কোমায় হাসপাতাল ২...
নেই পরিকাঠামো, চিকিৎসকেরা ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার
ল্যাণী রেল স্টেশনের কাছেই গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল। হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য রাজ্যের একমাত্র কার্ডিও থোরাসিক রেফারেল হাসপাতাল। বিভিন্ন রাজ্য এমনকী প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকেও অসংখ্য হৃদরোগী প্রতিদিন ভিড় জমান এখানে। নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে হৃদরোগে আক্রান্তদের এই হাসপাতালে রেফার হয়ে আসার কথা। এ ছাড়া বুকে ব্যাথা নিয়ে সরাসরি অনেক রোগীও এখানে ভর্তি হতে আসেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়েই ক্ষুব্ধ সেখানকার চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালে শয্যার অভাব নেই। ওষুধেরও ঘাটতি নেই। ঘাটতি রয়েছে চিকিৎসক আর চিকিৎসা কর্মীর। প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাবে চিকিৎসার জন্য আনা আধুনিক যন্ত্রপাতি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ইতিমধ্যেই খারাপ হয়ে গিয়েছে। সাড়ে তিনশো শয্যার এই হাসপাতালে কাগজে-কলমে চিকিৎসক সাকুল্যে ২৭ জন। এর মধ্যে প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখায় ব্যস্ত থাকতে হয় হাসপাতালের সুপারকে। একজন প্যাথলজিস্ট। একজন বায়োকেমিস্ট। মেডিক্যাল অফিসারদের মধ্যে একজন আবার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। হৃদরোগের হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের চেয়ে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ যে বেশি জরুরি সে ব্যাপারে বার বার দাবি জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। মেডিক্যাল অফিসারের অভাবে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক বন্ধ। প্রতিদিন বহির্বিভাগেই রোগীর চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। সবেধন নীলমণি একজন মাত্র কার্ডিওলজিস্ট। রোগীদের সামলাতে সামলাতে দম ফেলার ফুরসত পান না তিনি। এই অবস্থায় স্বেচ্ছা অবসরের জন্য আবেদন জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক অবসর নিয়েছেন। সে সব শূন্যপদ আজও শূন্যও থেকে গিয়েছে। আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে আরও কয়েকজন চিকিৎসক অবসর নেবেন। এই পরিস্থিতিতে নতুন নিয়োগ না হলে এরপরে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা মুখ থুবড়ে পড়বে বলে চিকিৎসকদের দাবি।
নিজস্ব চিত্র।
হৃদরোগের জটিল চিকিৎসা মানেই তা অপারেশন থিয়েটার পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু এই হাসপাতালে সার্জেন মাত্র তিনজন। বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে তাঁরাও অসন্তুষ্ট। চিকিৎসকের অভাবে রোগীকে স্যালাইন, ইঞ্জেকশন দিতে ডাকতে হয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের। সার্জেন কম থাকায় অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হওয়া রোগীদের মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হয়। হাসপাতালে দু’টি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও দক্ষ যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী না থাকায় সপ্তাহে দু’-তিনটির বেশি অস্ত্রোপচার হয় না। অস্ত্রোপচারের পরবর্তী সময়ে আইসিসিইউতে রোগীদের কড়া নজরে রাখার জন্য অন্তত ৬ জন মেডিক্যাল অফিসারের থাকার কথা থাকলেও সেই শূন্য পদে নিয়োগ হয়নি গত দশ বছরে। ফলে সার্জেনরা কয়েকজন নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদেরই প্রশিক্ষণ দিয়ে কোনওরকমে অপারেশন ও তার পরবর্তী পর্যায়গুলি সামাল দেন।
হাসপাতালের প্রবীণ কার্ডিও থোরাসিক সার্জেন সুবলকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, “হৃদরোগের ক্ষেত্রে যে কোনও মুহূর্তে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে খুব বেশি হলে তিন মিনিট সময় পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে ঢাল, তলোয়ার হীন নিধিরাম সর্দারের মতো অবস্থা আমাদের। রোগীরা অপেক্ষা করতে করতে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন। চলে যাচ্ছেন। আমরাও অতিরিক্ত চিকিৎসকের দাবি জানাতে জানাতে ক্লান্ত। যাঁরা কাজ করছি, এক মুহূর্তও বিশ্রাম পাচ্ছি না। হাসপাতালের ভিতরের এই ছবিটা দেখবে কে? হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। রোগী ভর্তি হওয়ার পরে অপারেশনের অপেক্ষায় দিনের পর দিন পড়ে আছে এটাই বাইরে থেকে চোখে পড়ে।’’
পরিকাঠামোর এমন করুণ অবস্থায় রেফারাল হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীরা নিজেরাই রেফার হয়ে যান অন্য হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে। তবে চিকিৎসকের সংখ্যার অপ্রতুলতার পাশাপাশি কিছু চিকিসকের বিরুদ্ধে কর্তব্যে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগও যথারীতি রয়েছে। হাসপাতালের নানা অব্যবস্থার দোহাই দিয়ে হাসপাতালে সময় না দিয়ে বেশি টাকা রোজগারের জন্য নার্সিংহোমে সময় দেন কয়েকজন চিকিৎসক। এমনকী অপারেশনের জন্য আসা রোগীদেরও নার্সিংহোমে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
হাসপাতালের সুপার কালীকিঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘এমন দু’-একজন চিকিসক সব হাসপাতালেই আছেন। এখানেও তার ব্যাতিক্রম নয়। তবে এটা তো বিশেষ ধরনের হাসপাতাল। সেই কারণে একটু বেশি সচেতন থাকার প্রয়োজন সবসময়। পেসমেকার বসানোর যন্ত্র-সহ কিছু যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। তাই জটিল অস্ত্রোপচার হলে আমরা কলকাতায় রেফার করতে বাধ্য হই।’’ কল্যাণীর মহকুমাশাসক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শৈবাল চক্রবর্তী বলেন, “হাসপাতালে সমস্যা রয়েছে এটা ঠিক। কয়েকজন চিকিৎসক নিশ্চয়ই কাজ করেন। কিন্তু সকলে মিলে চেষ্টা করলে এই পরিকাঠামোতেও কি আর একটু ভাল পরিষেবা দেওয়া যেত না? চিকিৎসক যেমন প্রয়োজন, তেমনি যাঁরা আছেন, তাঁদের কাজের মানসিকতারও পরিবর্তনের প্রয়োজন।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.