সম্পাদকীয়...
অনর্থই অর্থ
বি জাভেদ আখতার সবিস্ময়ে প্রশ্ন করিয়াছেন, যে গানের সুর নিতান্ত সাধারণ, কথা নিম্ন স্তরের তাহার এমন আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তার কারণ কী? প্রশ্নটি ‘কোলাভেরি ডি’ নামক গানটি লইয়া। কেন একটি তামিল ছবির আপাত-অকিঞ্চিৎকর একটি গান এমন আন্তর্জাতিক উন্মাদনার কারণ হইয়া উঠিতে পারে, সেই প্রশ্নের উত্তর সংগীতের পরিধিতে পাওয়া যাইবে না। দুনিয়া অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর লইয়া চিন্তিতও নহে। বিশ্ব গানটির উদ্যাপনে ব্যস্ত। ভারতে তো বটেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হইতে জাপান পর্যন্ত সর্বত্র এই গানটির ‘রিমেক’ চলিতেছে, এবং অতি দ্রুত তাহা অন্তর্জাল বাহিত হইয়া শ্রোতার হাতে (বস্তুত, কম্পিউটারে) পৌঁছাইতেছে।
গানটির এমন জনপ্রিয়তার একটি কারণ নিঃসন্দেহে ইন্টারনেট। লং প্লেয়িং রেকর্ড হইতে অডিয়ো সিডি, প্রতিটি উপকরণের ক্ষেত্রেই সংগীতের সনাতনপন্থীরা একটি অভিযোগ করিয়াছেন এই মাধ্যমগুলি শ্রোতা হওয়ার সাধনাকে অপ্রাসঙ্গিক করিয়া ফেলিল। গান শুনিবার জন্য আসরে যাওয়ার প্রয়োজন নাই, অপেক্ষার প্রয়োজন নাই, অধিকার ভেদও নাই। ক্যাসেট বা সিডি কিনিয়া আনিতে পারিলেই শ্রোতা নিজের মর্জিমাফিক তাহার সুখী গৃহকোণে বসিয়া গান শুনিতে পারেন। এই প্রক্রিয়ার সমর্থকরা বলিবেন, ইহাতে গান সর্বজনীন হইয়াছে। আর সনাতনপন্থীরা বলিবেন, ইহাতে গানের জাত মারা গিয়াছে। কিন্তু, উভয় পক্ষই স্বীকার করিবেন, এই প্রক্রিয়াটি একেবারে নিখরচার নহে। একটি অডিয়ো সিডি কিনিতে পকেট হইতে নিদেনপক্ষে পঞ্চাশটি টাকা বাহির করিতে হয়। ফলে, কোনও গান শ্রবণযোগ্য অতএব ক্রয়যোগ্য কি না, শ্রোতা তাহা বিচার করিয়া দেখেন। ইন্টারনেটে এই অর্থমূল্য নাই। ‘কোলাভেরি ডি’ শুনিতে ইচ্ছা হইলে ইউটিউব খুলিলেই চলে। ফলে, নিতান্ত কৌতূহলের বশে, অন্যরা দেখিতেছে বলিয়া, অথবা অন্য কোনও কারণে মানুষ গানটি শুনিয়াছে।
ব্যাখ্যাটি জরুরি, কিন্তু যথেষ্ট নহে। অন্তর্জালে যখন সব গানই সমান লভ্য, তখন কেন এই বিশেষ গানটিই এমন তুঙ্গ জনপ্রিয়তা পাইল? উত্তরে বলা চলে, এই গানটি ‘টিপিং পয়েন্ট’-এ পৌঁছাইতে পারিয়াছে। গানটি যখন মুক্তি পাইল, তখন সম্ভবত এমন কিছু মানুষ গানটি শুনিয়াছিলেন এবং পছন্দ করিয়াছিলেন, যাঁহাদের বন্ধুর সংখ্যা এমন অন্যকে প্রভাবিত করিবার ক্ষমতা সাধারণের তুলনায় অধিক। ‘টিপিং পয়েন্ট’-এ পৌঁছাইবার ইহা আবশ্যিক শর্ত। তবুও একটি প্রশ্ন থাকিয়া যায় গানটির যদি কোনও অন্তর্নিহিত মূল্য না থাকিত, তবে কি তাহা ‘টিপিং পয়েন্ট’-এ পৌঁছাইত? না। গানটির যে অর্থহীনতা তাহাকে কখনও ‘চিরন্তন’ সংগীতের মর্যাদা পাইতে দিবে না, সম্ভবত তাহাই এই গানটির মূল্য। যাহাকে বলে ‘ননসেন্স ভ্যালু’। মানুষ তাহার প্রাত্যহিক চাপের ফাঁকে একটু হাসিতে চাহে। চিন্তাহীন, ভাবনাহীন এক-গান হাসি। এই গান, ‘অর্থহীন’ বলিয়াই, সেই নির্মল হাসির জোগান দিয়াছে। ‘টুনির মা’-ও স্মর্তব্য। মন্দ কী? ‘কেন এই কোলাভেরি ডি’, তাহা না জানিলেও চলিবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.