পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে দুর্বল, শীর্ণ, বন্ধুর জায়গাটা আজ আর চিনে নিতে ভুল হয় না। সবাই জানেন সেটা উত্তরবঙ্গ। যেখানে চা-বাগান, পাহাড়, এলোমেলো নদীর কোলাজ। সারপ্রাইজ ভিজিট, ডুয়ার্স বৈঠক আর এক ঝাঁক প্রতিশ্রুতির সাতকাহনে মেনে নিলাম প্রগতি আসছে! দায়িত্বজ্ঞান জন্মগত ভাবে আসে না, অর্জন করে নিতে হয়। তবে বার বার প্রতিশ্রুতির নামে এসজেডিএ-র বৈঠক বসে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদে একশো বার উত্তর বাংলাকে সোনায় মোড়ার শপথ নেন কিছু মানুষ। এখানেই প্রথম জানা গেল মুখ আর মুখোশের ফারাক। সংবাদপত্রের পাতায় জানলাম, পরিবর্তন, আমরা-ওরার নস্টালজিক মিলনে চলবে উত্তরবঙ্গ উৎসব। উৎসব আয়োজনের সভা কোথায় হল? জলপাইগুড়ির হাসপাতাল সংলগ্ন এসজেডিএ সভাকক্ষে। উপস্থিত রইলেন জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ির কতিপয় গুণিজন। বাকি সব জেলাকে অমাবস্যায় রেখে উত্তরবঙ্গ উৎসবের আয়োজন কতটা যুক্তিসঙ্গত, জবাব চাইবার বিন্দুমাত্র আগ্রহও আমাদের নেই। কেননা ক্রীড়া-সংস্কৃতির উন্নয়নে উৎসবের আয়োজন ভাল কথা, কিন্তু শুধু ব্যানার, প্ল্যাকার্ড দিয়ে জানালেই কি বাকি জেলাগুলোর মনের চিঁড়ে ভিজবে? ভিজবে! কারণ ৯ নভেম্বরের ‘মুখচেনা’ সভায় সে সিদ্ধান্তই গৃহীত হয়েছে। ফোন করে গুণিজন ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যতই ক্রিয়েটিভিটি থাকুক না কেন, সর্বজনীন ব্যাপারটা নিশ্চয়ই থাকে না। এমনকী জলপাইগুড়ির চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের পুরনো নাট্যদলের কর্মীরাও সে সভায় ডাক না পেয়ে হতবাক। তবু ওঁরা বলছেন ‘উৎসবের কোনও রং নেই’। |
অনেক হয়েছে। এ বার ঘুচুক আমরা-ওরার বিভাজন! যে উৎসব জানুয়ারির শেষে হওয়ার কথা, সে উৎসবের সূচনা যে এমন নাটক দিয়ে শুরু হবে, আশ্চর্যের কিছু নেই। ওঁদের কাছে শিলিগুড়িই জেলা। সংস্কৃতির একশো বস্তা টেন্ডার শুধু জলপাইগুড়ি আর শিলিগুড়িরই আছে! উত্তরবঙ্গের বাকি জেলাগুলোয় নাটক, গান, খেলাধুলো হয় না? যাত্রাপালা পুতুলনাচ হয় না? খোঁজ রাখেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী? তবে কেন এমন নিকুম্ভিলা বৈঠক! কোনও নোটিশ ছাড়াই উত্তরবঙ্গ উৎসব করছেন, সভা করছেন, মতামত নিয়ে নোট করছেন, সকলকে নিয়ে কমিটি করছেন জানতে পারছি খবরে! চমৎকার! কোনও উপমাই আপনাদের যোগ্য নয়। আপনারা অনুপম। মফস্সল বলে দূরে সরিয়ে রাখবার অধিকার আপনাদের অবশ্যই আছে। উৎসবের আগেই বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটার যোগ্যতা আপনারা দিতেই পারেন। কিংবা ব্রাত্য করেও রাখতে পারেন! তবু আরও তথ্য নিয়ে এই সূচনা-বৈঠকটা হলে ভাল হত। অন্তত আমাদের মতো প্রান্তিক জেলাবাসীরা মনে মনে কষ্ট পেতেন না। হয়তো বা বলবেন, চলে আসুন, প্রতিনিধিত্ব করুন। কিন্তু ব্রাত্যজনের কোনও নিমন্ত্রণ তো থাকতে নেই। জেলাগুলোর তথ্য-সংস্কৃতি দফতরকে জানালেও এক জন করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারতেন। দু’-তিন দিন আগে ফোনে বললেও অন্য রকম ভাবা যেত। তবে কেন এ রকম দ্বিচারিতা। এর পরেও হয়তো বাকি জেলাগুলোকে আপনারা আমন্ত্রণ জানাবেন। তারা নাচবে, গাইবে, নাটকও করবে হয়তো মন দিয়ে। কিন্তু সৌজন্য বলে কি কিছুই নেই! জানলাম, নতুন ভূগোল। উত্তরবঙ্গে দু’টি জেলা জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি।
সন্দীপন নন্দী। বালুরঘাট, উত্তর দিনাজপুর
|
চিঠি পাঠান নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে।
‘উত্তরের চিঠি’
এ বি পি প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড,
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|