খুনের কারণ নিয়ে ধন্দ রঘুনাথপুর
সেচ-নালায় মিলল নিখোঁজ স্কুলছাত্রের দেহ
লাধারের সেচখালে মিলল নিখোঁজ স্কুলছাত্রের দেহ। রঘুনাথপুরের ঘটনা। শনিবার রাতে সত্যজিৎ মণ্ডল (১৭) নামে ওই ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা গ্রামের ভরপুরনাথ জীউ উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের একাদশ শ্রেণির এই ছাত্রটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তবে খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। নিহত ছাত্রের পরিবারের পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেও তাতে নির্দিষ্ট করে কারও নাম নেই।

সত্যজিত
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথপুর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা সত্যজিৎ ১৬ ডিসেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরেরই অন্য প্রান্তে নন্দুয়াড়ায় পড়তে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিল। তার পর থেকে তার খোঁজ মিলছিল না। শনিবার রাতে রঘুনাথপুর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মৌতোড় গ্রামের অদূরে মৌতোড় জলাধারের সেচনালা থেকে সত্যজিতের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মোটরবাইকটির অবশ্য হদিস মেলেনি। রবিবার সকালে তার দেহ পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের অনুমান, সেচনালার কাছেই কোনও জায়গায় নাইলনের দড়ি জাতীয় কিছু দিয়ে শ্বাসরোধ করে মারা হয় ওই স্কুলছাত্রকে। পরে সেচনালায় দেহ ফেলে দেয় আততায়ীরা।
সত্যজিতের শোকার্ত পরিবার।
তবে নিছক মোটরবাইক চুরির উদ্দেশ্যে সত্যজিৎকে খুন করা হয়নি বলেই পুলিশের ধারণা। রঘুনাথপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “ওই ছাত্রটির দেহে বিশেষ কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তা ছাড়া ওর সঙ্গে থাকা টাকা, আংটি-সহ অন্য কিছুই নেয়নি আততায়ীরা।” এ দিন সকালে রঘুনাথপুরের ওসি দেবাশিস পাহাড়ি, সিআই প্রিয়ব্রত বক্সীকে নিয়ে ওই সেচনালা পরিবদর্শনে যান এসডিপিও। পরে সত্যজিতের কিছু বন্ধু-বান্ধবীকে পুলিশ জেরাও করে। এসডিপিও বলেন, “তদন্ত এখন প্রাথমিক পর্যায়ে। মোবাইল পাওয়া না গেলেও সেটির কললিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্র পেতে সত্যজিতের ল্যাপটপে রাখা তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেই তদন্ত চলছে।”
এ দিন সকালে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া সড়কের পাশে ২ নম্বর ওয়ার্ডে সত্যজিতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মর্মান্তিক ঘটনায় শোকের ছায়া এলাকা জুড়েই। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন, পড়শিদের ভিড়। নিহত ছাত্রের বাবা সুনীল মণ্ডল রঘুনাথপুর শহরের একটি পেট্রোল পাম্পের কর্মী। স্ত্রী টিয়ারানিদেবী এবং দুই ছেলে সত্যজিৎ ও সুরজিৎকে নিয়ে তাঁর সংসার। সত্যজিৎ ছিল বড় ছেলে। নাগাড়ে কাঁদছিলেন টিয়ারানিদেবী। তার মধ্যেই কোনও রকমে বললেন, “শুক্রবার সন্ধ্যায় ছেলেটা বলে গেল, ‘টিউশনিতে যাচ্ছি’। বলেছিলাম, দেরি করিস না। তাড়াতাড়ি ফিরবি। সেই যে গেল আর ফিরল না!” আত্মীয় প্রদীপ মণ্ডল জানান, সম্ভাব্য সমস্ত জায়গা খোঁজ করার পরে পুলিশের কাছে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ সত্যজিতের মোবাইল থেকে সুনীলবাবুর মোবাইলে ফোনও এসেছিল। সুনীলবাবুর কথায়, “অন্যপ্রান্ত থেকে কেউ কোনও কথা না বলে ফোনটা কেটে দেয়।”
এই সেচ-নালা থেকে উদ্ধার হয় ওই কিশোরের দেহ।
গোটা পরিবার যখন দুশ্চিন্তায় ভুগছে, তখন শনিবার বিকেলের দিকেও সত্যজিতের মোবাইল থেকে ফের ফোন পান সুনীলবাবু। ফোনটি ধরেছিলেন তাঁর ভাই অমিত মণ্ডল। তিনি বলেন, “অন্য প্রান্ত থেকে হিন্দিতে এক জন বলে, আপনি কি সত্যজতিরে বাবা? মন দিয়ে শুনুন, জরুরি কথা আছে। আমি সত্যজিৎ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই ফোন কেটে দেওয়া হয়।” রেলপুলিশের কর্মী প্রদীপবাবুর দাবি, “ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে সত্যজিৎকে। এই ঘটনায় ওর পরিচিত কয়েক জন জড়িত বলে আমাদের ধারণা। আমরা যতটুকু জানি, সবই পুলিশকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছি।”

— নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.