এক স্কুলশিক্ষিকার স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্ট চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেটা পাঠানোও হল। কিন্তু হাসপাতালের প্যাডে নয়। স্রেফ সাদা কাগজে ওই শিক্ষিকার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে হাতে লেখা একটি রিপোর্ট হাইকোর্টে পাঠিয়ে দিল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম!
ওই শিক্ষিকা সত্যিই অসুস্থ কি না, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে তা পরীক্ষা করে আদালতকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কিন্তু প্যাডের বদলে সাদা কাগজে লেখা রিপোর্টে এসএসকেএম হাসপাতাল যা জানাল, তাতে বিভ্রান্তি তো কাটলই না। বরং তা আরও বেড়ে গেল বলেই মনে করছেন আইনজীবীরা।
ভোটের কাজে যোগ দিতে না-পারার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নের মুখে পড়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কমলা গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা নূপুর মুখোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে ডিউটি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ওই শিক্ষিকা নির্বাচনের কাজে যোগ দেননি। তাই তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় কমিশন।
নূপুরদেবী নির্বাচন কমিশনের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। তাঁর বক্তব্য, আগে একাধিক বার তিনি নির্বাচনের কাজে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু এ বার শরীর সহযোগিতা করেনি। তাই তিনি দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের কাজে যেতে পারেননি। ওই শিক্ষিকাকে পরীক্ষা করে দেখার পরে বিচার করার জন্য ডিভিশন বেঞ্চের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন রাজ্যের অতিরিক্ত জিপি তপন মুখোপাধ্যায়। তার পরেই নূপুরদেবীকে পরীক্ষা করে তিনি কতটা অসুস্থ, তা জানানোর জন্য এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল এবং বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ।
এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার প্রভাস চক্রবর্তী বুধবার সাদা কাগজে হাতে লিখে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন হাইকোর্টে। যিনি রিপোর্টটি নিয়ে এসেছিলেন, তাঁর কাছে তপনবাবু জানতে চান, প্রধান বিচারপতির কাছে এমন হাতে লেখা একটি রিপোর্ট পাঠানো হল কেন? সেই প্রশ্নের জবাব পাননি তপনবাবু।
কী আছে ওই রিপোর্টে?
হাসপাতাল সূত্রের খবর, অর্থোপেডিক, মেডিসিন, গাইনি, নিউরোলজি, রেসপিরেটরি মেডিসিনের চিকিৎসকেরা ওই শিক্ষিকাকে পরীক্ষা করেছেন। তার পরে বলা হয়েছে, প্রথমে পুরো মেরুদণ্ডের এমআরআই করাতে হবে। তারও পরে ডিজিটাল এক্স-রে করাতে হবে মেরুদণ্ডের নির্দিষ্ট অংশের। এর পরের দফায় করতে হবে লোয়ার অ্যাবডোমেন এবং পেলভিসের আলট্রাসনোগ্রাফি, পালমোনারি ফাংশনাল টেস্ট। এখানেই শেষ নয়। এর পরে রয়েছে বুকের ডিজিটাল এক্স-রে। এই সব পরীক্ষার পরেও হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ নূপুরদেবীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন কি না, তা অবশ্য এ দিন বোঝা যায়নি। কারণ, আরও কয়েকটি পরীক্ষার সুপারিশ করেছে হাসপাতাল। তার মধ্যে রয়েছে সিটি স্ক্যান, রক্ত ও মূত্রের কিছু পরীক্ষাও।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই সব পরীক্ষা শেষ হলে তবেই নূপুরদেবীর অসুস্থতা নিয়ে মতামত দেওয়া যাবে। তখনই বলা যাবে, তিনি নির্বাচনের সময় সুস্থ না অসুস্থ ছিলেন।
সুপারের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই অতিরিক্ত জিপি হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান, এই সব পরীক্ষার খরচ কে দেবে?
হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, এক জন শিক্ষিকা কোনও ভাবেই বিপিএল বা দারিদ্রসীমার আওতায় পড়েন না। তাই সরকারি হাসপাতাল বিনামূল্যে কিছু করতে পারবে না। হাসপাতালের ওই রিপোর্ট এবং এই সব প্রশ্ন নিয়েই |আজ, বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সওয়াল হবে। ওই সব পরীক্ষা করার জন্য কিছুটা সময় লাগবে। প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচনের দিন মহিলা অসুস্থ ছিলেন কি না, এতটা সময় কেটে যাওয়ার পরে সেটা বোঝা যাবে কী ভাবে? |