আমানত বিমার সুযোগ সব ব্যাঙ্কেই
নিশ্চিন্তে টাকা রাখুন বেসরকারি ব্যাঙ্কেও
শেয়ার বাজারে একনাগাড়ে মন্দা চলায় এবং ব্যাঙ্ক সুদ আকর্ষণীয় জায়গায় পৌঁছে যাওয়ায়, সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের সিংহভাগ এখন ছুটছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে। কয়েকটি ছোট বেসরকারি ব্যাঙ্ক সুদ দিচ্ছে বাজারের তুলনায় একটু বেশি হারে। সমস্যা এখানেই। এক দিকে বেশি সুদের প্রলোভনকে যেমন উপেক্ষা করা যাচ্ছে না, অন্য দিকে তেমন মনে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে সুরক্ষা নিয়ে।
অনেকেরই ধারণা, বেসরকারি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত অর্থ আদৌ সুরক্ষিত নয়। সম্প্রতি আইডিবিআই ব্যাঙ্ক একটু বেশি হারে সুদ দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছিল, আইডিবিআই সরকারি ব্যাঙ্ক কি না। টাকা রাখব ভেবেও অনেকে পিছিয়ে এসেছিলেন এই প্রশ্নের সদুত্তর না পাওয়ায়। এই ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখার সাইনবোর্ড এবং ওয়েবসাইটে কিন্তু পরিষ্কার করে লেখা আছে ‘ভারত সরকারের মালিকানাধীন একটি ব্যাঙ্ক’। তা হলে এত সংশয় কেন?
তা ছাড়া বেসরকারি মানেই পুরোপুরি অসুরক্ষিত, তা কিন্তু নয়। মনে রাখতে হবে, ভারতের প্রথম পাঁচটি বড় ব্যাঙ্কের মধ্যে দু’টি এবং প্রথম দশটির মধ্যে চারটি বেসরকারি। এরা রাতারাতি লোপাট হয়ে যাবে, এমন আশঙ্কা করার কোনও কারণ নেই। বরং কয়েকটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ব্যবসা এখন অনেক সরকারি ব্যাঙ্কের তুলনায় ভাল। তা ছাড়া গত ২৫ বছরে ক’টি বেসরকারি ব্যাঙ্ক তলিয়ে যাওয়ার জেরে হাজার হাজার মানুষের টাকা অনাদায়ী থেকে গিয়েছে? কিছু সমবায় ব্যাঙ্ক ছাড়া এমন নাম খুব একটা মনে পড়বে না। কয়েক বছর আগে গ্লোবাল ট্রাস্ট ব্যাঙ্ক এবং সিকিম ব্যাঙ্ক রুগ্ণ হয়ে পড়ায় এই দুটি ব্যাঙ্ককে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল দুটি শক্তিশালী ব্যাঙ্কের সঙ্গে। ফলে আমানতকারীদের কোনও লোকসান হয়নি। এইচডিএফসি, অ্যাক্সিস, আইসিআইসিআই, কোটাক মহীন্দ্রা, ফেডারেল ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক ইত্যাদির মতো কিছু বেসরকারি সংস্থা এখন বেশ রমরমা ব্যবসা করছে।
এই প্রসঙ্গে আর একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন। সরকারি অথবা বেসরকারি, যে ব্যাঙ্কেই টাকা রাখুন, ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আপনার আমানত গ্যারান্টি-প্রদত্ত। ডিপোজিট ইনসিওরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন (ডি আই সি জি সি) এই গ্যারান্টি দেয়। সব দেশি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক, এমনকী বিদেশি ব্যাঙ্ক এবং আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কে রাখা আপনার ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আমানত বিমা করা আছে ডিআইসিজিসি-র কাছে। এই বিমার আওতায় পড়ে কিছু সমবায় ব্যাঙ্কও। সেভিংস, মেয়াদি আমানত, কারেন্ট, রেকারিং, সব ধরনের অ্যাকাউন্টই আসে এই বিমার অধীনে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কগুলিকে প্রিমিয়াম দিতে হয় ডিআইসিজিসি-কে। সব অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে ব্যাঙ্ক পিছু ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আমানত থাকে গ্যারান্টি প্রদত্ত। এই ১ লক্ষ টাকার মধ্যে সুদ ও আসল দুই-ই থাকতে পারে। আপনি ব্যাঙ্ক পিছু পাচ্ছেন ১ লক্ষ টাকা করে বিমার সুবিধা। তবে একই ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় আমানত রাখলে সুবিধা পাওয়া যাবে মোট ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এই ১ লক্ষ টাকার হিসাব হবে অ্যাকাউন্টের মালিকানা অনুযায়ী। যেমন ‘ক’ ও ‘খ’-এর নামে যুগ্ম অ্যাকাউন্টে পাওয়া যাবে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার সুবিধা। একই ব্যাঙ্কে আলাদা করে সুবিধা পাওয়া যাবে ‘খ’ ও ‘ক’ এবং ‘ক’ ও ‘গ’-এর নামে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দু’টি অ্যাকাউন্টের জমার উপর।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ব্যাঙ্ক পিছু ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আমানত নির্ভয়ে রাখাই যেতে পারে। এর বেশিও রাখা যেতে পারে অ্যাকাউন্টের মালিকানার হেরফের করে। অর্থাৎ বেসরকারি ব্যাঙ্ক নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। কয়েকটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ দিচ্ছে ৬ শতাংশ হারে। এর সুবিধা নেওয়াই যেতে পারে নির্ভয়ে। মনে রাখতে হবে, বেসরকারি ব্যাঙ্ক অচ্ছুত নয়। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেও সরকারি মালিকানা কমছে, বাড়ছে বেসরকারি মালিকানা।
প্রত্যক্ষ কর বিধি (ডিরেক্ট ট্যাক্স কোড) লোকসভায় পেশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে তা কার্যকর হবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে। ১৯৬১ সালের আয়কর আইনের জায়গা নেবে নতুন আইন। এই কর বিধি অনুযায়ী ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় থাকবে পুরোপুরি করমুক্ত। ১০ শতাংশ হারে কর ধার্য হবে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর। ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে ২০ শতাংশ হারে। এর উপরে আয় হলে কর দিতে হবে ৩০ শতাংশ হারে। ২.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত থাকবে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ বার যেমন সুদ কমায়নি, তেমন বাড়ায়ওনি। সুদ যে আর বাড়বে না, তার ইঙ্গিত স্পষ্ট এ বারের ঋণনীতিতে। এখন অপেক্ষা, কবে সুদ কমবে। সুদ কমার ব্যাপারটি পুরোপুরি মূলবৃদ্ধি কমে আসার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুদ কমতে শুরু করলে বাজারে ঋণপত্রের (সরকারি ও বেসরকারি বন্ড) দাম বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই আশায় ভর করে এখন থেকেই মিউচুয়াল ফান্ডের বন্ড ফান্ড অথবা ঋণপত্র-নির্ভর ইনকাম ফান্ডে লগ্নির কথা ভাবা যেতে পারে। সুরক্ষার দিক থেকে এগুলি ইক্যুইটি ফান্ডের তুলনায় উত্তম। ডিভিডেন্ড পুরোপুরি করমুক্ত। বৃদ্ধি বা গ্রোথের উপর পাওয়া যায় ‘কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স’-এর সুবিধা। যাঁরা ইক্যুইটিতেও থাকতে চান, এই সস্তার বাজারে তাঁরা ভাবতে পারেন ব্যালান্সড ফান্ডের কথা। অতি অল্প সময়ের জন্য টাকা রাখা যেতে পারে ‘আল্ট্রা শর্ট টার্ম’ ফান্ডে। এখানে ডিভিডেন্ড বাবদ করমুক্ত আয় হতে পারে ৮ শতাংশেরও বেশি। অর্থাৎ সময় পাল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে পাল্টাতে হবে বিনিয়োগ-পরিকল্পনাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.