লোকপাল-লড়াইয়ে অণ্ণাদের কড়া বার্তা দিল সরকার
লোকপাল বিল নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট পরশু সংসদে পেশ হবে। কিন্তু সেই রিপোর্ট পেশ হওয়ার আগেই অণ্ণা হজারে এবং তাঁর সহযোগীরা তা খারিজ করে দিয়ে আজ আন্দোলনের আগাম হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন। অণ্ণাদের রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলার জন্য কঠোর বার্তা দিয়ে রাখল কংগ্রেস তথা সরকারও।
সেই লক্ষ্যে অণ্ণা হজারের তীব্র সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ার মন্তব্য করেছেন, “অণ্ণা হিংসাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।” আবার সংসদে দাঁড়িয়ে লোকসভার নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় আজ বলেন, “সংসদীয় ব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলতে যাঁরা সচেষ্ট, তাঁদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। কারণ, এই অস্থিরতাই নেতিবাচক বাতাবরণ তৈরি করছে। কিন্তু তা উপেক্ষা করে যদি ছ’সপ্তাহ সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চালানো যায়, আর্থিক বিষয় নিয়ে সংসদে বিতর্ক হয় তা হলেই ইতিবাচক আবহ গড়ে উঠবে। সংসদীয় ব্যবস্থার সেই শক্তি ভারত সম্পর্কে গোটা বিশ্বের ধারণায় প্রভাব ফেলতে বাধ্য।” কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, নিঃসন্দেহে নাম না করে অণ্ণাদেরই আক্রমণ করেছেন প্রণব। আর সেই রাজনৈতিক মোকাবিলায় সব ক’টি দলকে পাশে পেতে চেয়েছেন।
কংগ্রেসের অতীত দোলাচল থেকে এই অবস্থানে যাওয়া অনেকটাই সুচিন্তিত পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এর ভিত গড়ে দিয়েছেন সনিয়াই। অণ্ণাদের নাম করেও কংগ্রেস সভানেত্রী সম্প্রতি বলেন, সরকার কার্যকরী লোকপাল বিল পাশ করাতে বদ্ধপরিকর। তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদই এই প্রয়াস শুরু করে। সুতরাং এত চেঁচামেচি নিষ্প্রয়োজন। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তো বটেই সনিয়ারও সংশয় নেই যে, লোকপাল বিলের স্বরূপ যা-ই হোক, অণ্ণারা পথে নামবেন। তাই অণ্ণাদের নিয়ে বিচলিত না হওয়ারই পরামর্শ দিয়েছেন সনিয়া।
অণ্ণাদের বিরুদ্ধে শরিক দল এনসিপি তথা শরদ পওয়ারকে পাশে পাওয়ায় কংগ্রেস খুশি। সম্প্রতি পওয়ারকে এক শিখ যুবক চড় মারার পর অণ্ণা বলেন, “মাত্র একটা চড় মেরেছে!” আজ সে প্রসঙ্গে পওয়ার বলেন,“অণ্ণা হিংসাকে সমর্থন করে গাঁধীবাদ এবং অহিংসার নতুন সংজ্ঞা তৈরি করেছেন। আমার ওপর ফের হামলা হলে কোনও সংশয় থাকবে না যে তাঁর প্রশ্রয়েই এ সব হচ্ছে।” একই মত কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারিরও। তবে অণ্ণাও পাল্টা বলেন, “যে হিংসা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, তাকে সমর্থন করি। তাতে অন্যায় নেই।”
শনিবার নয়াদিল্লির যন্তরমন্তরে লোকপাল বিল নিয়ে ‘মহা বিতর্কের’ ডাক দিয়েছে অণ্ণা শিবির। তাতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদেরও তাঁরা আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও চিঠি দিয়েছেন প্রশান্ত ভূষণ। যদিও পূর্ব কর্মসূচি থাকায় সেই নিমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রণব। কংগ্রেসের তরফে কোনও নেতার সেই সভায় যোগ দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বিজেপি নেতৃত্ব রাজনৈতিক সুবিধার আশায় বিতর্কে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, অরুণ জেটলি বা সুষমা স্বরাজ সেখানে যেতে পারেন।
লোকপাল বিল নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট আজ কমিটির বৈঠকে গৃহীত হয়। কমিটির ৩০ সদস্যের মধ্যে ১৬ জন নানা বিষয়ে আপত্তিসূচক নোট দিয়েছেন। এর মধ্যে দীপা দাশমুন্সি, রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ মীনাক্ষী নটরাজন-সহ তিন সাংসদ রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রের গ্রুপ সি কর্মচারীদেরও লোকপালের আওতায় রাখতে হবে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিজেপি-সপা-বসপা আপত্তিসূচক নোট দিয়েছে। লোকপাল পদে সংরক্ষণ দাবি করে নোট দিয়েছেন লালু প্রসাদ। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, রিপোর্ট পেশ হওয়ার পর সরকার নতুন বিল মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাশ করাবে। তারপর সম্ভবত ১৯ ডিসেম্বর ওই বিল সংসদে পেশ করা হবে এবং তা নিয়ে আলোচনা হবে।
চূড়ান্ত রিপোর্টে সুপারিশগুলোর অন্যতম হল, প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় থাকবে কি না, সংসদে সর্বসম্মতির ভিত্তিতে তা স্থির হবে। এ ব্যাপারে তিনটি বিকল্প। এক, প্রধানমন্ত্রী পদ লোকপালের আওতার বাইরে রাখা। দুই, লোকপালের আওতায় রাখলেও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত তাঁর মেয়াদ শেষের পর শুরু হবে। তিন, রক্ষাকবচ রেখে প্রধানমন্ত্রী পদ লোকপালের আওতায় রাখা যেতে পারে। তবে লোকায়ুক্তের আওতায় মুখ্যমন্ত্রীর পদ থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারি গ্রুপ এ এবং বি অফিসাররা লোকপালের আওতায় থাকবেন। কিন্তু রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্তের আওতায় গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মচারীরাও থাকবেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর সময় লোকপালের সঙ্গে সিবিআই আলোচনা করবে। তদন্ত শুরু হলে লোকপাল হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। নাগরিক সনদ ও বিচার ব্যবস্থা লোকপালের আওতায় রাখা হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.