অনুমান ছিল, বাঁদরামি হতে পারে।
হনুমান ‘তাসে’ তা রুখে দিলেন গৃহকর্তা!
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরের একটি রাত। তৃণমূল সাংসদের বাড়িতে বিশেষ নৈশভোজ। দিল্লি কা লাড্ডু থেকে জম্পেশ বিরিয়ানি, সুস্বাদু ফল সবই রয়েছে রাতের খাবারের তালিকায়। কিন্তু তার সঙ্গেই রয়েছে একটা অলিখিত সতর্কবার্তা। বাঁদর হইতে সাবধান! অথচ নৈশভোজে খোদ দলনেত্রী আমন্ত্রিত। নিরাপত্তায় তাই একটু কড়াক্কড়ি তো হবেই।
মান বাঁচাতে রাজধানীর মৌলনা আজাদ রোডের বাংলোর গৃহকর্তা তাই বের করলেন মোক্ষম অস্ত্র। এক ডজন ‘সরকারি’ হনুমানের পাহারায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নৈশাহার করালেন সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলোর বাইরে একটার পর একটা লাল বাতি লাগানো গাড়ি, বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের ওবি ভ্যান, নিরাপত্তাকর্মীর ছড়াছড়ি নৈশভোজের রাতে চেনা সব কিছুই ছিল। তবে সকলের নজর এড়িয়ে বাড়ির সামনের রাস্তার কিছুটা অন্ধকারে দিল্লি পুরসভার গাড়িতে অতন্দ্র চোখে অপেক্ষমান ছিল এক ডজন তরতাজা হনুমানও! বাঁদরের উপদ্রব হলেই যাতে তারা ‘ঝাঁপিয়ে’ পড়তে পারে ঘটনাস্থলে।
দুশ্চিন্তা অবশ্য অহেতুক নয়।
রাজধানী দিল্লিতে যে বাংলোটিতে সুদীপবাবু থাকেন সেটি বর্তমানে এতটাই বাঁদর-উপদ্রুত যে নিশ্চিন্তে সংলগ্ন মাঠে প্রাতঃভ্রমণ করতেও সমস্যা হয় তাঁর। আর সেখানেই কি না হাজির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! এ ছাড়াও নৈশভোজে নিমন্ত্রিত প্রচুর সাংবাদিক, রাজ্যের বেশ কিছু মন্ত্রী, তৃণমূল সাংসদ, শিল্পকর্তা, কেন্দ্রীয় সরকারের আমলা। ভোজনরসিকদের তৃপ্ত করতে তৈরি রয়েছে ফিশফ্রাই থেকে বিরিয়ানি। স্বাভাবিক ভাবেই ‘বাঁদরামি’ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন গৃহকর্তা। আর তাই পুরসভাকে বিশেষ অনুরোধ করে আনিয়ে রাখা হয় ডজনখানেক হনুমান। অকুতোভয় বাঁদর তো একমাত্র হনুমানেই কাবু!
বোধহয় পরিস্থিতি আগাম আঁচ করেই সে রাতে ঝামেলা বাড়ায়নি বাঁদরেরা।
তবে শুধু সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলোটিই নয়, রাজধানী জুড়েই বাঁদরের উপদ্রব ক্রমশ বাড়ছে। তাই দিল্লি পুরসভার রয়েছে ২৮টি বেতনভূক (মাসে ৫ হাজার টাকা) হনুমান! সংসদ-সহ বিভিন্ন ভিআইপি এলাকায় যাদের টহল দেওয়ানো হয় ‘নিরাপত্তা’ বজায় রাখতে। গতবারের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের সময় কাশ্মীরি গেটের কাছে একাধিক বুথ লন্ডভন্ড করেছিল বাঁদরেরা। অতিষ্ঠ হয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়, হনুমানকে সামনে রেখে ভোট করা হবে বেশ কিছু ‘স্পর্শকাতর’ বুথ-এ। রাইজিনা হিল, সাউথ ব্লক, নর্থ ব্লকের স্থাপত্যকে তছনছ করার জন্যও সদা সক্রিয় বাঁদরের দল। সরকারি কর্মচারিদের বরাবরের অভিযোগ, ফাইল, খাবারের বাক্স অনেক ক্ষেত্রেই সুরক্ষিত থাকছে না। জানলার পাশে বসে একমনে কাজ করতে করতে হঠাৎই জানলার কাঁচে বাঁদরের থাপ্পড়এমন ঘটনা ঘটছে আখছারই।
তবে এই ‘সঙ্কটজনক’ পরিস্থিতিতেও কেন্দ্রীয় সরকারের সবচেয়ে প্রবীণ মন্ত্রী কিন্তু বাঁদরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন! নিজের ক্ষতি সহ্য করেও। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের তালকাটোরা রোডের বাগানে আম, পেঁপে, কুমড়ো দিয়ে নিত্যই ফলাহার করে বাঁদরেরা! তাই ইচ্ছা থাকলেও সেই ফলের স্বাদ নিতে পারেন না প্রণববাবু। কিন্তু তাতে আক্ষেপ নেই অর্থমন্ত্রীর।
ঘনিষ্ঠ মহলে প্রণববাবুর বক্তব্য, অবিরাম গাছপালা কেটে নগরায়নের হিড়িকে রাজধানীর বাঁদরদের খাদ্য ও বাসস্থানে টান পড়ছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকার সময় তিনি চেষ্টাও করেছিলেন দিল্লির ‘মাস্টার প্ল্যান গ্রিন এরিয়া’-তে ৩০ হাজারের মতো আম, জাম-সহ বিভিন্ন গাছ লাগাতে। যেখানে আনন্দে ঘুরে বেড়াবে বাঁদরেরা। কিন্তু নিজের মন্ত্রিত্বের মেয়াদে সেটা আর করে উঠতে পারেননি। এখন তিনি চাইছেন, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি এই কাজটি করুন। বিষয়টি নিয়ে নিজের উদ্যোগ এবং আগ্রহের কথা জানিয়ে একটি চিঠিও দেবেন বলে অ্যান্টনিকে জানিয়েছেন প্রণববাবু।
অতএব?
বন্যেরা বনে সুন্দর, বাঁদরেরা রাজধানীতে! |