জঙ্গলমহল ও পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলির উন্নয়নে আজই প্রায় ন’হাজার কোটি টাকার ‘বিশেষ যোজনায়’ অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটি। একই সঙ্গে একশ দিনের কাজের প্রকল্পে আগের অর্থ খরচ করতে না পারার জন্য রাজ্য সরকারকে দুষে কেন্দ্র জানাল, যোজনার অর্থ যাতে সঠিক ভাবে খরচ হয়, উন্নয়নের কাজ যাতে সময়ে শেষ হয়, মুখ্যমন্ত্রীকে সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
জঙ্গলমহল সহ পশ্চিমবঙ্গের অনগ্রসর এলাকাগুলির উন্নয়নের জন্য বিশেষ যোজনায় ৮৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব নিয়ে আজ মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠকে সবিস্তার আলোচনা হয়। রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দীনেশ ত্রিবেদীও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে সংসদের অধিবেশন চালু থাকায় যোজনায় ছাড়পত্র দেওয়ার ঘোষণা আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে করা হয়নি। |
পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য এক দিকে এ ভাবে সাহায্যের হাত বাড়ালেও, উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণের দিকেও যে কেন্দ্র নজর রাখছে, তা মমতাকে পাঠানো জয়রামের চিঠিতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মমতা দিদি’ বলে সম্বোধন করেও পশ্চিমবঙ্গে একশ দিনের কাজ প্রকল্পটি রূপায়ণের ত্রুটিগুলি চিঠিতে সুনির্দিষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন জয়রাম।
চিঠিতে বলা হয়েছে, একশ দিন সুনিশ্চিত কর্মসংস্থানের প্রকল্পে গত আর্থিক বছরের অব্যহৃত ২৪৭ কোটি টাকা ও চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ১২৮৪ কোটি টাকা-সহ রাজ্যের হাতে এ বছর মোট ১৮২৩ কোটি টাকা ছিল। কিন্তু তার মধ্যে ৯০০ কোটি টাকাই এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকার ব্যবহার করে উঠতে পারেনি। জয়রাম বলেছেন, ‘ওই টাকা ব্যবহার করে মানুষকে কাজ দেওয়ার জন্য রাজ্যকে আরও সক্রিয় হতে হবে।’ এ ছাড়া চলতি আর্থিক বছরে কেন্দ্রের কাছ থেকে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়ার জন্য রাজ্য সব রকম শর্ত সময়ের মধ্যে পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বলেছেন, আশা করা যায় সেই প্রতিশ্রুতি পালনে সচেষ্ট হবে রাজ্য সরকার।
জয়রাম লিখেছেন, তথ্য থেকে পরিষ্কার যে পশ্চিমবঙ্গে একশ দিনের কাজে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার আশাপ্রদ নয়। এ ক্ষেত্রে জাতীয় গড় যখন ৪৮ শতাংশ, তখন পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার মাত্র ৩৪ শতাংশ।
একশো দিনের কাজ প্রকল্পটির সুষ্ঠু রূপায়ণের জন্য কেন্দ্র-রাজ্য আরও সমন্বয় জরুরি বলেও মন্তব্য করেছেন জয়রাম। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিষয়টি দেখভালের জন্য রাজ্য স্তরে এক জন কমিশনার থাকার কথা। কিন্তু এক বছর ধরে সেই পদ শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, একশ দিনের কাজ প্রকল্পটিকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের জমিতে উৎপাদন বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে তফসিলি জাতি, উপজাতি ও দারিদ্রসীমার নীচে থাকা চাষিরাও রয়েছেন। এ জন্য সময় বেঁধে সমীক্ষা ও তার রূপায়ণ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। সব শেষে চিঠিতে জয়রাম ‘মমতা দিদি’কে বলেছেন, ‘আশা করি আপনি এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন ও যাতে দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগোয়, সে ব্যাপারে নজর দেবেন। একশ দিনের কাজ প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গকে গোটা দেশের মধ্যে ‘মডেল’ হিসাবে তুলে ধরতে রাজ্যের প্রয়াসকে পূর্ণ সাহায্য করতে ত্রুটি রাখবে না কেন্দ্র।’ |