শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-এর শয্যা থেকে পড়ে গুরুতর জখম হওয়ার ৩ দিনের মাথায় মৃত্যু হল ফুলমায়া রুচালের (৭২)। মঙ্গলবার গভীর রাতে সেবক রোডের একটি নার্সিংহোমে তাঁর মৃত্যু হয়। কার্শিয়াঙের বাসিন্দা ফুলমায়া দেবী গত রবিবার দুপুরে হাসপাতালের শয্যা থেকে পড়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। হাসপাতালে যান শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টু পাল, শিলিগুড়ির বিধায়ক তথ্য বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। রুদ্রবাবুর হস্তক্ষেপে রোগিণীর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে সোমবার তাঁকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবার শিলিগুড়ি থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার মেয়ে সুমিত্রা রুচাল। মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। এ দিন নার্সিংহোমে গিয়ে মৃতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন, সমবেদনা জানান তিনি। মন্ত্রিত্ব পেয়ে একাধিকবার পরিদর্শন করে গৌতমবাবু শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের পরিষেবার হাল ফেরাতে সচেষ্ট হন। তার পরেও এ ঘটনার জন্য এ দিন নার্সিংহোমে গিয়ে মৃতার পরিবারের লোকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমাও চান মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, “ঘটনাটি বেদনাদায়ক। তার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি সিসিইউতে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী যাঁদের থাকার কথা তাঁরা থাকলে এমন ঘটনা হওয়ার কথা নয়। ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। কারও অবহেলায় এটা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |
আগেই কিছু বলছি না। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হোক। রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, হাসপাতালের হাল ফেরাতে তিনি সচেষ্ট। এই ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সিসিইউ ইউনিটের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থাটির সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন। ঘটনার পরই হাসপাতালে একাধিকবার গিয়েছিলেন নান্টুবাবু। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার সময় এক জন নার্স ছাড়া সিসিইউতে কেউ ছিলেন না। বেসরকারি সংস্থা রবীন্দ্রনাথ টেগোর হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে এই সিসিইউ চলছে। সেখানে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে অন্তত ৬ জন থাকার কথা। রবিবার দুপুরে শয্যা থেকে পড়ে গেলেও তাঁদের বিষয়টি জানানো হয়নি। রোগীর সঙ্গে দেখা করার সময় তাঁকে অচৈতন্য অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। কপালে আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ হয়। অথচ সকালে রোগিণীকে সুস্থ দেখে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরা। খোঁজ করতে গিয়ে তাঁরা জনতে পারেন শয্যা থেকে ফুলমায়াদেবী পড়ে গিয়েছিলেন। কর্তব্যরত নার্সও অনেক পরে গিয়ে তাঁকে তুলেছেন। শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান নান্টুবাবু বলেন, “ঘটনার পর হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সুপার ব্যস্ত থাকায় দেখা করতে চাননি। পরে ফোনে কর্তব্যরত চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের নাম জানতে চেয়েছিলাম। জানানো হয়নি। হাসপাতালের সুপার যদি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চান তা হলে ভুল করছেন। আমরা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি।” হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার প্রদীপ সরকার জানান, ধামাচাপা দেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। তিনি বলেন, “রোগিণী শয্যা থেকে পড়ে যাবেন এটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। দ্রুত তদন্ত শেষ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ফুলমায়া দেবীর মেয়ে সুমিত্রা বলেছেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্যই এমনটা ঘটেছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা ছিলেন না। অভিযুক্তদের শাস্তির দেওয়া হোক। যাতে আর কারও ক্ষেত্রে এমন না হয়।” |