বিপক্ষের রান শেষ পর্যন্ত যা-ই উঠুক, টার্গেট শেষমেশ যতই দাঁড়াক, হাতে দশ উইকেট রেখে সেটা তুলতে হবে।
রঞ্জিতে বাংলার অবনমন বেঁচেছে। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালের সিংহদুয়ার আর বাংলার মাঝে যদি এখন কিছু দাঁড়িয়ে থাকে, তো এই সমীকরণ। সৌরভরা বরোদা ম্যাচ সরাসরি জিতলে পাঁচ পয়েন্ট আসবে বটে, কিন্তু তাতে শেষ আটে ওঠা যাবে না। বরোদা এই মুহূর্তে ১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে। পাঁচ পয়েন্ট তুলে ম্যাচ জিতলে বাংলাও ওই হিসেবে এসে দাঁড়াবে। অর্থাৎ, ৬ ম্যাচে ১৩। কিন্তু বরোদার সরাসরি জয়ের সংখ্যা বেশি। সেক্ষেত্রে টুর্নামেন্টের নিয়ম মতো তারাই যাবে শেষ আটে, বাংলা নয়।
অতএব, চাই ছ’পয়েন্ট। সেখানেও আবার হাইফেনের মতো একটা ছোট্ট ‘যদি’ ঝুলে আছে। বাংলার মতোই গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলছে হরিয়ানা। গুজরাতের বিরুদ্ধে। হরিয়ানা যদি শেষ দিনে সরাসরি ম্যাচ জিতে যায়, তা হলে বাংলা বনাম হরিয়ানা কোয়ার্টার ফাইনাল ওঠার যুদ্ধ দাঁড়াবে রান কোশেন্টে। তবে সবার আগে দরকার বরোদাকে দশ উইকেটে হারানো। আর তার জন্য শনিবার সাততাড়াতাড়ি চাই বিপজ্জনক দেখানো দুই ব্যাটসমান রাকেশ সোলাঙ্কি আর ইরফান পাঠানকে ফেরানো। অপরাজিত সোলাঙ্কির হাফসেঞ্চুরি ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। পাঠান সবে নেমেছেন, কিন্তু সাবলীল দেখাচ্ছে। শেষ দিন সকালে এই জুটির বেশি এগোনো মানে, শেষ আটের স্বপ্ন থেকে তত দূরে সরবে বাংলা। সাধে আর শুক্রবার ম্যাচ শেষে মোতিবাগে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, “আমরা ভাল জায়গায় আছি ঠিকই। কিন্তু ম্যাচ জিততে গেলে কাল তাড়াতাড়ি রাকেশ আর ইরফানকে ফেরানো দরকার।”
তবে শেষ আটের সম্ভাবনা নিয়ে এত অঙ্ক, হিসেবনিকেশ তৈরিই হত না, লক্ষ্মীরতন শুক্লের ঝোড়ো ইনিংসটা না থাকলে। |
অনুষ্টুপ মজুমদারের সেঞ্চুরি (১১১) প্রাপ্য ছিল, সেটা তিনি পেয়েছেন। বাংলার এ দিন আর ২১ রান তুলে অবনমন বাঁচানো নিশ্চিত ছিল, সেটা বেঁচেছে। কিন্তু শেষ আটের দিকে এমন দৌড় তো লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে চড়েই। ১৫৮ বলে ৯৯। এগারোটা বাউন্ডারি দিয়ে পাঠানদের পিষে ফেলা। হ্যামস্ট্রিং চোটে সৌরভ শুক্রবার আর ব্যাট করতে নামেননি। দরকারও পড়েনি। কিন্তু শুধু সেঞ্চুরিটা ছাড়া বাকি যা যা করা সম্ভব ছিল, এ দিন করলেন লক্ষ্মী। এবং সেঞ্চুরি ফেলে আসার হতাশাও নেই। বরোদা থেকে ফোনে বলছিলেন, “স্পিনারের বলটা সোজা ঢুকে এল। যা-ই হোক, বাংলার অবনমন বাঁচানো দরকার ছিল। সেটা আটকেছি। আর দলের আমি সিনিয়র ব্যটসম্যান যখন, এ সব দিনেই তো খেলতে হবে।” শেষ দিন ছ’পয়েন্ট হবে? লক্ষ্মীর গলায় আশ্বাস, “এত কিছু হয়েছে যখন, দেখবেন ওটাও হয়ে যাবে।”
বলতে গেলে, লক্ষ্মীর দাপটের জন্যই এ দিন হাতে দেড়খানা সেশন পেয়ে গেলেন অশোক দিন্দারা। ফায়দাও তুলেছেন। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে দিন্দার উইকেটসংখ্যা আপাতত তিন। তার মধ্যে আবার ইনিংসের প্রথম তিন বলে তুললেন দু’টো! বরোদার দ্বিতীয় বার ব্যাটিং-ধসের সেই শুরু। দিনের শেষে বরোদা ‘খুব খারাপ’ অবস্থা থেকে ‘একটু ভাল’। ৬-৩ থেকে ১০৩-৫।
ম্যাচে কিস্তিমাত হবে কি হবে না, শনিবারই বলবে। কিন্তু রঞ্জির শেষ বেলায় বাংলা ক্রিকেটের সম্মান অনেকটাই পুনরুদ্ধার হয়েছে, সেটা এখনই লিখে ফেলা যায়।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বরোদা ২৮৪ ও ১০৩-৫ (সোলাঙ্কি ৫৫ ব্যাটিং, দিন্দা ৩-৪৩) বাংলা ৩৯০-৯ (অনুষ্টুপ ১১১, লক্ষ্মী ৯৯, গগণদীপ ৬-৯৪)। |