তাড়াতাড়ি সেরে ওঠো। ফিরে এসো ক্রিজে।
দুর্গাপুর জুড়ে শুধু এমনই প্রার্থনা।
মঙ্গলবার দুপুরে ইডেনে রঞ্জি ম্যাচে দুর্ঘটনার খবরটা আসতেই সকলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষত বেনাচিতির বাসিন্দারা। প্রথমে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের পর্দায় ভেসে ওঠে, ‘বাংলার রোহন বন্দ্যোপাধ্যায় জখম’। কিছু ক্ষণের মধ্যে ভেসে আসে ছবি, চেয়ারে বসিয়ে সংজ্ঞাহীন রোহন বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ যে আমাদেরই রোহন!
শিউরে উঠেছিলেন বেনাচিতির নিবেদিতা প্লেসের পড়শিরা। দু’বছর আগে রোহনরা যেখানে থাকতেন, সেই রামকৃষ্ণপল্লিতেও তখন উৎকণ্ঠায় ছোটবেলার বন্ধু থেকে পাড়ার কাকু, সকলেই। কেউই মুখ ফুটে বলতে পারছিলেন না, কিন্তু অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছিল ১৯৯৮-এ ঢাকার মাঠে মাথায় বল লেগে রমন লাম্বার মৃত্যুর কথা।
তুলনাটা মনে আসারাই কথা। ফেব্রুয়ারির সেই শেষ শীতের দুপুরে ফরওয়ার্ড শর্ট লেগে দাঁড়ানো রমন লাম্বার মাথায় সপাটে এসে লেগেছিল লাল বল। হেলমেট ছিল না। ভাগ্য ভাল, বল রোহনের মাথায় লাগেনি। তামিলনাড়ুর সঙ্গে ম্যাচে অভিনব মুকুন্দের জোরালো ফ্লিক গিয়ে লাগে তাঁর তলপেটে। বুধবারও তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তবে প্রাণের ঝুঁকি নেই বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। |
বাঁ হাতি রোহনের ব্যাটে রানের ফুলঝুরি শুরু হয়েছিল বেনাচিতির মাঠ থেকেই। ২০০৬ সালে জাতীয় অ্যাকাডেমির হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিরুদ্ধে করেছিলেন ১৮৫। তার আগে ইডেনে কোচবিহার ট্রফিতে সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে করেন ১৭১। ইডেনেই একদিনের ম্যাচে ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি। ২০০৭-এ অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় দলের হয়ে তিন দিনের ম্যাচে খেলার সুযোগ পান। পরের বছর ডাক পান কলকাতা নাইট রাইডার্সে। যদিও কোনও ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। ডান হাতি অফ স্পিনেও দক্ষ বছর তেইশের রোহন ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ফেলেছেন।
রোহনের বাবা ব্রিজেশবাবু ইসিএলের কর্মী। মা সাধনাদেবী গৃহবধূ। বেনাচিতির রামকৃষ্ণপল্লিতে ভাড়াবাড়িতে থাকতেন তাঁরা। স্থানীয় বিবেকানন্দ হাইস্কুলে পড়াশোনা রোহনের। বড় হয়েছেন দুর্গাপুর ক্রিকেট ক্লাবে (ডিসিসি) খেলে। দুর্গাপুর এলে এখনও যান পুরনো ক্লাবে। এমনও হয়েছে, দুর্গাপুরে এসে মহকুমা সুপার লিগে ক্লাবের হয়ে নেমে পড়েছেন তিনি। আবার রাতের ট্রেন ধরে ফিরে গিয়েছেন কলকাতায়।
রোহনের জখম হওয়ার খবরে উদ্বিগ্ন তাঁর পুরনো কোচ শিবনাথ রায় এবং দাদন সিংহ। শিবনাথবাবু বলেন, ‘‘রোহন বড় প্রতিভা। বহু দূর যাবে। আমরা শুধু চাই, ও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।’’ বেনাচিতির রামকৃষ্ণপল্লি স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি সমীরকুমার বড়ুয়ার কথায়, “বড় ভাল ছেলে রোহন। খবরটা শোনার পর থেকে মনটা খারাপ হয়ে রয়েছে।” রোহনের পুরনো পাড়ার বাসিন্দা তনয় সরকারের কথায়, “ছোটবেলায় পাড়ায় আমাদের সঙ্গে খেলত। সুস্থ হয়ে দলে যোগ দিক। এক দিন ও ঠিক জাতীয় দলে খেলবে।”এখন শুধু অপেক্ষা, কবে রোহন বাইশ গজে ফেরেন। |