|
|
|
|
পোস্টার সাঁটিয়ে চোলাইয়ের বিরুদ্ধে প্রচার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
বিষমদে মৃত্যুর ঘটনা রাজ্যে আলোড়ন ফেললেও পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম ব্লক জুড়ে এখনও বেআইনি চোলাই মদের অসংখ্য ভাটি রমরমিয়ে চলছে। পুলিশ-প্রশাসন ও শাসক দলের একাংশের মদতে বেআইনি চোলাই-শিল্পকে ঘিরে লক্ষ লক্ষ টাকার কারবার চলছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের নেতাদের কেউ কেউও সরাসরি বেআইনি চোলাই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় থানার সঙ্গে মাসোহারারা চুক্তিতে ভাটিগুলি অবাধে চলছে বলে অভিযোগ করেছেন নয়াগ্রাম ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি অসিত দাস। অসিতবাবুর উদ্যোগে সম্প্রতি এলাকায় পোস্টার সাঁটিয়ে অবৈধ চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রির বিরুদ্ধে ‘গণ আন্দোলন’ গড়ে তোলার ডাক দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আগে সিপিএমের মদতে ভাটিগুলি চলত। এখন রাজনৈতিক পালাবদলের জেরে বর্তমান শাসক দলের একাংশ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে বেআইনি চোলাই ব্যবসায় মদত দিচ্ছেন। যদিও নয়াগ্রাম থানার পুলিশের দাবি, “বেআইনি মদ-ভাটি সম্পর্কে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
এলাকাবাসীর অবশ্য দাবি, বাস্তবে চিত্রটা অন্য রকম। আবগারি দফতর তল্লাশিতে যাওয়ার আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ভাটি-মালিককে সতর্ক করে দেওয়া হয়। শরিক কংগ্রেস বেআইনি মদের বিরুদ্ধে পোস্টার সাঁটালেও তৃণমূলের তরফে অবশ্য মদ-বিরোধী আন্দোলনের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক-সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত। উজ্জ্বলবাবুর বক্তব্য, “বেআইনি চোলাই মদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দফতর। আমরা আগেই প্রশাসনকে এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করতে বলেছি। তবে নয়াগ্রামে ঘটনার চেয়ে খবর তৈরি করা হয় বেশি।” |
|
ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
স্থানীয় সূত্রের খবর, নয়াগ্রাম ব্লকের যত্রতত্র রয়েছে প্রায় শ’খানেক বেআইনি ভাটি। এর মধ্যে পাতিনা পঞ্চায়েত এলাকার বাঁশিয়াভোল, চাঁদাবিলা পঞ্চায়েতের তপোবন, মলম অঞ্চলের মলম, নিমাইনগর ও কুড়চিবনি, বড়নিগুই অঞ্চলের বনিশোল, জামিরাপাল অঞ্চলের খুদমরাই, বেড়াজাল অঞ্চলের সাতহাতিয়া, বালিগেড়িয়া অঞ্চলের গোবিন্দপুর এবং আড়রা অঞ্চলের ভালুকবাসা, বাঁকশোল ও ধুমসাই এলাকায় বড় মাপের ২২টি বেআইনি চোলাই-ভাটি রয়েছে।
বেআইনি চোলাই-ব্যবসার জাল বহুদূর বিস্তৃত। নয়াগ্রাম ব্লক এলাকার তৈরি হওয়া বেআইনি চোলাই মদের ব্যারেল ভর্তি লরিগুলি প্রতিদিনই পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে যাতায়াত করছে। এমনকী বেশ কিছু ভাটি মালিকেরা চুক্তি ভিত্তিক লোক নিয়োগ করে মোটর বাইকে করেও মদের ব্যারেল কেশিয়াড়ি ও দাঁতন এলাকায় পাঠাচ্ছেন। কেশিয়াড়ি ও দাঁতনের পাশাপাশি, খাকুড়দা, সোনাকনিয়া, মোহনপুর ও খড়্গপুরের বাজারে বিক্রি হয় নয়াগ্রামের চোলাই। এ ছাড়া নয়াগ্রামে তৈরি চোলাই মদ চলে যায় পূর্ব মেদিনীপুরের এগরাতেও। চোলাই মদ তৈরির জন্য কাঁচামাল আসে খড়্গপুর থেকে। তাছাড়া, নয়াগ্রাম ব্লকের গ্রামে গ্রামে খোলা বাজারে, বিভিন্ন দোকানে বেআইনি চোলাই বিক্রি হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আবগারি দফতরের অন্তঃশুল্ক অধীক্ষক পরিমলকান্তি দত্ত বলেন, “বেআইনি মদ ভাটির বিরুদ্ধে জেলা জুড়েই অভিযান চলছে। নয়াগ্রাম ব্লকে অভিযান জোরদার করা হবে।” |
|
|
|
|
|