প্রবন্ধ ২...
শতবর্ষ পরে কী হতে পারত
শোক মিত্রের প্রবন্ধটি (‘আজি হতে...’, ১৫-১১) সম্পর্কে এই লেখা। ১৯১১ সালের শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানের প্রথম গোলটি করেন শিবদাস ভাদুড়ী, তাঁর ভাই বিজয়দাস নয়। খেলা আরম্ভের সময় শিবদাস ও বিজয়দাস যথাক্রমে ফরোয়ার্ডে আউটসাইড ও ইনসাইডে খেলতে নামেন। বিপক্ষ দল একটা গোল করার পর শিবদাস বিজয়দাসকে বলেন, তুই আউট আয়, আমি ইনে ঢুকি। শিবদাস ইনসাইডে আসার কিছু পরেই প্রথম গোলটি করেন। ‘শিবে ঠেলে দে’ কথাটি প্রামাণিক নয়।
শ্রীমিত্র পূর্ববঙ্গ ও অসমে তাঁদের বিষয়সম্পত্তির কী হাল হবে, তা নিয়ে জমিদারকুলের ও তাঁদের প্রাসাদে লালিত আইনজীবীদের দুশ্চিন্তাপ্রসূত চোখা চোখা অভিমান-ভরা বক্তৃতাকেই বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। বঙ্গভঙ্গের আদেশ দিয়ে বাঙালির জাত্যভিমানের ওপর একটা চরম আঘাত করা হয়েছিল বা তখনকার দিনে শিক্ষিত বাঙালি, যাঁরা পেশোয়ার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত জনমত নিয়ন্ত্রণ করতেন ও ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের যাঁরা ছিলেন প্রধান হোতা, তাঁদের দুর্বল করার অভিপ্রায় ছিল ইত্যাদির কোনও উল্লেখ করা হয়নি। অন্যান্য বহু লেখক এগুলির ওপরই জোর দিয়েছেন। দুই বঙ্গই একই গভর্নমেন্টের হাতে থাকবে ও পূর্ববঙ্গে কোনও আলাদা হাইকোর্ট হবে না, তাই বঙ্গভঙ্গ হলে জমিদারদের খাজনা আদায়ের বা আইনজীবীদের মামলা কমে যাবে, এ জাতীয় দুশ্চিন্তা কেন হবে তা বোধগম্য হল না। যেমন বোঝা গেল না, রবীন্দ্রনাথ ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বাংলার শ্রেষ্ঠ মনীষীরা কেন জমিদার ও আইনজীবীদের অঙ্গুলি হেলনে চালিত হলেন ও এমন একটি আন্দোলন সৃষ্টি করলেন, যার জন্য দাদাভাই নৌরজি বাঙালি জাতকে অভিনন্দন জানালেন!
ইতিহাসে অনেক দৃষ্টান্ত আছে, যেখানে একাধিক জাতি একই রাষ্ট্রের নাগরিক ছিল, পরে আন্দোলনের ফলে এক একটি জাতির জন্য এক একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। আবার একাধিক রাষ্ট্রে ছড়ানো একই জাতি ধীরে ধীরে একই রাষ্ট্রে এসেছে।
প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন যদি না হত, দুই পৃথক বঙ্গই থাকত, তবে পূর্ববঙ্গেও গণ-আন্দোলন ক্রমশ শক্তিশালী হত ও মুসলিম লিগ দেশের পূর্বাঞ্চলে নিজের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেত না। ফলে হয়তো স্বাধীনতার মুহূর্তে দেশটা অখণ্ড রূপেই বিরাজ করত। আমি শৈশব ও কৈশোর ঢাকা, যশোর, কুমিল্লা, বরিশাল প্রভৃতি জায়গায় কাটিয়েছি। দেখেছি, ফজলুল হক সাহেবের চেষ্টায় বাঙালি মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষার দ্রুত অগ্রগতি হয়েছে, ‘বেঙ্গল মানিলেন্ডাসর্র্ অ্যাক্ট, বেঙ্গল টেন্যান্সি অ্যাক্ট’ প্রভৃতি আইন পাশ হয়েছে ও চাষিদের প্রভূত আইনগত সুবিধা হয়েছে। এই ফজলুল হকই ১৯৪০ সালে লাহৌর মুসলিম লিগ অধিবেশনে পাকিস্তান প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। আমি চার পাশে যা দেখেছি, তাতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, দেশ বিভাজনের সঙ্গে শ্রেণি-শোষণ বা গণ-আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক ছিল না। এখানে ইতিহাসের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যাতত্ত্বটি ঠিক খাটেনি। তদানীন্তন ভারতের দশ কোটি মুসলমানদের অধিকাংশই যে নিজেদের একটি ‘নেশন’ মনে করতেন, তা নির্বাচনে মুসলিম লিগের বার বার সাফল্য থেকে প্রমাণিত হয়েছিল। পাকিস্তান কেন তাঁরা মেনে নিলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে সর্দার পটেল একাধিক বার এই কথাই বলেছিলেন।
আমার ছোটবেলায় বাবা সরকারি চাকরির সূত্রে পূর্ববঙ্গে যে-সব শহরে বদলি হতেন, সেখানে বহু মুসলিম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, মুন্সেফ, ডাক্তার, স্কুল শিক্ষক প্রমুখের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা সামান্যই দেখেছিলাম। তবে এঁরা প্রায় সকলেই পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন ও এঁদের মধ্যে যাঁরা আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন, তাঁরা জিন্না সাহেবের সংস্পর্শে এসে তাঁর ব্যক্তিত্বে একেবারে অভিভূত ছিলেন।
প্রবন্ধের পরবর্তী বক্তব্য বঙ্গভঙ্গ রদের আন্দোলনের জন্য ওই আদেশ বাতিল করা হল, কিন্তু সম্পন্ন বাঙালি হিন্দুদের ওপর সরকার প্রতিশোধ নিলেন ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে। তার পর রাজধানী কলকাতাতেই থাকলে বাঙালিদের কী কী সুবিধে হত তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবঙ্গ আন্দোলনের জন্যই যে রাজধানী দিল্লিতে চলে গেল, এ রকম অভিমতের পেছনে কোনও তথ্য বা প্রমাণ দেওয়া হয়নি। কোনও সরকারি দলিলে এ কথা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে উল্লিখিত হয়েছে, এমন কথাও বলা হয়নি। আমার মনে হয় বঙ্গভঙ্গ রদ হোক বা না-হোক, রাজধানী দিল্লিতে চলে যেতই, তবে ইতিহাসবেত্তারাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত মত দেওয়ার অধিকারী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.