বহু ‘ব্র্যান্ডের’ খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রসঙ্গে ধাক্কা খেয়ে সরকারের বৃহত্তম শরিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভাল করতে উদ্যোগী হল কংগ্রেস। আজ সর্বদলীয় বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের কাছে কংগ্রেসের তরফে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে তবেই এগোবে সরকার।
মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনমনীয় অবস্থানের জন্যই খুচরোয় বিদেশি লগ্নির বিষয়টি আটকে যাওয়ার পরে ইউপিএ-র প্রধান দলের এই অবস্থান দেখে অনেকেই মনে করছেন, অবশেষে টনক নড়েছে কংগ্রেসের। তিস্তা জলবণ্টন থেকে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি একের পর এক ঘটনায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব ক্রমশ বেড়েছে। অবস্থা বুঝে কংগ্রেসেরই একটি বড় অংশ এখন মনে করছেন, তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে সমন্বয় আরও ভাল করার দরকার রয়েছে।
আজ সর্বদল বৈঠক দশ মিনিটেই শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সংসদীয় দলনেতা মুকুল রায় এবং মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আলাদা ভাবে বৈঠক করেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশলের সঙ্গে। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেও বনশল তৃণমূলের নেতাদের জানিয়েছেন, মাঝে মধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনায় বসলে সুবিধাই হবে। মতপার্থক্য এবং ভুল বোঝাবুঝির ফলে সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইউপিএ সরকারই। সম্প্রতি শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে একই কথা বলেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। সে দিন তিনি সুদীপবাবুকে বলেছিলেন যে, শরিকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি ‘মেকানিজম’ তৈরি করতে হবে। বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় তখন প্রধানমন্ত্রীকে বলেন যে, এই দায়িত্বটি তাঁরই। কী ভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানো যায়, তা তিনি দেখবেন। সুদীপবাবু বলেছিলেন, কংগ্রেস সরকার যাতে সসম্মানে কাজ করতে পারে, তার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শরিকের কর্তব্য করে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক মতামতকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে। তা হলে আর সরকারকে বিরোধীদের উপর ‘নির্ভর’ করতে হবে না।
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, খুচরোয় বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে মমতার সমর্থন ছাড়াই হয়তো ঝুঁকি নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাবে ভোটাভুটি মেনে নিতে পারত সরকার। সে ক্ষেত্রে হারলে বিড়ম্বনায় পড়তে হত। স্থগিত রাখার ফলে অবশ্য সরকারের মুখ এখনও পুড়ছে। কিন্তু এখন কংগ্রেসের অগ্রাধিকার, তৃণমূলের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা। ইতিমধ্যেই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন যে, বামেদের সঙ্গে যে ভাবে সমন্বয় বজায় রাখত কংগ্রেস, তা তৃণমূলের সঙ্গে করা হচ্ছে না কেন? কংগ্রেসের এক শীর্ষ কর্তা যার জবাবে বলেন, “বামেরা ছিল ৬০ সংসদের একটি বিরাট ব্লক। তা ছাড়া তাদের একটি সর্বভারতীয় উপস্থিতি ছিল। তুলনায় তৃণমূলের মূল লক্ষ্য হল পশ্চিমবঙ্গ। জাতীয় রাজনীতির দিনগত বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগ্রহ স্বাভাবিক ভাবেই কম।” তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, এখন থেকে তৃণমূল আগ্রহ দেখালে মর্যাদা দেওয়া হবে। আজ বিরোধী দলগুলি তৃণমূলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। ‘কৃষক স্বার্থে লড়াইয়ের জন্য’ মুকুল রায়ের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানান বিজেপি নেতা অরুন জেটলি। আডবাণী বলেন, “মমতার অবস্থান অত্যন্ত সাহসী।” শরদ যাদব, মুলায়ম সিংহ যাদব ও লালু প্রসাদও মমতার অবস্থানের প্রশংসা করেন।
|