নিছক শখের সামগ্রী নয়, পাকাপাকিভাবেই বাঁশের সাইকেল উৎপাদনের প্রকল্প গড়ে উঠতে চলেছে মণিপুরে। মূল উদ্যোগ মণিপুর সাইকেল ক্লাবের। সহায়তায়, দক্ষিণ এশিয়া ব্যাম্বু ফাউন্ডেশন।
বাঁশ দিয়ে সাইকেল বানানোর কাজ অবশ্য অসমে আগেই শুরু হয়েছে। নলবাড়ি, শিলচরে বাঁশের সাইকেল রাস্তায় নেমেছে। উজানি অসমের এক তরুণ তো বাঁশ দিয়ে মোটর সাইকেলও বানিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এ সবই নিজস্ব শখের নমুনা। মণিপুর সাইকেল ক্লাবের ভাবনাচিন্তা কিন্তু অন্য রকম। রাজধানী ইম্ফলের রাস্তায় যানজট ও ধোঁয়ার দূষণ চরমে পৌঁছেছে। তাই, সবুজ ও দূষণমুক্ত ইম্ফল গড়তে সাইকেল ক্লাব প্রথমেই রাস্তায় পেট্রোল ও ডিজেলচালিত গাড়ির সংখ্যা কমাতে চায়। আর এ ক্ষেত্রে চমৎকার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে বাঁশের সাইকেল।
২০১০ সালে মাও গেট এলাকায়, এনএসসিএন (আই এম) নেতা থুইংলেং মুইভাকে আটকে দিয়েছিল মণিপুর সরকার। তার প্রতিবাদে জাতীয় সড়কে নাগারা অবরোধ শুরু করেন। অবরোধের ধাক্কায় মাস কয়েক জ্বালানি আসেনি রাজ্যে। নেতা-আমলা-পুলিশকর্তা থেকে শুরু করে সকলকেই তখন সাইকেলের শরণ নিতে হয়েছিল। রাতারাতি গড়ে উঠেছিল মণিপুর সাইকেল ক্লাব (এমসিসি)। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে ফের গাড়ির ধোঁয়ায় শহর ঢেকেছে। সাইকেল ক্লাবের কর্তা জেম্স মায়েংবাম বলেন, “গতি অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু ছোট রাস্তায়, কম দূরত্ব পাড়ি দিতে সাইকেলই ব্যবহার করা উচিত। দূষণ প্রতিরোধে ও সাইকেল ব্যবহারের বার্তা নিয়ে প্রতি মাসের শেষ রবিবার সাইকেল মিছিল বের করে সাইকেল ক্লাব। যার সদস্য সংখ্যা বর্তমানে হাজার ছাড়িয়েছে।
এমসিসি এ বার, আরও একধাপ এগিয়ে নিজেরাই সাইকেল কারখানা খোলার কথাও ভাবছে। সেই সাইকেলের মূল কাঠামোটি লোহা বা ইস্পাত নয়, তৈরি হবে বাঁশ দিয়ে। এমসিসি কর্তৃপক্ষ জানান, চান্ডেল ও চূড়চাঁদপুরে এমন এক ধরনের বাঁশ মেলে যা দিয়ে লোহার মতোই টেঁকসই সাইকেলের কাঠামো গড়া সম্ভব। ক্লাবের সহ সভাপতি রাম ওয়াংখেইরাকপাম বলেন, “আপাতত ৬টি বাঁশের সাইকেল আমরা পরীক্ষামূলক ভাবে বানাচ্ছি। ৬ মাস, সাইকেলের সহনক্ষমতা, বিপণন সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হবে। এই কাজে সাহায্য করছে দক্ষিণ এশিয়া ব্যাম্বু ফাউন্ডেশন।” পয়লা এপ্রিল থেকে, পাঁচ দিনের জন্য, এমসিসি ও ব্যাম্বু ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে বাঁশের সাইকেল বানানোর কর্মশালা বসছে ইম্ফলে।
ইন্দোনেশিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বাঁশের সাইকেল তৈরি বহুদিন থেকেই শুরু হয়েছে। ভারতে, উত্তর-পূর্বের ক্ষেত্রে সফল বাঁশের সামগ্রী নির্মাতা হিসাবে রয়েছেন অসমের লোকগান শিল্পী দুধি পাঠক। দুধিবাবু সাইকেল ছাড়াও বাঁশ দিয়ে বানিয়েছেন মজবুত নকল দাঁত, হ্যান্ড পাম্প। তবে, তা নিছক ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমদাবাদ, বেঙ্গালুরু, লুধিয়ানা, কানপুরেও বাঁশের সাইকেল তৈরি হয়েছে। তবে, বিপণনের জন্য বাঁশের সাইকেলের কারখানা গড়ার উদ্যোগ এই প্রথম। এমন অভিনব উদ্যোগে মণিপুরে কতটা সাড়া মেলে এখন সেটাই দেখার। |