সম্পাদকীয় ১...
বিদায় পশ্চিমবঙ্গ
জার্মানির প্রসিদ্ধ বিমান পরিবহণ সংস্থা লুফথানসা এয়ারলাইনস কলিকাতা হইতে বিদায় লইতেছে। আগমী এপ্রিল হইতে তাহার মানচিত্রে এই শহরের আর স্থান মিলিবে না। এই বিদায় প্রতীকী। প্রতীকটি একাধিক কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, ২০০৯ সালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কলিকাতা ছাড়িবার পরে লুফথানসাই ছিল কলিকাতা বিমানবন্দরের একমাত্র ইয়োরোপীয় ‘সদস্য’। মার্কিন এয়ারলাইনস আগেই ‘নাই’ হইয়া গিয়াছে। অতঃপর কলিকাতায় পড়িয়া থাকিবে আরব দুনিয়ার দুইটি সংস্থা, ইতি পশ্চিম। দ্বিতীয়ত, ১৯৫৯ সালে লুফথানসা যখন দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম অবতরণ করে, সেই সূচনা হইয়াছিল কলিকাতা বিমানবন্দরেই। কলিকাতা তখনও ভারতের নগরচিত্রে প্রথম সারিতে, অনেক অর্থেই প্রথম স্থানে। এখন কলিকাতা মধ্যসারির একটি জনবহুল শহর। তৃতীয়ত, লুফথানসা ইহার আগেও শহর ছাড়িয়া গিয়াছিল, শেষ বার ফিরিয়া আসে ২০০৬ সালে, তখন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মধ্যগগনে। যখন সে বিদায় লইতেছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ ঘটনাটি নিতান্তই প্রতীকী। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি প্রতীকের গুরুত্ব বোঝেন, তবে তিনি নিশ্চয়ই এই ঘটনাটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত বলিয়া চিনিয়া লইবেন। বিপদসংকেত। বহুচর্চিত রূপকল্প ব্যবহার করিলে তিনি ইহাকে অশনিসংকেতও বলিতে পারেন।
বিপদটি ঠিক কোথায়, তাহা বুঝিবার জন্য প্রতীক ছাড়িয়া বাস্তবের গভীরে প্রবেশ করাই বিধেয়। লুফথানসা কেন কলিকাতা ছাড়িতেছে? সংস্থার পরিচালকরা জানাইয়াছেন, কলিকাতায় যথেষ্ট যাত্রী নাই। বিশেষত, উচ্চ শ্রেণির যাত্রীর সংখ্যা কম। ফলে কলিকাতায় বিমান চালানো তাঁহাদের পক্ষে লাভজনক নহে। বিমানযাত্রীর সংখ্যা, বিশেষত উচ্চ শ্রেণির যাত্রিসংখ্যা নির্ভর করে প্রধানত সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর। যে শহরে শিল্পবাণিজ্য তথা অর্থনীতির সমৃদ্ধি থাকে, দ্রুত প্রসার হয়, সেখানে বিমানযাত্রীর অনুপাত বেশি হইবে, ইহাই স্বাভাবিক। তাহা না হইলে পাণ্ডবরা বর্জন করুন বা না করুন, উচ্চ শ্রেণির বিমানযাত্রীরা শহরকে বর্জন করিবেনই। বস্তুত, একটি শহর তথা রাজ্য সম্পর্কে শিল্পবাণিজ্যের উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কতখানি, বিমান পরিবহণের মাত্রা তাহার একটি মূল্যবান সূচক হিসাবেই গণ্য হয়। পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে সাধারণ ভাবে দেশবিদেশের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নিতান্ত সীমিত, লুফথানসার কাহিনিতে তাহারই স্বাভাবিক প্রতিফলন ঘটিয়াছে। ইহাই সত্য। ইহাই বিপদ।
ছয় মাসের মুখ্যমন্ত্রিত্বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনাগ্রহ দূর করিয়া পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী করিবার ব্যাপারে বিশেষ কোনও সাফল্য অর্জন করিতে পারেন নাই। তাঁহার নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পবাণিজ্যের পুনরুত্থান ঘটিবে, বিনিয়োগ আসিবে, এমন কোনও ভরসা এখনও নাই। সিঙ্গুর আন্দোলনের মধ্য দিয়া তাঁহার ক্ষমতায় আরোহণ, সেই আন্দোলনের বিষয়বস্তু এবং ভাবভঙ্গি, দুইই বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা উৎপাদন করিয়াছিল। ক্ষমতায় আসিবার পরে তিনি এক ধরনের সংযমের পরিচয় দিয়াছেন, সদিচ্ছারও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ করিবার মানসিকতাও তাঁহার আচরণে দেখা গিয়াছে। কিন্তু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি একটি যথার্থ উদার এবং বলিষ্ঠ উন্নয়নমুখী চিন্তার প্রমাণ দিতে পারেন নাই, বরং জনপ্রিয়তার সিঙ্গুর মডেলেই যেন বাঁধা পড়িয়া আছেন। জমি অধিগ্রহণে ‘না’, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগে ‘না’, জলকরে ‘না’ একের পর এক নেতির পরম্পরাই তাঁহার সিদ্ধান্তকে চালিত করিতেছে। সব মিলাইয়া এই ধারণাই ক্রমশ প্রোথিত হইতেছে যে, পশ্চিমবঙ্গ যে তিমিরে, সেই তিমিরেই। এই অন্ধকার হইতেই লুফথানসার বিদায়। মুখ্যমন্ত্রী দেওয়ালের লিখন পড়িতে পারিতেছেন কি? এখনও তাঁহার রাজ্যপাট পুরানো হয় নাই। এখনও সময় আছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.