দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিষ মদকাণ্ডের জেরে কোচবিহারে ভেজাল মদের কারখানার হদিশ দিতে পারলেই পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করল জেলা প্রশাসন। রবিবার কোচবিহার জেলাশাসক মোহন গাঁধী পুরস্কারের কথা ঘোষণার পাশাপাশি আবগারি দফতরকে এই ব্যাপারে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। লিফলেট ছাপিয়ে ওই প্রচার চলবে বলে ঠিক হয়েছে। জেলাশাসক বলেছেন, “গোটা জেলা থেকে বেআইনি মদের কারবার বন্ধ করতে আমরা অনেকদিন ধরেই উদ্যোগী। সাম্প্রতিক বিষ মদকাণ্ডের পরে ওই প্রচার আরও জোরদার করা হয়েছে। নকল মদ তৈরির কারখানা কেউ হদিশ দিতে পারলেই পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা আবগারি দফতরের সুপারিন্টেনডেন্টকে ওই ব্যাপারে প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ সম্প্রতি পুরস্কারের জেরেই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর বেআইনি মদ আটক করা হয়। এ বার তাই কারখানার হদিশ পেলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে যিনি নকল মদের কারখানার হদিশ দেবেন তাঁকে ঠিক কত টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে সেই ব্যাপারে আগাম কোনও ঘোষণা করতে চাননি জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, খবরের সত্যতা এবং গুরুত্ব বিচার করে পুরস্কারের অর্থমূল্য স্থির করা হবে।” প্রশাসন ও আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলায় নকল মদ তৈরি করে বোতলের গায়ে নামী ব্রান্ডের লেবেল সেঁটে খোলা বাজারে বিক্রির একটি চক্র রমরমা কারবার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। কিছুদিন আগে শহর লাগোয়া খাগড়াবাড়ির শালবাগান এলাকায় এমনই এক নকল মদ তৈরির কারখানার হদিশ পান আবগারি দফতরের কর্তারা। সেখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রচুর খালি বোতল, অন্ততঃ পাঁচ হাজার ছিপি, বাইরে ছাপানো লেবেল, ঠান্ডা পানীয়ের বোতল ও ১০ লিটার স্পিরিট মেলে। আবগারি দফতরের কর্মীরা ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পলাতক দুই বাসিন্দার নামে মামলাও রুজু করেন। এ নিয়ে তদন্তে নেমে জেলায় আরও কিছু এলাকায় নকল মদ তৈরির কারখানা চলছে বলে জানতে পারেন আবগারি দফতরের কর্তারা। তার পরেই এই ধরনের কারখানা বন্ধ করতে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আবগারি দফতরের জেলা সুপারিন্টেনডেন্ট প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, “জেলায় আরও কিছু এলাকায় নকল মদ তৈরির কারখানা রয়েছে যে রয়েছে সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সমস্ত কারখানা বন্ধ করে জেলায় নকল মদ তৈরির শিকড় উপড়ে দিতে চেষ্টাও হচ্ছে। খুব শীঘ্রই জেলাশাসকের নির্দেশ মেনে ওই সব কারখানার ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিলে পুরস্কারের বিষয়টি নিয়ে লিফলেটে প্রচারও শুরু করব।’’ আবগারি দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলা জুড়ে অসম ও, ভুটানের থেকে মদ এনে বেআইনি ভাবে বিক্রির কারবার চলছে। কয়েকদিন আগে কোচবিহারে তল্লিগুড়ির কাছে অসম থেকে আনা মদ ভর্তি ছোট গাড়ি-সহ ৪ জনকে ধরা হয়। ওই গাড়ি থেকে ১১০০ বোতল অসম মদ উদ্ধার হয়। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেআইনি মদ-সহ ৬টি গাড়ি আটক করেন আবগারি কর্তারা। সংগ্রামপুরের ঘটনার পর নকল মদের কারখানা নিয়ে দফতরের কর্তাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। ওই দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “অসম, ভুটানের মদ জেলায় বিক্রি হলে রাজস্ব ক্ষতি হয়। তার চেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হল নকল মদে মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য বিষ মদকাণ্ডের পরে ওই কারখানার অস্তিত্ব মুছে ফেলা এবং অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। পুরস্কার ঘোষণায় ওই কাজ তা সহজ হবে বলে আশা করছি।’’ কোচবিহার কোতোয়ালি থানার খাগড়াবাড়ি, শালবাগান, পুন্ডিবাড়ি, তুফানগঞ্জের রসিকবিল, শালবাড়ি, বক্সিরহাট, দিনহাটা ও মাথাভাঙার কিছু এলাকায় নকল মদের রমরমা কারবার রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে পুলিশকে নিয়ে অভিযান চালাতে চান আবগারি কর্মীরা। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “আবগারি দফতর চাইলে সবরকম সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি আমরাও নজর রাখছি।” |