চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে সুবিচারের আশায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু এক কুকুরের মৃত্যুর পরে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্র ও রাজ্যের ভেটেরিনারি কাউন্সিল পর্যন্ত নিরন্তর ছোটাছুটির ঘটনা প্রায় বিরল। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে।
ওই কুকুরটির জরায়ু থেকে ক্রমাগত রক্ত ও পূঁজ বেরোচ্ছিল। সংক্রমণের জেরে তার কিডনিও বিকল হয়ে গিয়েছিল। ডায়ালিসিসের জন্য কলকাতা থেকে ট্রেনে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দিল্লিতে। কিন্তু কানপুরের কাছে ট্রেনেই মারা যায় সে। মিশেল নামে ওই ল্যাব্রাডরটির মালিক সৌরভ ও পারমিতা মুখোপাধ্যায় নামে এক দম্পতি। |
তাঁদের অভিযোগ, চিকিৎসার গাফিলতিতেই মিশেল মারা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে গিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, রাজ্য ভেটেরিনারি কাউন্সিল ও দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি কাউন্সিলেরও দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। অভিযুক্ত চিকিৎসক দীপককুমার দে রাজ্য প্রাণিসম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। তিনি ভেটেরিনারি কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী সদস্য। সমস্ত অভিযোগই মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
পারমিতাদেবীর বক্তব্য, মানুষের চিকিৎসায় গাফিলতি ঘটলে অভিযোগ জানিয়ে সুবিচার প্রার্থনা করা যায়। অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে যাবে না কেন? তিনি জানান, মিশেলের ওপেন পায়োমেট্রা নামে একটি অসুখ হয়। ক্রমাগত তার জরায়ু থেকে রক্ত ও পূঁজ বেরোচ্ছিল। যে চিকিৎসকের কাছে তাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি দ্রুত অস্ত্রোপচার করে মিশেলের জরায়ু ও গর্ভাশয় বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিলে তাঁরা দীপকবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অভিযোগ, দীপকবাবু অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে কিছু ওষুধ লিখে দেন। পারমিতাদেবী অভিযোগ করেন, “আমরা বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেননি। মিশেলের অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল। এর দিন কয়েক পরে ওর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। ওই চিকিৎসক বিষয়টিকেও তেমন গুরুত্ব দেননি। ফের পুরনো চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি মিশেলকে পরীক্ষা করে জানান, বাঁচার আশা আর প্রায় নেই।”
ওই চিকিৎসক মিশেলের ডায়ালিসিস করানোর পরামর্শ দেন। কলকাতায় তার ব্যবস্থা করতে না পেরে পারমিতাদেবীরা দিল্লিতে যোগাযোগ করেন। দিল্লির চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মিশেলকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। পারমিতাদেবীর স্বামী সৌরভবাবু বলেন, “রাজধানীর প্রথম শ্রেণির টিকিট কেটে আমরা মিশেলকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। টানা তিন দিন ওর প্রস্রাব হয়নি। পুরো নেতিয়ে পড়েছিল। ট্রেনেই মৃত্যু হয় ওর।”
কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি কাউন্সিলের কর্তারা জানিয়েছেন, পারমিতাদেবীর অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য কাউন্সিলের তদন্ত রিপোর্টে অভিযোগকারীরা সন্তুষ্ট না হলে তবেই কেন্দ্রীয় কাউন্সিল তদন্ত শুরু করবে। রাজ্য কাউন্সিলের তদন্ত কবে শেষ হবে? কাউন্সিলের কর্তারা সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে চাননি। শুধু বলেছেন, শুনানি চলছে।
দীপকবাবুর দাবি, কুকুরটিকে মুমূর্ষু অবস্থাতেই তাঁর কাছে আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, “ওই অবস্থায় অস্ত্রোপচার সম্ভব ছিল না। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেছিলাম। এর চেয়ে বেশি কিছু করার ছিল না। তা ছাড়া কুকুরটির মৃতদেহের কোনও ময়না-তদন্ত হয়নি। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসায় গাফিলতি যে হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে কী ভাবে?” |