দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, প্রোমোটারির সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের লোকাল বা জোনাল কমিটি থেকে বাদ দিতে ‘ফতোয়া’, বয়স্ক-অসুস্থদের বাদ দিয়ে তুলনায় তরুণদের কমিটিতে আনা এবং কমিটি গঠনে ‘ভোটাভুটি’ এড়ানো কোনও ক্ষেত্রেই আলিমুদ্দিনের নির্দেশ মানা হচ্ছে না বলে দেখতে পাচ্ছে সিপিএম। কলকাতা-সহ লাগোয়া জেলাগুলি থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টে আলিমুদ্দিনের কাছে সেই বিষয়টি স্পষ্ট।
দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা তো বটেই, ‘সর্বসম্মত কমিটি’ তৈরির নামে বহু জায়গায় বয়স্ক ও অসুস্থরা রয়ে যাচ্ছেন। কলকাতা ও জেলা-শহর তো বটেই, গ্রামাঞ্চলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে কমিটি গঠনে ভোটাভুটি হচ্ছে। ভোটাভুটির জন্য সম্মেলনের দিন পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে আজ, বৃহস্পতিবার সিপিএমের এক দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে। অধিকাংশ জায়গাতেই লোকাল কমিটির সম্মেলন হয়ে গিয়েছে। বহু জোনাল সম্মেলনও শেষ। কিন্তু দলের একাংশ বলছে, সম্মেলনে মতাদর্শগত প্রশ্নকে যে ভাবে তুলে ধরতে বলা হয়েছিল, অনেক ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। বরং, কোন গোষ্ঠীর প্রাধান্য বজায় থাকবে, অনেক সময় সে প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।
রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে জেলা-নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হবে বলেই দলীয় সূত্রের খবর। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বুধবার বলেন, “সম্মেলন-প্রক্রিয়া কেমন চলছে, বৈঠকে মূলত তা নিয়েই আলোচনা হবে। দক্ষিণ কলকাতার ফলাফল নিয়েও আলোচনা হবে।” সম্মেলন-প্রক্রিয়ায় আলিমুদ্দিনের ‘ফতোয়া’ অমান্য করার প্রসঙ্গে রবীনবাবু বলেন, “এ ব্যাপারে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলতে পারেন।” দলীয় সূত্রের খবর, বিমানবাবু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নিরুপম সেন, গৌতম দেব প্রমুখ বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
যাঁর ভাবমূর্তি নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন আছে, দুর্নীতির দায়ে যাঁর বিরুদ্ধে দলই তদন্ত কমিশন গঠন করেছে, তিনি লোকাল বা জোনাল কমিটির সদস্য হলে কি তাঁর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিতে পারবে? সিপিএম নেতারা কেউ এর স্পষ্ট জবাব দিচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ নিয়েও আলোচনা হতে পারে। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে রবীনবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র ভবানীপুরে দু’ মাসের মধ্যে তৃণমূলের ভোট কমেছে প্রায় ৯%। পক্ষান্তরে, বামফ্রন্টের ভোট বেড়েছে প্রায় ৮%।” রবীনবাবুর হিসাব অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর ভবানীপুরে উপ নির্বাচনে মমতা পেয়েছিলেন প্রায় ৭৮% ভোট। সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন মাত্র ২০% ভোট। এ বার ওই বিধানসভা কেন্দ্রে সুব্রত বক্সি পেয়েছেন ৬৯% ভোট। সিপিএম প্রার্থী পেয়েছেন ২৮.৫% ভোট। যা মে মাসের বিধানসভা ভোটের তুলনায় কিঞ্চিৎ বেশি। রবীনবাবুর দাবি, সরকারের কাজকর্মে মানুষের মধ্যে যে ‘অসন্তোষ’ সৃষ্টি হচ্ছে, এই ফল তারই প্রমাণ। তৃণমূলের ব্যাখ্যা, দু’মাস আগে মমতা নিজে প্রার্থী থাকায় ভোটের হার বেড়েছিল। বাস্তবে এই কেন্দ্রে ২৮%-এর মতো ভোটই বামেদের রয়েছে। |