দাবিদার আছে। কিন্তু বাদ সেধেছে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল। তাই অশনাক্ত হয়ে এখনও মর্গে পড়ে আছে মাওবাদী নাশকতায় দুর্ঘটনায় পড়া জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের নিহত ১৭ জন যাত্রীর দেহ। ঠিক উল্টো ছবি কালকা মেল দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে। মর্গে পড়ে রয়েছে ৯ জন যাত্রীর মরদেহ। কোনও দাবিদার নেই।
গত ১০ জুলাই দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ পূর্ব-মধ্য রেলের ইলাহাবাদ-কানপুর শাখায় মালওয়া স্টেশনের কাছে আপ কালকা মেল লাইনচ্যুত হয়ে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ২৬৪ জন। রেল বোর্ড সূত্রে খবর, এ পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে প্রায় ৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, চাকরি দেওয়ার পদ্ধতিও শুরু হয়েছে।
খতিয়ে দেখা গিয়েছে, কালকা মেলের দুর্ঘটনায় মৃত ও শনাক্ত ৬২ জন ৫৫টি পরিবারের লোক। তাদের মধ্যে ৪৭টি পরিবারের এক জন করে ক্ষতিপূরণ হিসাবে রেলের তরফে চাকরি পেয়েছেন বলে দাবি রেল বোর্ডের। ইতিমধ্যেই ৩৯ জনের পরিবারের নিকট আত্মীয়কে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে, জানিয়েছে তারা। বাকি ৭টি পরিবারের নিকট আত্মীয়দের কারওরই এখনও চাকরি পাওয়ার ন্যূনতম বয়স না হওয়ায় চাকরি দেওয়া যায়নি। তবে বয়স হলে তাদের যে চাকরি দেওয়া হবে, এই প্রতিশ্রুতি সম্বলিত দলিল তাঁদের দেওয়া হয়েছে। বাকি একটি পরিবারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতদের কয়েক জন বিদেশি নাগরিক ও কয়েক জনের দাবিদার না থাকায় চাকরি দেওয়া যায়নি।
রেল বোর্ডের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (তথ্য ও প্রচার) চন্দ্রলেখা মুখোপাধ্যায় বলেন, “কালকা দুর্ঘটনায় অশনাক্ত ৯টি দেহের জন্য রাজ্য পুলিশ ও রেল উভয়েই ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। কিন্তু কেউ আসেননি। এর ফলে কালকা মেল দুর্ঘটনায় মৃত ৯ জন এখনও অশনাক্ত। ওই দুই দুর্ঘটনার পরে ‘বেওয়ারিশ’ দেহগুলি নিয়ে এখন কী করা হবে, তা নিয়ে দুই রাজ্য সরকারই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।”
জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের দেড় বছর পরে ১৭ জনের দেহাংশ এখনও মর্গে। তাদের চার-চার বার ডিএনএ পরীক্ষা করা হলেও আপাত নিখোঁজদের আত্মীয়দের সঙ্গে ডিএনএ না মেলায় মৃতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। জ্ঞানেশ্বরীর ক্ষেত্রে ২১টি পরিবার তাঁদের স্বজনকে খুঁজে পাননি। ওই সব পরিবারের বক্তব্য, তাঁরা সবাই ট্রেন উঠেছিলেন। ফলে এই যাত্রীরা এখনও ‘নিখোঁজ’। ওই পরিবারের লোকজনের সঙ্গেই জ্ঞানেশ্বরীর অশনাক্ত ১৭টি দেহের ডিএনএ মিলিয়ে দেখা হয়। কিন্তু কারওর সঙ্গেই তা মেলেনি। আর দেহগুলি শনাক্ত না হওয়ায় ২১টি পরিবার তাঁদের নিখোঁজ স্বজনদের ডেথ সার্টিফিকেটও পাননি। ফলে পাননি আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা চাকরিও।
দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রে খবর, জ্ঞানেশ্বরী নাশকতায় মোট ১৫০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত ১০৫ জন মৃত যাত্রীর পরিবারের লোক চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। রেল বোর্ডের দাবি, ২৭ জনকে এ পর্যন্ত চাকরি দেওয়া হয়েছে। বাকিদের আবেদন পত্র পরীক্ষার কাজ চলছে।
এ দিকে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ বা ‘নিখোঁজ সার্টিফিকেট,’ যে কোনও একটির জন্য ওই পরিবারগুলি নিয়মিত হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন রেলের অফিসের দোরে দোরে। তাঁদের অভিযোগ, সবাই হাত উল্টো বলছেন, অপেক্ষা করতে হবে কম করে ১০টি বছর। কারণ আইনে তাই বলা আছে। |