লোকসভায় নতুন কলেবরে যখন লোকপাল বিল আনার তোড়জোড় চলছে, ঠিক সেই সময়েই বিহারের নীতীশ সরকার বিধানসভায় লোকায়ুক্ত বিল অনুমোদন করিয়ে নিল। দেশের মধ্যে বিহার দ্বিতীয় রাজ্য, যারা লোকায়ুক্ত আইন তৈরি করল। এর আগে উত্তরাখণ্ড এই আইন তৈরি করেছে। বিহার লোকায়ুক্ত আইনের আওতায় মুখ্যমন্ত্রী-সহ মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে সামিল করা হয়েছে। আজ ধ্বনি ভোটে বিহার বিধানসভায় বিলটি পাশ করানো হয়।
বিলটি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেন, “এই আইন তৈরির জন্য বিরোধীরা যে তাড়াহুড়ো করার কথা বলছেন, তা ঠিক না। আমরা অনেক চিন্তা-ভাবনা করেই এই আইন তৈরি করেছি।” ২০০৫ সালের পরে তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বিহারের জন্য কী করতে চেয়েছে এবং করেছে তার সবিস্তার ব্যাখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিহারই প্রথম রাজ্য, যেখানে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা তাঁদের আয়ের হিসেব জমা দেন।” তাঁর সরকার যে বিহারের মানুষকে অন্য এক দিশা দেখাতে চাইছেন তা জানিয়ে নীতীশ বলেন, “আমরা পরিষেবা অধিকার আইন তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের অধিকার প্রতিষ্টিত হয়েছে।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলনেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকি বলেন, “কেন্দ্র লোকপাল বিল আনতে চলেছে। রাজ্য সরকারের উচিত ছিল সেই আইনকেই মডেল হিসেবে ব্যবহার করে লোকয়ুক্ত তৈরি করা। রাজ্য সরকার এই নিয়ে তাড়াহুড়ো করছেন।” নীতীশ কুমার পাল্টা বলেন, “আমরা যে আইন করব কেন্দ্র তা দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। লোকপাল বিলের ব্যাপারেও কেন্দ্রকে একটা বার্তা দিতে পারব।”
এই বিলটি তৈরির জন্য উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করেন নীতীশ। মোদী কমিটি বিলটি তৈরির পর রাজ্য মন্ত্রিসভা খসড়া বিলটি অনুমোদন করে। সর্বদলীয় সভাতেও নীতীশ কুমার এই নিয়ে আলোচনা করেন। সাধারণ মানুষের জন্য এই বিলের খসড়া ওয়েবাসাইটে প্রকাশ করা হয়। জানতে চাওয়া হয় সাধারণের মতামত। বিহারের প্রায় দেড়শো মানুষ এই বিলের উপর তাঁদের মতামত জানান। ২ ডিসেম্বর রাজ্যপাল দেবানন্দ কোঁয়ার বিলটি বিধানসভায় আনার ব্যাপারে অনুমতি দেন। এরপরেই সোমবার, বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে এই বিলের কপি সদস্যদের মধ্যে বিলি করা হয়। আজ আলোচনার পর তা বিধানসভার অনুমোদন পেল। ফলে বিহারে তৈরি হল লোকায়ুক্ত আইন।
এই বিল নিয়ে প্রকাশ্যে না হলেও নীতীশ সরকারের শরিক, বিজেপি-র কয়েকজন সদস্য আপত্তি তুলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বিজেপি বিধায়কদের বক্তব্য, “বিলটি নিয়ে নীতীশ কুমার জনপ্রিয়তার সস্তা রাজনীতি করছেন। লোকসভায় লোকপাল বিল আসছে। আমরা চেয়েছিলাম, লোকপাল আইনকে সামনে রেখেই এই রাজ্যের লোকায়ুক্ত আইন তৈরি হোক।” |