এ বার অরুণাচলের বায়ুসেনার এক অফিসারকে ভিসা দিতে অস্বীকার করল বেজিং। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সেনা প্রতিনিধিদের চিন সফরই বাতিল করে দিল দিল্লি। সীমান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরে একটার পর একটা ঘটনায় ক্রমশ তিক্ত হচ্ছে ভারত ও চিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক। ইয়ু শহরে ভারতীয় কূটনীতিককে হেনস্থা ও দুই ভারতীয় ব্যবসায়ীকে আটকে রাখার ঘটনা নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল। তা মিটতে না মিটতেই এই ভিসা-বিতর্ক।
জানুয়ারির ১০ তারিখে সেনাবাহিনীর ৩০ সদস্যের একটি দলের চার দিনের বেজিং সফরে যাওয়ার কথা ছিল। সেই দলেরই সদস্য ছিলেন অরুণাচলে বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন এম প্যাঙ্গিং। কোনও কারণ উল্লেখ ছাড়াই চিন তাঁকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছে। অরুণাচলপ্রদেশকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে বেজিং। চিনের সীমান্ত রক্ষীরা মাঝে মাঝেই অরুণাচলে ঢুকে নিজেদের উপস্থিতির প্রমাণ রেখে যায়। প্যাঙ্গিংয়ের ভিসা নাকচ তাদের সেই অবস্থানের কারণেই বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু ভারত তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রতিনিধি দলটির সফরই বাতিল করে দিয়েছে।
গত বছর কাশ্মীরে কর্মরত থাকার কারণে নর্দার্ন কম্যান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল বি এস জস্সলের ভিসার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল বেজিং। জবাবে ভারত চিনের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক সম্পর্ক স্থগিত রাখে। এর পরে দু’পক্ষ আলোচনায় বসে ফের তা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ হিসাবেই ঠিক হয়, ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার ভাইস মার্শাল পর্যায়ের এক অফিসারের নেতৃত্বে ৩০ জনের একটি প্রতিনিধি দল চার দিনের সফরে চিনে যাবে। বেজিং, নানজিং ও সাংহাইয়ে চিনের বায়ুসেনাদের ঘাঁটি তারা ঘুরে দেখবে। প্যাঙ্গিং এই দলেরই সদস্য। কিন্তু বেজিং তাঁকে ভিসা না দেওয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক গোটা সফরই বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। এর ফলে আস্থা অর্জনের উদ্দেশ্যও যে ধাক্কা খাবে সন্দেহ নেই।
ঘটনাটিকে কিন্তু বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে দিল্লি। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, বেজিংয়ের আচরণে তারা ক্ষুব্ধ। বিষয়টি চিনা সরকারের উচ্চমহলে জানানো হবে। সফর বাতিল করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকও তাদের ক্ষোভের বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছে। সাংবাদিকদের তরফে চিনা দূতাবাসের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, ব্যস্ত আছেন। এই ব্যাপারে কোনও কথা বলতে পারবেন না।
ইয়ু শহরে দীপক রহেজা, শ্যামসুন্দর অগ্রবাল নামে দুই ব্যবসায়ীকে আটকে রাখা ও কূটনীতিক এস বালচন্দ্রনকে হেনস্থার ঘটনায় ভারত-চিনের তরজা জারি রয়েছে। দীপক-শ্যামসুন্দর এখন সাংহাইয়ে। কিন্তু নিরাপত্তার অভাবের কারণ তুলে দিল্লি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ইয়ু শহরে ব্যবসা বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে। এই পরামর্শের তীব্র সমালোচনা করেছে চিনের সরকারি সংবাদপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’। আজ সংবাদপত্রটির সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, “ইয়ু শহরের আদালতে ভারতীয় কূটনীতিকের অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঘটনাটিকে ভারতের সংবাদমাধ্যম বড় করে দেখাচ্ছে।” এই রকম একটা পরিস্থিতিতে বেজিং ভারতীয় সেনাকর্তাকে ভিসা দিতে অস্বীকার করায় জটিলতা বাড়ল। তবে এ দিনই চোরাচালানের অভিযোগে আটক ১২ জন ভারতীয় হিরে ব্যবসায়ীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে বেজিং। নরমে-গরমে দিল্লির উপর কূটনৈতিক চাপ বাড়াতে চাইছে চিন। মার্চে ভারতে আসার কথা চিনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের। তার আগে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েন কোথায় গিয়ে পৌঁছয়, সেটাই দেখার। |