সরকারের তরফে আশ্বাসে ত্রিপুরায় আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের জাতীয় সড়ক অবরোধের ঘোষিত কর্মসূচি বাতিল হয়ে গেল। আত্মসমর্পণকারীরা কাল সকাল সাড়ে ন’টা থেকে আগরতলা থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম ত্রিপুরার বনকুমারী অঞ্চলে জাতীয় সড়ক অবরোধের কর্মসূচি নিয়েছিলেন। আত্মসমর্পণকারীদের দু’টি সংগঠন জয়েন্ট অ্যাকশন কোঅর্ডিনেশন কমিটির ও জয়েন্ট অ্যাকশন রিহ্যাবিলিটেশন কমিটি গত কাল এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের নোডাল এজেন্সির অধিকর্তা অতাই খাসাং জমাতিয়ার সঙ্গে ওই দুই সংগঠনের কর্তাদের আজ কথা হয়। নোডাল এজেন্সির কথায় আশ্বস্ত হয়ে আগামিকালের জাতীয় সড়ক অবরোধের ঘোষিত কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান জেএসিসি’র সম্পাদক অচাইখাসরং জমাতিয়া। আত্মসমপর্ণকারীদের দাবিদাওয়া ও অভিযোগ নিয়ে শীঘ্রই রাজ্য মন্ত্রিসভায় আলোচনা করা হবে, এই কথা সরকারের পক্ষে নোডাল এজেন্সির অধিকর্তা তাঁদের জানিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। ওই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে জেএসিসি ও জেএআরসি আজ সন্ধ্যায় জরুরি সভা ডেকে আগামিকালের কর্মসূচি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় জেএসিসি’র সম্পাদক অচাইখাসরাং জমাতিয়া এবং জেএআরসি’র সম্পাদক রবীন্দ্র রিয়াং বলেন, ত্রিপুরা সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আত্মসমর্পণকারীরা বহুদিন ধরেই সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে। তাঁদের দাবিগুলির মধ্যে রয়েছেইন্দিরা আবাস যোজনার অধীনে আত্মসমপর্ণকারীদের পুনর্বাসন দেওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করা। দুই নেতারই অভিযোগ, যে সব অঞ্চলে তাঁরা এখন বসবাস করছেন, সেখানে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। এ সব বন্ধ করা জরুরি। এ ছাড়া, রাজ্যের বিভিন্ন থানায় আত্মসমর্পণকারীদের নামে যে সব মামলা ঝুলছে, সেগুলি বিনা শর্তে তুলে নিতে হবে। আত্মসমর্পণকারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ত্রিপুরার উপজাতি কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী অঘোর দেববর্মা এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণকারীদের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যে ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছিল, তার প্রায় সবটাই আত্মসমর্পণকারীদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে সব আত্মসমর্পণকারীদের নামে ‘খুন ও মহিলা সংক্রান্ত অপরাধের মামলা’ রয়েছে, সেগুলি তোলা হবে না, তা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যদি কোনও মামলা কোনও আত্মসমর্পণকারীদের নামে রাজ্যের কোনও থানায় থাকে, সে বিষয়ে উপযুক্ত তথ্য তাঁদের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে বহুবার। সে বিষয়ে কোনও তথ্য এখনও তাঁরা দিতে পারেননি বলে মন্ত্রী দাবি করেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, কিছু আত্মসমর্পণকারী ‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’ এ ধরনের আন্দোলন করছেন। এনএলএফটি ও এটিটিএফনিষিদ্ধ এই দুই জঙ্গি সংগঠনের প্রায় দু’ হাজার আত্মসমর্পণকারীকে এ পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ঘোষিত ‘প্যাকেজে’র সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন। কিন্তু আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে এমন কেউ কেউ আছেন, যাঁরা সরকারি সাহায্যকে উপযুক্ত ভাবে কাজে লাগিয়ে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হবেন, এমনটা চাইছেন না। সমস্যা হচ্ছে তাঁদেরকে নিয়েই। |