|
|
|
|
মমতা-সুব্বারাও বৈঠক |
শিল্পের হাল ফিরিয়ে ব্যাঙ্কঋণের চাহিদা বাড়াতে দাওয়াই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
শিল্পে ঋণের চাহিদা কম বলেই রাজ্যে ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণও কম। বুধবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যত এই কথাই বলে গেলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও। পাশাপাশি রাজ্যে ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর কিছু পথও বাতলে দিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের বৈঠক কলকাতায় হওয়ার কথা। সেই উপলক্ষেই বুধবার কলকাতায় এসে সুব্বারাও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মহাকরণে দেখা করতে যান।
অশোক মিত্র থেকে অমিত মিত্র, রাজ্যের সব অর্থমন্ত্রীই অভিযোগ করে এসেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ব্যাঙ্কগুলি যত টাকা আমানত সংগ্রহ করে, সেই অনুপাতে ঋণ দেয় কম। এই দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই একই অভিযোগ করেন। কিন্তু এই অভিযোগ মানতে নারাজ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সুব্বারাও মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, “ব্যাঙ্কগুলিকে এ রাজ্যে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে বলব। কিন্তু তা বাড়াতে হলে ঋণের চাহিদা বাড়া জরুরি।” তাঁর স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দিতে চাইলেও এ রাজ্যে তা নেওয়ার লোক কম। রাজ্যে আমানতের তুলনায় ব্যাঙ্ক ঋণের অনুপাত যে কম, সে ব্যাপারে সুব্বারাওয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে বলেন যে, এ রাজ্য থেকে ব্যাঙ্কগুলি আমনত হিসাবে যত টাকা সংগ্রহ করে তার ৬২ শতাংশ এখানে ঋণ দেয়। কিন্তু সারা দেশে গড়ে ওই অনুপাত ৭৪ শতাংশ। |
|
মহাকরণে সাংবাদিক বৈঠকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও। সঙ্গে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। নিজস্ব চিত্র |
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সুব্বারাও জানান, “মুখমন্ত্রীকে আমি ঋণের চাহিদা তৈরি করতে বলেছি।” ঋণ বাড়ানোর উপায় হিসাবে তিনটি পথও বাতলে দেন আরবিআই কর্তা। মুখ্যমন্ত্রীকে সুব্বারাও বলেন:
• এ রাজ্যে প্রায় ৬ লক্ষ ছোট ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। যার অনেকগুলিই রুগ্ণ। সেগুলি চাঙ্গা করতে পারলে ঋণের চাহিদাই যে বাড়বে তা নয়, বাড়বে কর্মসংস্থান এবং রাজ্যের আয়।
• রাজ্যে কিছু নতুন বড় শিল্প গড়ে ওঠাও জরুরি।
• সব কৃষককে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হলে কৃষি ক্ষেত্রেও ঋণের পরিমাণ বাড়বে।
মুখ্যমন্ত্রী সুব্বারাওকে বলেন যে, রাজ্যের সমস্ত কৃষককেই ওই কার্ড দেওয়ার কর্মসূচি ইতিমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহৎ শিল্প আনার জন্যও সরকার উদ্যোগী হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে ওভারড্রাফ্ট (ওয়েজ অ্যান্ড মিন্স অ্যাডভান্স) দেওয়ার নিয়ম-কনুন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক শিথিল করবে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তরে সুব্বারাও বলেন, “এই নিয়ম শিথিল করার ক্ষমতা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নেই। এটা কেন্দ্র এবং রাজ্যের ব্যাপার।” তবে রাজ্যের আর্থিক সমস্যা নিয়ে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্যের উন্নতির চেষ্টা করছে। রির্জাভ ব্যাঙ্ক রাজ্যকে সব রকম সহযোগিতা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুব্বারাও।
রাজ্যে যে তিনটি আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক রয়েছে, সেগুলির মূলধন বাড়ানোর ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সুব্বারাও। তিনি বলেন, “তিনটি ব্যাঙ্কেরই মূলধনের সমস্যা রয়েছে। অথচ, রাজ্য ৮৩ কোটি টাকা দিলেই ওই ব্যাঙ্কগুলির জন্য কেন্দ্র দেবে ২৩৫ কোটি টাকা।”
এ ছাড়া রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিজস্ব কিছু কর্মসূচি নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুব্বারাওয়ের আলোচনা হয়। বিদ্যালয় স্তর থেকে ছাত্রদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে পাঠ্যক্রম তৈরি করছে, সেটি রাজ্যে চালু করার বিষয় নিয়েও দুজনের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া ভারত সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যৌথ উদ্যোগে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে জেলায় জেলায় একটি করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ১৯টি জেলার সর্বত্র স্থায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এখনও হয়নি। সেগুলি স্থাপনের উদ্দেশ্যে জমি দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান সুব্বারাও। |
|
|
|
|
|