সকালটা রাতের চেয়েও অন্ধকার
সুস্থতা থেকে আরোগ্যের আশায় ওঁরা ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। ব্যয়সাধ্য জেনেও ‘ভাল চিকিৎসা’র আশায় বেসরকারি হাসপাতালেই ভরসা রেখেছিলেন। ওঁদের কেউ কেউ সুস্থ হয়েও উঠেছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছুটির দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। শুক্রবারের সকাল রাতের চেয়েও গভীর আঁধার নিয়ে এল ওঁদের পরিজনের জীবনে।
মাথায় যন্ত্রণা এবং স্নায়ুর সমস্যা নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ঢাকুরিয়ার এএমআরআই-য়ে ভর্তি হয়েছিলেন হুগলির রিষড়া রেলপার্কের বনমালী মণ্ডল (৬৬)। সেরে উঠেছিলেন। শুক্রবার সকালেই তাই বাবাকে বাড়ি নিয়ে আসার কথা ছিল ছেলে দেবাশিসের। সকালে বাড়ি থেকে বেরোনোর মুখেই আগুন লাগার খবরটা পান। তড়িঘড়ি পৌঁছন ঢাকুরিয়ায়। পরের কয়েক ঘণ্টায় এ-দিক সে-দিক অনেক ছোটাছুটির শেষে বিকেলে এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে বাবার দেহের সন্ধান পান দেবাশিস।
কয়েক দিন আগে দুর্ঘটনায় মাথায় চোট পেয়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন হুগলিরই পুড়শুড়ার সঙ্গীতা পণ্ডিত (২৪)। শুক্রবার তাঁরও ছুটি পাওয়ার কথা ছিল। দাদা সুরজ বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালেই ছিলাম। কিন্তু বোনকে বাঁচাতে পারলাম না।” ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কুলপির কইখালি গ্রামের প্রাপ্তি পাইকেরও (৫০)। সিঁড়ি থেকে নামতে গিয়ে বাঁ পা ভেঙে গত ২৮ নভেম্বর ভর্তি হয়েছিলেন ওই হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর আত্মীয়রাও ছিলেন হাসপাতালেই। কিন্তু প্রাপ্তিদেবীকে বাঁচাতে পারেননি।
পঞ্চানন মাইতির স্ত্রী আরতিদেবী। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মী, ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশের গ্রাম মেসেড়ার বাসিন্দা পঞ্চানন মাইতি (৫৮) মূত্রনালির সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন গত ২৯ নভেম্বর। শুক্রবারই ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাঁরও। সকালে দুর্ঘটনার খবরে হাসপাতালে পৌঁছন ভাইপো দেবব্রত। রাত পর্যন্ত কোথাও কোনও খবর পাচ্ছিলেন না। শনিবার সকালে এসএসকেএমের লাশ-কাটা ঘরে পঞ্চাননবাবুর নিথর দেহের সন্ধান পান দেবব্রত।
আরও এক বিদ্যুৎকর্মী, হুগলির সপ্তগ্রামের জহরলাল সরকারও (৫৮) ভর্তি হয়েছিলেন ওই হাসপাতালেই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শ্যালক সুশান্ত গোলদার বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতেও হাসপাতালেই ছিলাম। শুক্রবার সকালে ধোঁয়ার মধ্যেই জামাইবাবুকে নামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারলাম না।” অক্টোবরের গোড়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শরীরের একাংশ অসাড় হয়ে গিয়েছিল ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের কর্মী খগেন্দ্রনাথ মাহাতোরও (৫৫)। ৬ অক্টোবর তাঁকেও ভর্তি করা হয়েছিল এএমআরআই-য়ে। ঝাড়গ্রামের পুকুরিয়ায় বাড়ির লোকজন শুক্রবার সকালে টিভির খবরেই প্রথম দেখেন, ওই হাসপাতালে আগুন লেগেছে। সম্পর্কিত ভাই পানুবাবু রওনা হন। দিনভর ঘোরাঘুরির শেষে সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে মেলে দেহের হদিস। মুখ্যমন্ত্রীর অর্থসাহায্যে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে গভীর রাতে দাদার দেহ নিয়ে ঝাড়গ্রামে ফেরেন পানুবাবু। হুগলির কোন্নগরের নবগ্রাম-ঝিলপাড়ের কৃষ্ণা চক্রবর্তীর (৬২) মাথায় ফ্লুইড জমেছিল। গত বুধবার অস্ত্রোপচার হয়। বড় ছেলে ভাস্করবাবু বলেন, “বিষ ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মা মারা গেল। মাকে ওই হাসপাতালই খুন করল।”
মালদহের নেতাজি পুরবাজার এলাকার রাজা বসু অসুস্থ মা মীরাদেবীকে (৬৪) গত ২৯ নভেম্বর ভর্তি করিয়েছিলেন ওই হাসপাতালে। কলকাতাতেই থেকে গিয়েছিলেন রাজাবাবু। শুক্রবার সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘণ্টা পাঁচেক ধরে বহু খোঁজাখুঁজি করেও মায়ের খবর পাচ্ছিলেন না। হাতের কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে পেয়ে তাঁরই শরণাপন্ন হন। অবশেষে মর্গে মৃতদেহের ভিড়ে খুঁজে পান মা-কে। শনিবার মালদহে আনা হয় দেহ।
‘জতুগৃহ’ হাসপাতালে প্রাণ গিয়েছে রেলশহর খড়্গপুরের দুই বাসিন্দার। নভেম্বরে খড়্গপুর টাউন থানার সামনে পথ দুর্ঘটনায় মাথায় চোট পেয়েছিলেন রেলকর্মী ওয়াই গণেশ্বর রাও (৫৪)। ২৩ নভেম্বর থেকে ভর্তি ছিলেন ঢাকুরিয়ায় ওই হাসপাতালে। ২৮ তারিখ অস্ত্রোপচারও হয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলেন। কিন্তু শুক্রবারের সকাল সব আশাই ছাড়খাড় করে দিয়ে গিয়েছে রাও পরিবারের। মারা গিয়েছেন রেলশহরের প্রেমবাজারের নীলিমা পালিত (৬৮)। গলব্লাডারে স্টোন ছিল। অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। সোমবার কিংবা মঙ্গলবার ছুটি হয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাঁরও। তার আগেই ‘চির-ছুটি’ হয়ে গেল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.