|
|
|
|
‘বিধ্বস্ত’ লক্ষ্মণকে নিয়ে কলকাতায় এল সিআইডি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দীর্ঘ চার মাস বাদে ফের নিজের রাজ্যে দেখা গেল তাঁকে। রবিবার রাত ন’টায় মুম্বই থেকে আসা বিমানে দমদম বিমানবন্দরে নামলেন একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা তথা হলদিয়ার প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। সঙ্গী দুই সিপিএম নেতা তথা নন্দীগ্রামের নিখোঁজ-মামলার দুই সহ-অভিযুক্ত অশোক গুড়িয়া ও অমিয় সাউ। তিন জনকেই গত কাল মুম্বইয়ের চেম্বুর থেকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
বিমানবন্দর থেকে পুলিশের গাড়িতে সোজা সিআইডি-র সদর দফতর ভবানী ভবনে নিয়ে আসা হয় ধৃত তিন সিপিএম নেতাকে। রাত পৌনে দশটা নাগাদ ভবানী ভবনের সামনে পুলিশের গাড়ি থেকে প্রথমে নামেন অমিয় সাউ। তার পরে অশোক গুড়িয়া। সব শেষে নামেন লক্ষ্মণবাবু। উজ্জ্বল হলুদ রঙের শার্ট পরা তমলুকের প্রাক্তন সাংসদকে যথেষ্ট ক্লান্ত-বিধ্বস্ত লাগছিল। অত রাতেও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদের হাজারো প্রশ্নের মুখে লক্ষ্মণবাবু ও তাঁর সঙ্গীদের কার্যত পাঁজাকোলা করে ভিতরে ঢুকিয়ে দেন পুলিশ কর্তারা। ভবানী ভবনের ভিতরে তখন ডিজি (সিআইডি) বি ভি থাম্বি-সহ রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা অপেক্ষা করছেন। রাতেই তাঁদের জেরা শুরু হয়েছে বলে সিআইডি-র একটি সূত্রে জানানো হয়েছে।
|
কলকাতায় লক্ষ্মণ
শেঠ। নিজস্ব চিত্র |
কলকাতায় ফেরার আগের রাতটা চেম্বুরের পুলিশ লক-আপেই কাটাতে হয়েছে লক্ষ্মণবাবুদের। মুম্বই পুলিশ সূত্রের খবর, তিন জনে মিলে মাটিতে কম্বল পেতে রাত কাটান। তাঁদের কয়েক হাত দূরেই ছিল সাত জন দাগি কয়েদি। সিআইডি-র অফিসারেরা অবশ্য লক্ষ্মণবাবুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান। প্রাক্তন সংসদের ডায়াবিটিস রয়েছে বলে তাঁকে নিয়মিত কিছু ওষুধ খেতে হয়। সেই সব ওষুধ দ্রুত তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় বলে সিআইডি-র তরফে জানানো হয়েছে। হলদিয়ায় লক্ষ্মণবাবুর স্ত্রী তমালিকা পণ্ডা শেঠও স্বামীর শরীর নিয়ে উদ্বিগ্ন। হলদিয়া পুরসভার চেয়ারপার্সন তথা সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য তমালিকাদেবী বলেন, “ওঁর ডায়াবিটিস বেড়েছে। এটা খুবই চিন্তার। তবে পুলিশ ওষুধ দিয়েছে বলে শুনেছি।”
পুলিশ সূত্রের খবর, গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই লক্ষ্মণবাবু মুখে কার্যত কুলুপ এঁটে রয়েছেন। তাঁদের তিন জনের মুখপাত্রের ভঙ্গিতে পশ্চিমবঙ্গ বা মুম্বই পুলিশের সঙ্গে কথা বলার ‘দায়িত্ব’ নিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষকসভার সম্পাদক অশোক গুড়িয়া। লক্ষ্মণবাবু ও পূর্ব পাঁশকুড়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক অমিয় সাউ প্রধানত নিজেদের মধ্যেই চাপা স্বরে কথা বলছিলেন। সিআইডি-র তদন্তকারী দলের তরফে অবশ্য মুম্বইয়ে লক্ষ্মণবাবুদের জেরা করা শুরুই হয়নি। সিআইডি-র তরফেও বলা হয়েছে, মুম্বইয়ে শুধু মাত্র আদালতে জারি হওয়া ওয়ারেন্টের নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে।
ধৃতেরাও পুলিশের সঙ্গে বিশেষ কথাবার্তা বলেননি বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। তবে লক্ষ্মণবাবুর শরীরী ভাষায় তিনি ভেঙে পড়েছেন বলেই মনে হয়েছে পুলিশের। ধরা পড়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত শুধু এক বারই পুলিশের কাছে আর্জি জানিয়েছেন অভিযুক্তেরা। রাতে পোশাক বদল করতে চান তাঁরা। চেম্বুরের অতিথিশালা থেকে লক-আপে তাঁদের পোশাক এবং ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়।
শুক্রবার সিআইডি গ্রেফতার করার পরে রাতে লক-আপে রুটি-ডাল খেতে দেওয়া হয়েছিল লক্ষ্মণবাবুদের। এ দিন সকালে চা-টোস্ট খেতে দেওয়া হয় তাঁদের। দুপুরে ফের নিরামিষ ‘মেনু’ ভাত-ডাল ও সব্জি। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ পাহারায় চেম্বুর থেকে মুম্বইয়ের বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন অভিযুক্তেরা। মুম্বই পুলিশের তরফে ধৃতদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ এয়ার ইন্ডিয়ার এআই ৭৭৪ বিমান তাঁদের নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়।
লক্ষ্মণবাবুদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু না-হলেও মুম্বইয়ে তারা কী ভাবে চেম্বুরের অতিথিশালাটিতে ছিলেন, সে বিষয়ে সবিস্তার খোঁজখবর নিয়েছে সিআইডি। ‘ভিআইপি অতিথি’ হিসেবে ওই তিন জনের নাম খাতায় লেখার দরকার পড়েনি বলেই সিআইডি সূত্রের খবর। লক্ষ্মণবাবু-সহ তিন অভিযুক্ত চেম্বুরের অতিথিশালায় গত তিন দিনে কারও সঙ্গেই বড় একটা মেলামেশা করেননি। তাঁরা নিজেদের মতো থাকতেন। বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খেতেন। শুধু চা দেওয়ার জন্য বেল বাজিয়ে কমর্চারীদের ডাকতেন। আর বাইরে গিয়ে এসটিডি বুথ থেকে ফোন করতেন।
অতিথিশালা লাগায়ো এসটিডি বুথের এক কর্মচারীই সিআইডি-র কাছে অশোক গুড়িয়ার ছবি দেখে তাঁকে চিনতে পারেন। শনিবার সকালে অশোকবাবু ওই বুথে ফোন করতে আসার সময়ে সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারেরা কাছেই ছিলেন। প্রথমে অশোকবাবুকে গ্রেফতার করার পরে তাঁর সঙ্গেই অতিথিশালার তিন তলার ঘরে উঠে লক্ষ্মণবাবুদের গ্রেফতার করে সিআইডি। |
|
|
|
|
|