বাঘিনি হত্যার অপবাদ না ঘুচতেই, এ বার গন্ডার চোরাশিকারের ভয়ে ত্রস্ত কাজিরাঙার বনরক্ষীরা। এর আগে, বোকাখাতে বন ছেড়ে বের হয়ে আসা দুটি গন্ডারের একটিকে হত্যা করে খড়্গ কেটে নেয় চোরাশিকারিরা। সম্প্রতি আরও চারটি গন্ডার কাজিরাঙা থেকে বের হয়ে গিয়েছে। কাজিরাঙা কর্তৃপক্ষ ও বনরক্ষীরা এ মুহুর্তে দু’টি বিষয় নিয়ে চিন্তিত।
(এক) চোরাশিকারিদের হাতে মারা পড়তে পারে এই গন্ডাররা।
(দুই) সাধারণ মানুষ কেউ গন্ডারের সামনে পড়ে গেলে তাঁকে তেড়ে গিয়ে আক্রমণ করতে পারে এই মেজাজি বন্যপ্রাণী। সে ক্ষেত্রে জনরোষের মুখে পড়তে হবে বন বিভাগের কর্মীদেরই। তাই ঘর ছাড়া এই চার গন্ডারকে নিরাপদে কাজিরাঙায় ফিরিয়ে আনার জন্য নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন কাজিরাঙা ও যোরহাটের বনকর্মীরা।
কাজিরাঙা সূত্রে খবর, প্রায় ২০৫০ গন্ডারের বাস কাজিরাঙায়। সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই গন্ডারকুলের জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসার ঘটনাও বাড়ছে। দিন কয়েক আগে কাজিরাঙা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে চারটি গন্ডার। শেষ যা খবর মিলেছে তাতে জানা যায়, এরা ঢুকে পড়েছে যোরহাট ও গোলাঘাটে জঙ্গলে। রোজ বহু কিলোমিটার অবধি পাড়ি দিতে পারে গন্ডার। বনরক্ষীরা গন্ডারদের পাহারা দিয়ে রাখলেও ক্রমাগত গন্ডারকে ধাওয়া করা কার্যত অসম্ভব। অরণ্যের বাইরে থাকা গন্ডার কেবল চোরাশিকারিদের নিশানা হতে পারে তাই নয়, মানুষের সামনে পড়লে, দলছুট গন্ডার তেড়ে গিয়ে আক্রমণও করে। এর আগেও গন্ডারের গুঁতোয় কাজিরাঙার আশপাশে বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছেন। আপাতত, দলছুট চারটির মধ্যে দু’টি গন্ডার মাজুলির একটি দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছে। যোরহাটের রেঞ্জার ও ফরেস্টারদের নেতৃত্বে ছয়জনের একটি দল তাদের পাহারা দিচ্ছেন।
এ দিকে, কাজিরাঙায় বাঘিনি মরার পরে, বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতির খেলা। কৃষক নেতা অখিল গগৈয়ের অভিযোগ, “বনমন্ত্রী ও কিছু পরিবেশপ্রেমী কাজিরাঙাকে ব্যাঘ্রপ্রকল্প বানিয়ে কেন্দ্রের টাকা লুঠ করছেন। জঙ্গলের বাঘ মানুষ-গবাদি পশু মারছে। এইভাবে, অরণ্যের লাগোয়া গ্রামগুলি থেকে আদিবাসীদের হঠানোর চক্রান্ত চলছে।” এই কৃষক নেতার দাবি, ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘ রক্ষা ও বাঘের খাদ্য জোগানের কোনও ব্যবস্থাই নেই। তাই বারবার বাঘ বাইরে বেরিয়ে আসছে।
দেখা দিয়েছে অন্য সমস্যাও। কাজিরাঙা ব্যাঘ্র প্রকল্প হওয়ায় তার ভিতর দিয়ে যাওয়া ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ফোর লেন অবধি সম্প্রসারণের প্রকল্প স্থগিত হয়েছে। এর প্রতিবাদে, ঠিকাদার ও স্থানীয় একাংশ গ্রামবাসীদের নেতৃত্বে ফোর লেন দাবি কমিটি গড়া হয়েছে। এঁরা কাজিরাঙাকে ব্যাঘ্র প্রকল্প ঘোষণা করার বিরোধিতা করেছেন। এ বারের বাঘিনি হত্যা ও কিছুদিন আগে বাঘের হাতে দুই কাঠুরের মৃত্যুর ঘটনাকে সামনে রেখে আজ কোহরায় ব্যাঘ্র প্রকল্প-বিরোধী সমাবেশ আয়োজিত হয়েছিল। পাশাপাশি, গোয়ালপাড়ার আগিয়ায় হাতির হানায় এক ব্যক্তির মৃত্যুতে উত্তেজিত জনতা গত রাতে বিট অফিস জ্বালিয়ে দেয়। |