অবনমন বাঁচাতে পারে সৌরভ আর মন্থর পিচ
ক্যাচ পড়ছে পরপর। কোনও দিন দুটো, কোনও দিন তিন-চারটে। যত সময় যাচ্ছে, রঞ্জি থেকে যেন তত হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা। আর বাংলা ক্রিকেটারদের ক্যাচ ফেলার এই প্রতিযোগিতা দেখে ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছে ফিল্ডিং কোচ আনার।
আজ দরকার ছিল তিনশো-সাড়ে তিনশোর মধ্যে তামিলনাড়ুকে বেঁধে ফেলা। দরকার ছিল সাত-তাড়াতাড়ি গোটা কয়েক উইকেট। সে সব তো এলই না, উল্টে আরও দুটো মোক্ষম ক্যাচ গলিয়ে অবনমনের বিপদসীমায় ঢুকে পড়ল বাংলা। সাড়ে তিনশোর বদলে উঠল ৩৯১। যা দেখেশুনে কোচ ডব্লিউ ভি রামনকে নির্বাচকেরা জিজ্ঞেস করে ফেলেছেন, ক্যাচ ফেলার এত বহর কেন? সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে? রামন জানিয়েছেন, তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু ফিল্ডাররা এ ভাবে ক্যাচ ফেললে তাঁর কী করার থাকতে পারে?
অল্পের জন্য উইকেট এল না। উত্তেজিত বোলার সৌরভ। বুধবার ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
রণ-দিন্দাদের দোষ দেওয়া যাবে না। পিচ স্লো হয়ে উঠছে। তা সত্ত্বেও যে এতগুলো ক্যাচ উঠল, সেটা তো এক দিক থেকে পেস-ব্যাটারির কৃতিত্বই বলা যায়। সুযোগ রণরা তৈরি করে দিতে পারেন, কিন্তু ধরা না ধরাটা তো ফিল্ডারের ব্যাপার। অশোক দিন্দাকেই ধরা যাক। এত ক্যাচ পড়ছে, তবু তিনি এ দিন চলতি রঞ্জির সেরা বোলারদের মধ্যে দু’নম্বর জায়গায় উঠে এলেন। চার ম্যাচে তাঁর উইকেট ২১। সামিরও নয়-নয় করে চলতি মরসুমে ১০ উইকেট হয়ে গেল। রণদেব বসুর উইকেট সংখ্যা এ দিন আরও বাড়তে পারত। কিন্তু রণ-কে দাঁড়িয়ে দেখতে হল, বালাজিকে তাঁর বলে কী ভাবে স্লিপে ছাড়ছেন ঋতম পোড়েল। বালাজি আরও এক বার বাঁচলেন। সৌজন্যইরেশ সাক্সেনা এবং তাঁর ‘বিশ্বস্ত’ হাত। নিজের বলেই বালাজিকে ছাড়লেন ইরেশ। শেষ পর্যন্ত তামিলনাড়ু অধিনায়ক অপরাজিত থেকে গেলেন ৪৯ রানে। যে রানটা বাদ দিলে বিপক্ষের স্কোরটা সাড়ে তিনশোর আশেপাশেই থাকত।
তিন ম্যাচ থেকে এখনও পর্যন্ত পয়েন্ট এসেছে মাত্র পাঁচ। লিগ তালিকার তলানিতে দাঁড়িয়ে বাংলা। হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশের মতো দলও পয়েন্ট তালিকায় টপকে গিয়েছে বাংলাকে। যা পরিস্থিতি, এই ম্যাচ থেকে পাঁচ পয়েন্ট তুলতে না পারলে নকআউটে ওঠা কার্যত অসম্ভব। এ দিনই ইনদওরে মধ্যপ্রদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ‘লিড’ নিয়ে নিয়েছে দিল্লি। তারা জিতলে তবু মন্দের ভাল। পাঁচ ম্যাচ থেকে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে নেহরা-রা শেষ আটে চলে গেলে বাংলার লড়াই করার কিছুটা সুযোগ থাকবে। কিন্তু আবার মধ্যপ্রদেশ সরাসরি জিতলে (যেটা এই লো-স্কোরিং ম্যাচে বাকি দু’দিনে সম্ভাবনা আছে), চার ম্যাচ থেকে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল ‘বার্থ’ প্রায় নিশ্চিত করে ফেলবে তারা। তখন কিন্তু বাংলার ক্রিকেট-আকাশের মুখ আরও গোমড়া হবে।
আর এই মেঘ কাটানোর যোদ্ধা কে? হাতে গোনা দু’জনকে পাওয়া যাচ্ছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (যিনি এ দিন ছ’ওভার বলও করলেন) এবং লক্ষ্মীরতন শুক্ল। অরুণলালের আমল হলে চোখ বুজে বলে দেওয়া যেত, রানটা উঠছে। ইডেনের পিচ যতই সবুজ দেখাক, আদতে সেটা এখন সহজ পিচ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ-সরল বাইশ গজ। বালাজির বলও আসছে সাদামাঠা মিডিয়াম পেসারের গতিতে। আর সেখানে বুধবার দুপুরে বাংলা ব্যাটিং? দু’টো নমুনা দেওয়া যাক।
অরিন্দম দাস। স্থানীয় ক্রিকেটমহল যাঁকে ডাকে ‘ওয়াল’ বলে। ক্রিজে আস্তে-আস্তে জমে গিয়েও হঠাৎ যে কী হল তাঁর! আচমকা তুলে মারতে গেলেন এবং পরিণাম হিসেবে জমা হলেন কভারে। দ্বিতীয় জন, অভিষেক ঝুনঝুনওয়ালা। চলতি মরসুমে যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু দরকারের সময় আজও তাঁর ব্যাট চলল না। খেলা শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে খোঁচা দিয়ে হাঁটা দিলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। ওপেনার শ্রীবৎস গোস্বামী আছেন এখনও। কাটিয়েও ফেলেছেন ঘণ্টা আড়াই। কিন্তু রান করেছেন মোটে ৩৩। রোহন বন্দ্যোপাধ্যায় নামতে পারবেন কি না নিশ্চিত নয় এখনও। এই ম্যাচে কিন্তু একটা মনোজ তিওয়ারিও নেই। নেই কোনও ঋদ্ধিমান সাহা।
এই অবস্থায় সৌরভ-লক্ষ্মী ছাড়া ভরসা করার আর উপায় আছে? তাঁদের ব্যাটে যদি বাংলা ক্রিকেটের ধূসর ক্যানভাস রঙিন হয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
তামিলনাড়ু ৩৯১ (বাসুদেবদাস ১০৬, মুকুন্দ ৮৩, দিন্দা ৪-৮৭, সামি ৩-৮১, রণদেব ২-৮৭)।
বাংলা ৮৪-২ (শ্রীবৎস ৩৩ ব্যাটিং, অরিন্দম ২৭, শ্রীনিবাস ১-১৫)।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.