আবার মেয়ে!
দ্বিতীয় বার কন্যা-সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর থেকেই স্ত্রীর উপর ‘রোষ-নজর’ পড়েছিল স্বামীর। প্রায় রোজই মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে শুরু হত অত্যাচার। শুক্রবার রাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই সময়ে আচমকাই নিজের মাস পাঁচেকের শিশুকন্যা সৃজাকে তুলে নিয়ে সজোরে আছাড় মারেন শ্যামল বিশ্বাস। পাড়া প্রতিবেশীরাই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন মেয়েটিকে। তবে ভর্তি করার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় সৃজা।
সৃজার মা দীপিকাদেবী বলেন,‘‘বিয়ের পর থেকে স্বামী প্রায়ই আমার উপরে অত্যাচার করতেন। রোজই মদ খেয়ে এসে মারধর করতেন। দ্বিতীয়বারও মেয়ে হওয়ার পর সেই অত্যাচার চরমে ওঠে।” শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই ‘চেনা-চেহারা’ নিয়েই ঘরে ঢুকেছিলেন শ্যামল। এই সময়ে বড় মেয়ে স্বস্তিকাকে নিয়ে এক প্রতিবেশীর বাড়ি পালিয়ে গিয়েছিলেন দীপিকা। তিনি বলেন, ‘‘আকন্ঠ মদ গিলে ও বাড়ি ফিরেছিল। শাশুড়ি সেই সময় সৃজাকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। মেয়েকে তাঁর কোল থেকে কেড়ে নিয়ে মেঝেতে আছাড় মারে বলে শুনেছি। ভাবতেই পারিনি মেয়েটাকে মেরেই ফেলবে! তা হলে কিছুতেই বাড়িতে রেখে আসতাম না।’’ ঘটনার পরেই কন্যা-হন্তা বাবার খোঁজ নেই।
নদিয়া জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমন মিশ্র বলেন, “মেয়েকে মেরে ফেলার অভিযোগ হয়েছে। লোকটির খোঁজে আশপাশের গ্রামেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।”
এ ঘটনা কি খুব স্বাভাবিক? নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন রীণা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও সমাজে মেয়েদের অবাঞ্ছিত বলেই মনে করা হয়। এই ঘটনা ফের তা প্রমাণ করল।’’ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নদিয়া জেলার সভাপতি রমা বিশ্বাসের কথাতেও একই সুর, ‘‘মেয়েরা এখনও সমাজের কাছে বোঝা। পারিবারিক স্তরে নারী পুরুষের যে বৈষম্য তা থেকেই এই ধরণের ঘটনার জন্ম হয়।’’ আর, নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি অর্চনা ঘোষ সরকার মনে করেন, এটা একটা সামাজিক ব্যাধি। |