পুলিশের উপরে ভরসা না রেখে বেআইনি মদ বিক্রি বন্ধ করতে রীতিমতো সংগঠন গড়ে জোটবদ্ধ হলেন বিহারে মুজফ্ফরপুরের মহিলারা। নিত্যদিন নেশাগ্রস্ত স্বামীদের হাতে মার খাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে দেহাতে অধিকাংশ গৃহবধূরই। নিপীড়িত মহিলারা পুলিশের কাছে গিয়ে দেখেছেন, প্রতিকার কিছু মেলে না। বরং পুলিশেরই একাংশের মদতে চলে বেআইনি মদ বেচার ঢালাও অবস্থা। যত শীঘ্র সম্ভব বেআইনি মদের এই কারবার বন্ধ করতে মুজফফ্পুরের মুশাহারি ব্লকে তাই গঠিত হল ‘মহিলা অধিকার মোর্চা’। পুলিশ প্রশাসন ও বেআইনি মদ বিক্রেতাদের সতর্ক করতে মোর্চার উদ্যোগে আজ পথে বেরিয়েছিল মিছিলও।
সংগঠনের আহ্বায়ক গঙ্গাপুর গ্রামের কিরণ দেবী বলেন, “প্রায় প্রতিটি গ্রামে পুলিশের সামনেই বেআইনি মদ বিক্রি হয়। প্রশাসন নির্বিকার। এই মদ খেয়ে বাড়িতে এসে স্বামীরা নিত্যই স্ত্রীদের পেটায়। পুলিশের কাছে গেলে এ সবের কোনও প্রতিকার মেলে না। ঘরে ঘরেই এমন অভিজ্ঞতা। আমরা চাই, পুলিশের একাংশের যোগসাজসে বেআইনি মদ বেচার যে ঢালাও কারবার চলছে, তা বন্ধ করতে রাজ্য সরকার অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।”
কিরণ দেবী উদাহরণ হিসাবে বাস্তব একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। তাঁর কথায়, “আমারই গ্রামে সুনীতা দেবী নামে এক মহিলা মদ্যপ স্বামীর অত্যাচারে মারা গিয়েছেন। গ্রামের মহিলারা এর প্রতিবাদে মুখ খুললে তাঁদের লাঞ্ছিত হতে হয় স্বামীদের হাতে। অবস্থাটা এমন, সব সময় আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। অবস্থাটা পাল্টানোর সময় এসেছে। এ জন্যই আমাদের সংগঠন গড়া। এ দিন আমরা প্রথম ‘মহিলা অধিকার মোর্চা’র তরফে মিছিল বের করে এলাকার মহিলাদের কাছে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি। আমরা চাই প্রতিবাদ জানাতে আরও বেশি মহিলা এই সংগঠনে সামিল হোন।”
তাঁরা যে আর এমন বেআইনি মদের কারবার ও স্বামীর প্রহার সহ্য করতে রাজি নয় তার আভাস মিলল মোর্চার অন্যতম সদস্য রেণু দেবীর কখাতেও। রেণু দেবী বলেন, “মেয়েরা অনেক সহ্য করেছে, আর নয়। ভয় পেলে আর চলবে না। একই সঙ্গে আমরা পুলিশ ও বেআইনি মদ ব্যবসায়ীদেরও সতর্ক করতে চাইছি, এ সব আর চলতে দেওয়া হবে না।”
মোর্চা ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে এলাকার গ্রামগুলিতে। আশপাশে গঙ্গাপুর, নরোলি, মনিকা, রাজওরা-সহ সাতটি গ্রামের বেশ কিছু মহিলা এই সংগঠনের সদস্য হয়েছেন। কিরণ দেবী বলেন, “মুশাহারি ব্লকের কোথায় কোথায় বেআইনি মদের ঘাঁটি আছে তার একটি তালিকা আমরা প্রশাসনকে দিয়েছি। ” |