্যমিকে বিজ্ঞানে লেটার নিয়ে ৪১৯ পেয়েছিল। এ বারও ও নিশ্চিত ছেলের চেয়ে ভাল ফল করবে।” শুভজিতের অবশ্য দাবি, “মাধ্যমিকে মা আমায় হারিয়ে দিয়েছিল। এ বার কিন্তু আমিই জিতব।” মা-ছেলে দু’জনেই কিন্তু সংসারের হাল ধরতে রোজগারেও হাত লাগান। রুমা পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী। নিজের পড়ার খরচ নিজেই চালান। এমনকী গৃহশিক্ষকের খরচও। শুভজিৎ বাবার সঙ্গে তাঁতে বসে। রুমাও তাঁত চালাতে জানেন। তাঁর কথায়, “অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরেই বিয়ে হয়ে যায়। তারপরে সন্তান হল। তাকে বড় করা। চার বছর পরে আবার মা হলাম। কিন্তু তারপরে দু’ই সন্তানই যখন একটু বড় হয়ে গেল, তখন ভাবলাম ফেলে আসা স্বপ্ন পূরণ করব। স্বামীও যথাসাধ্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন।”
সুশান্তবাবুর কথায়, “রুমা যখন আবার পড়তে শুরু করল শুভজিৎ তত দিনে নবম শ্রেণিতে উঠে গিয়েছে। তাই এক বইতেই দু’জনের পড়া হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের তো ওইটুকুতেই লাভ।” শুভজিৎ গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ত। রুমা যা বুঝতে পারতেন না, তা ছেলে বুঝে আসত। এই ভাবেই ২০১০ সালে বহিরাগত হিসেবে মাধ্যমিকে বসেন তিনি। কিন্তু এ বারই বড় পরীক্ষা দিতে হবে তাঁকে। উচ্চ মাধ্যমিকে ক্লাস করা হয়নি সে ভাবে। বরং রাতে ছেলের সঙ্গে পড়তে বসে নিজেকে তৈরি করতেন। পাশ করার পরে তিনি এখন চান কলেজে পড়তে। রুমা বলেন, “সংসারে যা খরচ তাতে দুই ছেলেকে পড়িয়ে আমার পড়া কী করে হবে, কে জানে।” শুভজিতের অবশ্য দাবি, “মা আমার সঙ্গেই কলেজে যাবে। দু’জনে একই বিষয় নেব। তাতেও যদি না হয়, আরও বেশি করে তাঁত বুনব। মা যে স্বপ্ন দেখছে, তা সত্যি করতেই হবে।” |