হৈমন্তীকে সুস্থ করে তুলতে মরিয়া সহপাঠীরা
পুরুলিয়ার হৈমন্তী ঘোষ আর ঝাড়গ্রামের সুব্রত বারিকের মধ্যে একটাই মিল। দু’জনেরই আছে কিছু নাছোড় সহপাঠী, যারা বলতে ভালবাসে, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু।’
শুধু বলেই না, সহপাঠীর মুঠির উপর চেপে রাখে নিজেদের হাত, যাতে বেয়াড়া হাল ফস্কে না যায়। দু’জনের শরীরেই কঠিন রোগ। সুব্রতের ক্যানসার আর হৈমন্তীর ফ্যানকনি অ্যানিমিয়া। সুব্রতের সহপাঠীরা পুজোর জামাকাপড় না-কিনে টাকা জোগাড় করেছিল বন্ধুর চিকিৎসার জন্য, হৈমন্তীর বন্ধু অনুরাগ সিংহ, সন্দীপ তিরকি, মনোজিৎ রোশনেরাও কচি হাতে টাকা জোগাড় করছে। তাদের একটাই কথা, “আমরা হৈমন্তীকে হারতে দেব না।” এই হেমন্তে ওই কচিকাঁচারাই নতুন জীবনের পোস্টম্যান। হৈমন্তীকে সুস্থ জীবনের ঠিকানা খুঁজে দিতে তারা চেষ্টা করছে আপ্রাণ।
হৈমন্তীর বাবা দেবাশিস ঘোষ অবশ্য আদতে উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। তিনি পুরুলিয়ার সৈনিক স্কুলের কর্মী। তাঁর বড় মেয়ে হৈমন্তী ওই স্কুলেরই সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। সে আবাসনে থেকে পড়াশুনো করে। দেবাশিসবাবু জানান, হৈমন্তী এবং ছোট ছেলে দীপ্তাংশুকে নিয়ে তাঁদের ছোট সংসার। ২০০৪ সালের অগস্ট মাসে হৈমন্তীর শরীরে ধরা পড়ল ‘ফ্যানকনি অ্যানিমিয়া’। দেবাশিসবাবুর স্ত্রী দেবী ঘোষ বলেন, “জন্মের সময় থেকে মেয়ের ওজন কম ছিল। খুব সর্দি-কাশিতে ভুগত। পুরুলিয়া, কলকাতা-সহ নানা জায়গায় দেখানো হয়েছে। কিন্তু সে ভাল হয়নি। পরে ভেলোরে মেয়েকে নিয়ে যাই। সেখানেই ধরা পড়ে মেয়ের ফ্যানকনি অ্যানিমিয়া।”
ওই রোগটা আসলে কী, সে সম্পর্কে ওই ঘোষ দম্পতির কোনও ধারণা ছিল না। দেবাশিসবাবুর কথায়, “ভেলোরের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই রোগ হলে হিমোগ্লোবিন কমতে শুরু করে। পাশাপাশি লোহিত কণিকা, শ্বেতকণিকাও তৈরি হয় না। একমাত্র বোনম্যারো (অস্থিমজ্জা) বদল করা হলে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব।
বন্ধুদের সঙ্গে হৈমন্তী (বাঁ দিকে)। ছবি: সুজিত মাহাতো
ছেলের অস্থিমজ্জা দেওয়া যেত। কিন্তু তার সঙ্গে মিলল না। আমাদের দেশে কোথাও বোনম্যারো ব্যাঙ্ক নেই। জার্মানিতে এই ব্যাঙ্ক রয়েছে। সেখানে এক জনের সঙ্গে আমার মেয়ের মজ্জার মিল হয়েছে। কলকাতার একটি নার্সিংহোমের মাধ্যমে মজ্জা আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জানুয়ারিতে তা মেয়ের শরীরে দেওয়া হবে।”
কিন্তু এর জন্য প্রচুর খরচ। মা দেবী ঘোষের কথায়, “কড়া কড়া ওষুধ খাইয়ে মেয়েকে বাঁচিয়ে রেখেছি। একটুতে হাঁপিয়ে যায়। আগে এক মাসের কিছু বেশি সময় অন্তর রক্ত দিতে হত। এখন ২১ দিন অন্তর রক্ত দিতে হয়। এই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য গত সেপ্টেম্বরে টেলিগ্রাফ স্কুল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। তবে মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে প্রায় ২৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। এত টাকা পাব কোথায়? পাগলের মতো আত্মীয়-পরিজন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ছুটেছি। মুখ্যমন্ত্রীর হাতেও সাহায্য চেয়ে আবেদনপত্র তুলে দিয়েছি।”
এই অবস্থায় হৈমন্তী ও তার বাবা-মাকে ভেঙে পড়তে দেয়নি ওয়াঙ্গেল দোরজে লামা, মুকুন্দ মাহাতো, বিশাল কুমাররা। তারা সকলেই হৈমন্তীর সহপাঠী। কেউ কলকাতার, কেউ বিহারের, কেউ শিলিগুড়ির বাসিন্দা। তাদের কথায়, “আমরা আমাদের হাতখরচ বাঁচিয়ে এবং বাবা-মাকে বন্ধুর কথা বলে ওর জন্য টাকা সংগ্রহ করছি।” আর এক সহপাঠী রিয়া ঠাকুর বলে, ‘‘আমিও নিজের হাতখরচ বাঁচিয়ে, বাবা-মার কাছ থেকে চেয়ে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। আর ঈশ্বরকে বলছি, ওকে যেন সুস্থ করে দেয়।”
হৈমন্তীর সহপাঠীদের পাশাপাশি পুরুলিয়া শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়ারাও তার চিকিৎসার জন্য ৬১ হাজার টাকা তুলে দিয়েছে। সৈনিক স্কুলও সাহায্য করেছে। পুরুলিয়া শহরের মহিলা পরিচালিত একটি দুর্গাপুজো কমিটি পুজোর খরচ বাঁচিয়ে ৪০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছে। আদ্রা ডিভিশনের রেলকর্তারাও তুলে দিয়েছেন লক্ষাধিক টাকা। আদ্রার ডিআরএম অমিতকুমার হালদার বলেন, “মেয়েটির সমস্যার কথা শুনে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।” কী বলছে হৈমন্তী? তার কথায়, “সকলে যে ভাবে লড়াই করছেন আমি ভাল হবই। বন্ধুরা খুব ভাল। ওদের জন্যই আমি ভাল হয়ে উঠব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.