শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে পড়ল ‘পুলিশ’ সাজা গয়নাচোরেরা।
শনিবার দুপুর ১২টা। লেক থানা এলাকার পূর্ণ দাস রোড ধরে দু’টি মোটরবাইকে ‘শিকার’ খুঁজতে বেরিয়েছিল চার জন। প্রথম বাইকটি এক মহিলার কাছাকাছি পৌঁছনোর আগেই সেটি ঘিরে ফেলে আরও চারটি মোটরবাইক। পরের চার বাইকের সওয়ারিরা প্রত্যেকেই লেক থানার পুলিশকর্মী। প্রথম বাইকের চালক ও আরোহীকে পাকড়াও করার পরে জানা গেল, ‘পুলিশ’-এর বেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তারাই শহর জুড়ে অগুনতি মহিলার হার-বালা-দুল হাতসাফাই করে চম্পট দিয়েছে। কিন্তু প্রথম বাইকটি ধরার সময়ে ফস্কে গিয়েছে ‘শিকার’-এর দিকে ধেয়ে যাওয়া অন্য বাইকটি।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম আলি জামা ও সোফি হুসেন ওরফে সোফি। দু’জনেই মহারাষ্ট্রের থানের বাসিন্দা। মহারাষ্ট্রের নম্বর প্লেট লাগানো যে মোটরসাইকেলে চড়ে তারা ‘শিকার’-এর সন্ধানে বেরিয়েছিল, সেটিও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে ধৃতদের কাছ থেকে মিলেছে এক বাক্স সানগ্লাস, অজস্র ছোট-মাঝারি পাথর, বিভিন্ন ভুয়ো পরিচয়পত্র এবং প্যান কার্ড। উদ্ধার হয়েছে এক ব্যাগ ভর্তি বিভিন্ন রঙের কাচের চুড়ি এবং একটি লম্বা সাদা খাতাও। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় স্বীকার করেছে, ‘পুলিশ’ সেজে তারাই গত কয়েক সপ্তাহে শহরের মোট ৪২ জন মহিলার চোখে ধুলো দিয়ে গয়না চুরি করেছে। ওই খাতা থেকে ছেড়া একটি পাতাতেই চোখের নিমেষে কয়েকটি কাচের চুড়ি গুঁজে ‘শিকার’দের হাতে দিত পুলিশবেশী ওই কেপমারেরা।তাদের ধরতে কী ভাবে ফাঁদ পাতা হয়েছিল শনিবার? পুলিশ সূত্রের খবর, কেপমারেরা যে লেক থানা এলাকাতেই ঘাঁটি গেড়েছে, সে খবর এসেছিল ‘সোর্স’ মারফত। এলাকায় নজরদারি বাড়াতেই রবীন্দ্র সরোবর-সহ সংলগ্ন এলাকায় মোটরসাইকেলে টহলদারির উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। ‘সোর্স’-এর দেওয়া তথ্য মাথায় রেখেই ওই দিন বাইকে চড়ে সাধারণ পোশাকে পূর্ণ দাস রোডে টহল দিচ্ছিলেন লেক থানার সাব-ইনস্পেক্টর মণিশঙ্কর মজুমদার ও প্রদীপ কারমালি, অ্যাসিন্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর অশোক নট্ট এবং কনস্টেবল বাবন সাহা। রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়া মহিলাই যে আলিদের পরবর্তী ‘শিকার’, তা তাদের বাইকের গতি দেখে বুঝতে পেরেছিলেন ওই চার পুলিশকর্মী। আলিরা অবশ্য লক্ষ করেনি তাদের। মহিলা যখন আর মাত্র কয়েক হাত দূরে, তখনই আলিদের চমকে দিয়ে তাদের ঘিরে ফেলে পুলিশের ওই চারটি মোটরবাইক। |