|
মুখে ফিরবে আলো
শীত মাঝরাস্তায়। এমন সময় ত্বকে বসন্তের লাবণ্য আনবে
বিশেষ যত্ন ও ফেশিয়াল। কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|
|
শীতে ঠান্ডার ভয়ে যাঁরা জবুথবু হয়ে থাকেন, তাঁদের জন্য একটা খারাপ খবর আছে। এমন অনেকে আছেন যাঁরা কাগজ দেখে স্নান করেন, অর্থাৎ আবহাওয়ার পাতা পড়ে নিয়ে তার পর কলঘরের দিকে যান। আর এখন তো লন্ডনের থেকে কলকাতার তাপমাত্রার পারদ মাঝে মাঝেই নীচে নেমে যাচ্ছে। সেই কারণে মহামজা ভাল ভাল রংবেরঙের জামাকাপড় পরে ঠোঁটে একটু লিপস্টিক ঘষে, গায়ে পারফিউম স্প্রে করে বেরিয়ে পড়লেন মোলাকাতে। কিন্তু যাঁরা সৌন্দর্যসচেতন, তাঁদের একটু অন্য রকম ভাবনাচিন্তা করতে হবে। শীতকালে ফেশিয়ালের মাত্রা বৃদ্ধি করতে হবে, ত্বকের আদরযত্নের পরিমাণও বাড়াতে হবে। শীতকাল ত্বকচর্চার আদর্শ সময়। আপনি যদি শীতকালে ঠিক সময়মত ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেশিয়াল করতে পারেন, তবে সারা বছর আপনার ত্বক যথেষ্ট উজ্জ্বল থাকবে এবং নিষ্প্রভ বা নিষ্প্রাণ চেহারা নিয়ে আপনার চিন্তার অবসান হবে। অর্থাৎ, শীতকালে বেশি করে ফেশিয়ালের দরকার হয়।
শীতকালটি খাওয়ার জন্যই বরাদ্দ। সেটিকে সম্পূর্ণ বজায় রেখে মাত্রাটি কম করতে হবে। পিকনিক-পার্টিতে যাবেন, যাবেন, অবশ্যই যাবেন। কিন্তু সাবধানে। প্রতি দিন সকালে সম্ভব হলে একটি খেজুর খান, যে কোনও একটি বাদাম চিবিয়ে জল খান। শীতকালে জল খাওয়া কম হয়, ফলে পেটের একটু সমস্যা হয়। জুস বা শীতের একটি ফল অবশ্যই রাখুন খাদ্যতালিকায়। |
|
পঁচিশের নীচে যাঁদের বয়স |
শীতকালে ভাল ভাবে ত্বক পরিষ্কার করতে পারলেই যথেষ্ট। ফেশিয়ালের প্রয়োজন নেই। প্রতি দিন ক্লেনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং করবেন। এ ছাড়া সপ্তাহে দু’দিন মুখে স্টিম দিতে পারেন। এতে ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডস বেরিয়ে যাবে। ত্বকের নিত্যনতুন ঝামেলাও এড়াতে পারবেন। এর থেকে বেশি ঝলমলে ত্বক চাইলে সপ্তাহে একদিন কিছু ক্ষণ স্টিম নেবার পর স্ক্রাবার দিয়ে অল্পবিস্তর ঘষে, মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে পারেন। এ ছাড়া মুলতানি মাটির প্যাক সব সময়ের জন্য খুব ভাল।
|
পঁচিশের ওপরে যাদের বয়স |
শীতকালে অনেকের অ্যাকনে-র সমস্যা বেড়ে যায়। এটি হয় ত্বক ঠিক ভাবে পরিষ্কার না করার জন্য। রোমকূপগুলিতে ময়লা জমে অ্যাকনেকে বাড়িয়ে দেয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন অ্যাকনে ফেশিয়াল।
|
অ্যাকনে ফেশিয়াল |
টিনএজারদের এই সমস্যাটি বেশি হয়। তবে যে কোনও বয়সেই এটি খুব চেনা সমস্যা। ত্বক পরিষ্কার করে এনজাইম অথবা গ্লাইকলিক জাতীয় রাসায়নিকের সাহায্যে মৃত কোষগুলিকে পরিষ্কার করে নিতে হবে। পরের ধাপে স্টিম দিয়ে রোমকূপগুলিকে খুলে দিতে হবে। তৃতীয় ধাপে অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল মাস্ক লাগিয়ে কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করে মুখ ধুয়ে অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দু’দিন হিসাবে এক মাস করলে আপনার অ্যাকনের সমস্যা থাকবে না।
|
কোলাজেন ফেশিয়াল |
এই ফেশিয়ালটির বিশেষত্ব হল ‘এক্সফোলিয়েশন পদ্ধতি’, অর্থাৎ, পেঁয়াজের খোসার মতো পরতে পরতে ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার করা এবং ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনা। প্রথম ধাপে স্টিম দিয়ে রোমকূপগুলি উন্মুক্ত করে যতটা বেশি সম্ভব ক্লেনজিং করা। বিভিন্ন রকম খনিজের (ত্বকে ব্যবহারের উপযোগী) সাহায্যে স্ক্রাব করতে হবে। এই স্ক্রাবিং পদ্ধতির সাহায্যে ত্বকের নিজস্ব সুস্থ হওয়ার ক্ষমতাটি ফিরে আসে। শেষ ধাপে শুষ্ক কোলাজেন শিট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ফলে ত্বকের জলীয় ভাবটি বজায় থাকে। ফেশিয়ালটির ফল আরও ভাল ভাবে পেতে হলে ‘লিকুইড নিউট্রিশন অ্যামপুল’ ব্যবহার করতে পারেন। এই ফেশিয়ালটি দূষিত পরিবেশ থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করবে। বলিরেখা, কালো ছোপ ইত্যাদি থেকে ত্বককে বহু যোজন দূরে রাখবে।
|
|
প্যারাফিন ফেশিয়াল |
যে সব বিয়ের কনের শুষ্ক ত্বক, এটি তাঁদের পক্ষে বেশি উপযোগী। পদ্ধতিগুলি একই রকম থাকবে, অর্থাৎ ক্লেনজিং, স্ক্রাবিং এগুলি বাদ দেওয়া যাবে না। এর পর বিশেষ এক ধরনের প্যারাফিন মাস্ক লাগানো হয়। প্রথমে কয়েক পরত গজ দিয়ে মুখটিকে ঢেকে প্যারাফিন মাস্কটি লাগাতে হবে। এই ফেশিয়াল আপনার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এবং ‘অ্যান্টি-এজিং এফেক্ট’কে আটকে রাখে। ত্বকে চটজলদি চকচকে ভাব আনে। এটি বাড়িতে প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন না। দক্ষ ব্যক্তি বা ভাল কোনও সালোঁ-র শরণাপন্ন হতে হবে।
|
অ্যাকোয়ামেরিন ফেশিয়াল |
এই ফেশিয়ালের বৈশিষ্ট্য হল সমুদ্রের তলার বিভিন্ন উদ্ভিদের মিশ্রণ ব্যবহার করে ‘ফেস মাস্ক’ তৈরি করা। তবে এই ফেশিয়ালের প্রতিটি দ্রব্য খাঁটি হতে হবে। তবেই যথোপযুক্ত ফল পাওয়া যাবে। যেমন মাস্কটি লাগানোর পর যখন মুখ ধোবেন, তখন দেখবেন ফেনা হচ্ছে। অথচ, সাবান বা ফোমজাতীয় কিছুই ব্যবহার করা হয় না। শীতকালে ত্বকে প্রাণ ফেরাতে অ্যাকোয়া ফেশিয়ালের জুড়ি নেই।
|
বিশেষ পরামর্শ |
একটু কমলালেবুর রস, ইস্ট পাউডার, মূলতানি মাটি, পানিফল বাটা কুড়ি মিনিট মুখে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
মূলতানি মাটি, মধু, দুধ মিশিয়ে মুখে কিছু ক্ষণ লাগিয়ে রেখে ধুয়ে নিন। |
|