ভয়কে জয় করে কলেজ ভোট নির্বিঘ্নেই
ভোট দেওয়ার লম্বা লাইন। তাতে ছাত্রীদের সংখ্যাও উল্লেখজনক। আশপাশের রাস্তাঘাট মোটামুটি সুনসান। কিন্তু তেমন কোনও উত্তেজনার সঞ্চার হয়নি। এমনকী, বহরমপুর শহরে কলেজগুলোর সামনে না গেলে বোঝাই যেত না, শনিবার জেলা জুড়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চলছে। বাকি শহরের জীবনযাত্রা ছিল এতটাই স্বাভাবিক। কলেজে ঢোকার অনেক আগে থেকেই হাতে হাতে পরিচয়পত্র নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। রাজনৈতিক নেতারা কাছাকাছি থাকলেও কলেজের চৌহুদ্দিতে ঢুকলেন না। নিরাপত্তা নিয়ে কড়াকড়িতে কোনও আপত্তিও ওঠেনি। একটাও অশান্তি না হয়ে এই ভাবেই নির্বিঘ্নে মিটে গেল মুর্শিদাবাদের কলেজ ভোট পর্ব।
ভোট শেষে বিজয়মিছিলও ঘেরা ছিল আঁটোসাঁটো নিরাপত্তায়। অথচ নির্বাচনের মাত্র কিছু দিন আগেও কলেজে কলেজে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। অবস্থা এমনই দিকে গড়িয়েছিল যে, জেলাপ্রশাসনকে সর্বদল বৈঠক পর্যন্ত ডাকতে হয়েছিল। তাই আশঙ্কা উদ্বেগ ছিলই। কিন্তু দেখা গেল, সেই সব যাবতীয় উদ্বেগকে জয় করল মুর্শিদাবাদ। আর তার মূল নায়ক-নায়িকা হয়ে উঠলেন শহর-মফস্সল-গ্রামের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাই। তাঁরাই ভয়কে জয় করে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন, উদ্বেগের কিছু নেই। সেই স্বতঃস্ফূর্ত বিচারবোধের সামনে মিইয়ে গেল গণ্ডগোলের আশঙ্কাও।
শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। শনিবার হাল্কা মেজাজে জঙ্গিপুরের প্রশাসনের দুই কর্তা। ছবি:অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
এ নিয়ে তৃতীয়বার মুর্শিদাবাদের কলেজগুলির ছাত্র সংসদ নির্বাচন হল একই দিনে। মোট ১৫টি কলেজের মধ্যে তিনটি কলেজে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি। ওই তিনটি কলেজে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে ছাত্র পরিষদ। বাকি ১২টি কলেজের মধ্যে দু’টিতে ফলাফল এখনও স্পষ্ট নয়। ৫টি কলেজে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছে ছাত্র পরিষদ। ৫টিতে এসএফআই নিয়ন্ত্রিত বাম মোর্চা জিতেছে। জঙ্গিপুর কলেজে ছাত্র পরিষদ পেয়েছে ১৪টি আসন, এসএফআই পেয়েছে ১৩টি। এক জন নির্দল হিসেবে জিতেছেন। কলেজের অধ্যক্ষ আবু এল শুকরানা বলেন, “এই কলেজে ছাত্র সংসদ কার দখলে গেল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।” লালবাগ সুভাষচন্দ্র সেন্টিনারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রভাসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘আইনগত দিক থেকে বামমোর্চা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ছাত্র পরিষদ জিতেছে ছাত্র সংসদ সম্পাদক, সহ সভাপতি এবং ক্রীড়া সম্পাদকের মতো পদগুলি সহ ৯টি আসনে। মিলিজুলি ছাত্র সংসদ হয়েছে। পরে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।”
ওই দিন সকাল থেকেই কলেজগুলি কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়। কিন্তু তাতে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহে কোনও ভাঁটা পড়েনি। বেশ ঠান্ডা পড়ে গিয়েছে এখন মুর্শিদাবাদে। তার মধ্যেই শীত পোশাকে গা ঢেকে ছাত্রছাত্রীরা কলেজের ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। সরু গলির মধ্যেও শৃঙ্খলা বজায় ছিল আগাগোড়া। শান্তিপূর্ণ ছিল গোটা জেলাই। প্রশাসনের মতে, ছাত্রছাত্রীদের যে এই ভাবে ভোট দিতে দেখা গিয়েছে, এটাই সব থেকে বড় সাফল্য।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক অজয় ঘোষ বলেন, “কলেজ ভোট নিয়ে আশঙ্কা ছিল সকলেরই। প্রাক নির্বাচনী ঘটনাগুলিতে উদ্বিগ্ন প্রশাসনও তাই ছিল সতর্ক। বিধি নিষেধ জারি করতে ও তা মেনে চলতে বাধ্য করা হয়েছে সব পক্ষকে। প্রতিটি শহরে স্থানীয় মহকুমাশাসকেরা উপস্থিত থেকে নির্বাচনের কাজকর্ম দেখেছেন। তবে কলেজের ছাত্রছাত্রীরা কলেজে হাজির হয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিয়ে যে সহযোগিতা করেছেন, তাতেই সম্ভব হয়েছে নির্বিঘ্নে নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়া।” শান্তিপূর্ণ ভাবে কলেজ নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় খুশি ছাত্র সংগঠনগুলোও। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি হাসানুজ্জামান বলেন, “সত্যি বলতে কী, ভোট নিয়ে গণ্ডগোলের আশঙ্কা একটা ছিলই। কিন্তু প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করাতেই কলেজ নির্বাচন এতটা শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরাও ছিল অত্যন্ত সচেতন। সমস্ত ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তাঁরা প্রমাণ করেছে গণতন্ত্রই শেষ কথা বলে।” তাঁর পরামর্শ, এরপর থেকে একই দিনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শর্তও তৈরি করলে, প্রাক নির্বাচনী অশান্তিও পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব হবে।
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “নির্বাচনের আগে কয়েকটি কলেজে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, তাতে নির্বাচন নিয়েও আশঙ্কা ছিল। প্রশাসনের সদর্থক ভূমিকাতে সেই আশঙ্কাকে জয় করা গিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরাও ভোট দিয়েছেন। ছাত্রছাত্রীরা যে সচেতন ভাবেই ভোট দিয়েছেন, তা-ও বোঝা গিয়েছে।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি পার্থসারথি পালের কথায়, “কলেজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক জায়গায় প্ররোচনা তৈরির চেষ্টা হয়েছে। প্রশাসনকে চাপে রাখতে মন্ত্রীরা রাস্তায় নেমেছেন। তবু গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকায় প্রমাণিত হচ্ছে রাজ্যের প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করবে। কান্দি রাজ কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল হকের কথায়, “বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীই শান্তিপ্রিয়। তারা কোনও অশান্তি চায় না। অশান্তি পাকায় বহিরাগতেরা আর কয়েকজন ‘দাদা’। কিন্তু প্রশাসন কড়া ও নিরপেক্ষ হওয়ায় তারা এ বার কিছু করতে পারেনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.