সি পি আই (মাওবাদী) দলের শীর্ষ ও প্রবীণ নেতা কিষেণজির হত্যা সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে আপনাদের পত্রিকায় প্রকাশিত (৩-১২) প্রসূন আচার্যর ‘অনুসন্ধানমূলক’ প্রতিবেদনের একটি অংশের বক্তব্য সম্পর্কে আমাদের এই চিঠি।
তিনি লিখছেন, “মাওবাদীরা বলছে, মধ্যস্থতাকারী (দের) মাধ্যমে আলোচনায় বসার জন্য ডেকে আনা হয় কিষেণজিকে। ...রাজ্য সরকারের উপর বিশ্বাস করে লোকালয়ের কাছাকাছি গিয়েছিলেন তিনি।” মাওবাদী দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই জাতীয় কথা নেই। তিনি সংগঠনের মধ্যে শান্তি আলোচনায় কী ধরনের দায়িত্বে ছিলেন তা আমরা জানি না। নিষিদ্ধ সংগঠন হওয়ার কারণে সঠিক তথ্য ও সত্য জানার অসুবিধা আছে বলেই যে কোনও বিভ্রান্তিমূলক ও ইঙ্গিতমূলক সংবাদ ভুল বার্তা বহন করে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কারণ,
১) ৩০ সেপ্টেম্বরই মাওবাদী পার্টির নেতাদের সঙ্গে শেষ মুখোমুখি কথা হয়। তার পর থেকে কিষেণজির মৃত্যুর দিন পর্যন্ত উক্ত সংগঠনের কোনও স্তরের সঙ্গে আমাদের বৈঠকের কোনও পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল না। যোগাযোগও হয়নি না দূরভাষে না মৌখিক।
২) উক্ত সংগঠনের সঙ্গে আমাদের দুটি বৈঠকে কিষেণজি ছিলেন না। গোটা পর্বে তাঁর সঙ্গে আমাদের কোনও ভাবে মৌখিক, চিঠি বা দূরভাষে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয়নি। বস্তুত, তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগও হয়নি।
৩) দুটি বৈঠকের দিনক্ষণ তাঁরাই স্থির করে দিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছনোর পর তাদেরই দায়িত্বে হেফাজতে ও নিরাপত্তায় তাদেরই স্থিরীকৃত স্থানে বৈঠক হয়েছিল। কে বা কারা বসবেন তা-ও আগাম জানানো হয়নি। আমাদের কৌতূহলও ছিল না। পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতেই মুখোমুখি হই আমরা।
৪) ৩১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে পরিস্থিতি মোড় নেয়। মাওবাদীদের অস্ত্র সংবরণের সময়সীমা না-বাড়ানো, তিন জন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী খুন, যৌথবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে দু’জন মাওবাদীর ও এক নাগা জওয়ানের মৃত্যু, পুরোদমে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু, আমাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি পরিস্থিতিতে কিষেণজি তাঁর সব ‘নিরাপত্তা বলয় ছেড়ে লোকালয়ের কাছাকাছি চলে এলেন আলোচনার জন্য’ এ গল্প ভিত্তিহীন।
আজাদকে হত্যার ঘটনার সঙ্গে তুলনাটাও উপযোগী নয় এ ক্ষেত্রে। আমাদের বিশ্বাস, আলোচনার মাধ্যমেই শান্তি ফিরবে জঙ্গল মহলে। সংবাদমাধ্যম-সহ সব পক্ষকেই সহযোগী ভূমিকা পালন করার আবেদন করছি।
সুজাত ভদ্র, অশোকেন্দু সেনগুপ্ত, কল্যাণ রুদ্র, ছোটন দাস, প্রসূন ভৌমিক ও দেবাশিস ভট্টাচার্য
|
সাম্য কাহাকে বলে’ (২৫-১১) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে লেডিজ স্পেশালে পুরুষদের ওঠার সপক্ষে ও বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমে যাঁরা এ ভাবে ওঠেন (এবং দরজাও আটকে রাখেন) তাঁদের যুক্তিগুলি উল্লেখ করে তার পর বলা হয়েছে, যে হেতু সমাজে মেয়েদের বহু সমস্যার চোরাস্রোত সহ্য করতে হয়, পুরুষদের এ সম্বন্ধে আর একটু উদারমনস্ক হওয়া উচিত। আমার মনে হয়, এখানে এ বিষয়ে অন্তত দুটি সমস্যার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা উচিত। প্রথমটি কারও কারও হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত সত্য। সকালে পুরুষদের বাড়ির কাজ কম করতে হয়। মেয়েদের অনেকেই অনেক কাজ করে। রান্না করে এসে লেডিজ স্পেশালটি ধরে একটু বসে বিশ্রাম করার সুযোগ নিয়ে অফিসে গিয়ে আবার কাজ করতে হয়। সেই ট্রেনটি এবং তার সিটগুলি যদি পুরুষরা বিশেষত, অপেক্ষাকৃত অল্পবয়স্ক পুরুষরা আটকে রাখেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তাঁদের পক্ষে একটু আগে বেরিয়ে অন্য ট্রেনে যাওয়া অতটা শক্ত নয়। |
দ্বিতীয় কারণটি অল্পবয়সি মেয়েদের পক্ষে আলোচনা করা শক্ত। আমার বয়স ষাটের মাঝামাঝি বলে সোজাসুজিই বলছি, প্যাসেঞ্জার ট্রেনগুলির দরজা আটকে যে সব পুরুষ দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁদের কেউ কেউ (সবাই নয়) মেয়েদের নানা রকম হেনস্থা করেন। অল্প বয়সে এর শিকার আমাকেও অনেক বার হতে হয়েছে। সমস্যা হল, যে সব পুরুষ এটা করেন না, তাঁরা বিশ্বাসই করতে চান না যে, অনেক পুরুষ এটা করেন। কিন্তু এটা সত্য। এটা এড়াবার জন্য লেডিজ কামরা ও লেডিজ স্পেশাল অত্যন্ত সুবিধাজনক। অবশ্যই আমরা সব সময় লেডিজ কামরা বা লেডিজ স্পেশালে চলতে পারি না। এবং আমাদের এগুলো মেনে নিয়েই চলতে হবে। কিন্তু যেটুকু আছে, সেটুকুও পাওয়া যাবে না কেন? ক’টা আর লেডিজ কামরা? ক’টা আর লেডিজ স্পেশাল? সেটুকুও কি ছাড়া যায় না? মনে পড়ছে, অনেক বছর আগে মেয়েরা লেডিজ কামরা থেকে একটি ছাত্রকে ফেলে দিয়েছেন এই মিথ্যা অভিযোগে লেডিজ কামরা তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। জানতে পেরেছিলাম, তখন কয়েক জন নিত্যযাত্রী ছাত্র তাদের সহপাঠিনীদের বলেছিল, ‘বেশ হয়েছে। এই বার তোদের সতীপনা ঘুচবে’। সেই ট্র্যাডিশনই কি এখনও চলছে?
সুস্মিতা ভট্টাচার্য। কলকাতা-২৬ |