দূষণ বেড়ে চলায় কোচবিহারের তোর্সা নদী ‘দ্বিতীয় করলা’ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশপ্রেমীরা। সম্প্রতি পরিবেশপ্রেমী সংগঠন নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্টাডি গ্রুপের সমীক্ষায় বেশ কিছু উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, তোর্সা নদীতে কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরার ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ ছাড়াও নদীর জলে ব্যাপকভাবে আবর্জনা মিশছে। মাছ শিকারের জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে সমীক্ষকদের আশঙ্কা, দ্রুত কড়া ব্যবস্থা না নেওয়া হলে জলপাইগুড়ির করলা নদীর মতো বিপদের সৃষ্টি হতে পারে তোর্সায়। পরিবেশপ্রেমী সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্টের সঙ্গে একমত নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র। |
তিনি বলেন, “কোচবিহার শহরের কাছে তোর্সা নদীতে যথেচ্ছ আবর্জনা ফেলা হয়। কালজানি নদীতে ফেলা আবর্জনাও তোর্সাতে পড়ছে। জলপাইগুড়ির করলার ঘটনার পুনাবৃত্তি যেন না হয় সে জন্য এখনই সাবধান হতে হবে। তোর্সার উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে আমি পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দোস্তদারের সঙ্গেও কথা বলেছি।” পরিবেশপ্রেমী সংস্থা এবং নদী বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা শুনে কোচবিহার জেলা প্রশাসনের কর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পরিবেশ দফতরের হস্তক্ষেপ চেয়েছে স্থানীয় পুরসভা। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “তোর্সার দূষণ রোধে পুরসভা ও মৎস্য দফতরের সঙ্গে কথা বলব। কীটনাশক বা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে মাছ ধরা বন্ধ করার জন্য সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।” এ দিকে তোর্সা নদীতে শহরের আবর্জনা ফেলার যে অভিযোগ বিশেষজ্ঞরা তুলেছেন তা স্থানীয় পুরসভার চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডু অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “শহরের আবর্জনা তোর্সা।ফেলা হয় না। তবে অন্য ভাবে যে দূষণ ছড়াচ্ছে সেটা বন্ধের জন্য পরিবেশ দফতরকে ব্যবস্থা নিতে হবে।” যদিও পুরসভা ও প্রশাসনের কর্তারা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন সে দিকে তাকিয়ে না থেকে তোর্সাকে বাঁচাতে বর্ষব্যাপী সচেতনতা কর্মসূচী নিচ্ছে নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্টাডি গ্রুপ। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪ ডিসেম্বর এবং ৫ ডিসেম্বর ‘নদীকে নিয়ে ভাবুন, নদীকে নিয়ে বাঁচুন’ স্লোগান সামনে রেখে স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচী নেওয়া হবে। সংস্থার সমীক্ষায় জানা গিয়েছে কোচবিহারের কাড়িশাল, ঘুঘুমারি, টাকাগছ, পুণ্ডিবাড়ি, মধুপুর, ফাঁসিরঘাট সহ তোর্সার বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘ইনভার্টারের’ সাহায্যে নদীর জলে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা থেকে গামছায় কীটনাশক বেঁধে জলে ফেলে রাখার ঘটনাও ঘটছে। শহরের তোর্সা পাড়ে ফেলে রাখা আবর্জনা থেকে যে নদীর জল যথেষ্ট মাত্রায় দূষিত হচ্ছে সেই বিষয়েও নিশ্চিন্ত হয়েছেন সমীক্ষকরা। নদী লাগোয়া প্রচুর বাড়ির শৌচাগার থেকে যে ভাবে প্রতিদিন নোংরা নদীতে পড়ছে তা নিয়েও পরিবেশপ্রেমীরা উদ্বিগ্ন। নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার স্টাডি গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “সংস্থার রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে করলার মতো বিপদ দেখা দিতে পারে।” |