উপরের স্কোরলাইন দেখলে মনে হতেই পারে ভারত হেসেখেলে সাফ ফুটবলের সেমিফাইনালে উঠেছে। কিন্তু টুর্নামেন্টের অন্দরে ঢুকলে যে উল্টো ছবিটাই নজরে আসছে! সুনীল-নবি-জেজেরা খেলছেন ঘরের মাঠে। আর তাঁদের গ্রুপেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে এক নম্বর দল হিসেবে শেষ চারে উঠল আফগানিস্তান। দু’দেশের পয়েন্টই সমান। ৩ ম্যাচে ৭। কিন্তু দিনের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ৮-১ গোলে চুরমার করে গোলপার্থক্যে অনেক এগিয়ে থেকে ভারতকে টপকে গেলেন আফগানরা। তাদের ৮-১ জয় আফগানিস্তান ফুটবল ইতিহাসেই বৃহত্তম।
শুক্রবারের প্রথম সেমিফাইনালে ভারত খেলবে মলদ্বীপের বিরুদ্ধে। যথেষ্ট কঠিন লড়াই। মলদ্বীপের আলি আসফাক-ই এই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় তারকা। মালয়েশিয়ান লিগে খেলেছেন। বেনফিকা, পোর্তো থেকে খেলার ডাক পেয়েছিলেন। দেশের বাইরে বেশি দিন থাকতে অপছন্দ বলে যাননি। অন্য সেমিফাইনালে আফগানিস্তান মুখোমুখি নেপালের।
কাবুলে গতকালের ভয়াবহ বিস্ফোরণে আফগানিস্তান দলের সদস্য মুস্তাফা মাসানি-র চার ভাইপো মারা যাওয়ার খবরে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যান তিনি। বাকরুদ্ধ তাঁকে টিম হোটেলে রেখে আজ মাঠে নেমেছিল আফগান দল। আজকের ঐতিহাসিক জয়কে তাঁরা উৎসর্গ করলেন বিস্ফোরণে মৃতদের উদ্দেশ্যে। “ওদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতেই আমরা সাফ কাপ জিতে কাবুল ফিরতে চাই,” বললেন আফগানিস্তান অধিনায়ক বলাল আরেজো যিনি এ দিন দলের আট গোলের মধ্যে একাই করেন চার গোল। |
আগের ম্যাচে আফগানিদের বিরাট ব্যবধানে জয়ের কথা মাথায় রেখেই ভারতীয় দলে কোনও পরিবর্তন ঘটাননি স্যাভিও। সেরা এগারোকেই নামান শুরুতে। কিন্তু বল পজেশন শুরু থেকে বেশি রেখেও হাফটাইম পর্যন্ত গোল করা তো দূর অস্ত্, শ্রীলঙ্কার গোল-মুখই খুলতে পারেননি ক্লাইম্যাক্স, স্টিভন ডায়াসরা। কিছুটা বিপক্ষের দীর্ঘদেহী স্টপার রুয়ানথিলাকা ও গোলকিপার সুজন পেরেরার দৃঢ়তায়। কিছুটা ক্লিফোর্ড মিরান্ডা, অ্যান্টনি পেরেরাদের ব্যর্থতায়। তবে গোটা মাঠ জুড়ে খেলে, টুর্নামেন্টে নিজের চতুর্থ গোল করে আবার এক বার ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিয়ে গেলেন সুনীল ছেত্রী। ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’এর হ্যাটট্রিক হয়ে গেল ভারতীয় স্ট্রাইকারের সাফ কাপে। দু’বার ভাগ্য ভাল থাকলে এ দিন গোলের হ্যাটট্রিকও হয়ে যেতে পারত সুনীলের।
প্রথম আধ ঘণ্টার মধ্যে ক্লিফোর্ড বক্সের মাথা থেকে চার-চারটে ফ্রিকিক পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। নবির হেড আর জেজের সাইড ভলি অল্পের জন্য বাইরে যায়। শ্রীলঙ্কাও একবার সহজ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। মহম্মদ জাইন গোলকিপার করণজিতকে একা পেয়েও তাড়াহুড়োয় বাইরে মারেন।
বিরতির পর ভারতীয় দল আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ক্লিফোর্ড-ক্লাইম্যাক্স-অ্যান্টনিরা বারবার উঠে গিয়ে সুনীল-জেজের সঙ্গে অ্যাটাকিং থার্ডে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেন। ৫০ মিনিটে এ রকমই ডান দিক দিয়ে উঠে সুনীল শট নিলে কোনও রকমে শ্রীলঙ্কা গোলকিপার চাপড়ে ফেলেন জেজের সামনে। জেজে ভারতকে এগিয়ে দিতে ভুল করেননি। মিনিট কুড়ি পরে বাঁ-দিক থেকে ক্লিফোর্ডের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে সুনীল ২-০ করেন। ম্যাচের শেষ মিনিট পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা ডিফেন্সে চাপ রাখার পুরস্কারও পায় ভারত। ইনজুরি টাইমে জেজের বদলি সুশীলের শট তাড়াহুড়োয় ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দেন শ্রীলঙ্কান ডিফেন্ডার ভন্ডারা।
ভারত: করণজিৎ, নির্মল, গাউলি, গৌরমাঙ্গি, নবি, অ্যান্টনি (স্টিভন), ক্লাইম্যাক্স, রোকাস (জুয়েল), ক্লিফোর্ড, জেজে (সুশীল), সুনীল। |