লগ্নির অঙ্ক প্রায় আটশো কোটি টাকা। সঙ্গে ১৫ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে ফের এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ‘উইপ্রো’র চেয়ারম্যান আজিম প্রেমজি। পশ্চিমবঙ্গে সংস্থার নতুন ক্যাম্পাস গড়ে তোলার পাশাপাশি ই-গভর্ন্যান্স সংক্রান্ত কাজে রাজ্য সরকারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতেও তাঁরা আগ্রহী বলে বুধবার জানিয়েছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। যাঁর মতে, “উইপ্রো-র মতো ‘ব্র্যান্ড’-এর তরফে এ ধরনের আগ্রহ রাজ্যের পক্ষে খুবই আশাব্যঞ্জক।”
এ দিন দুপুর দু’টো নাগাদ মহাকরণে উইপ্রো-কর্ণধারের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু ছাড়াও সেখানে ছিলেন উইপ্রো-র ‘গ্লোবাল অপারেশন’ বিভাগের প্রধান হরিপ্রসাদ হেগড়ে ও সংস্থার দুই অফিসার। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অসুস্থতার কারণে বৈঠকে থাকতে পারেননি। ছিলেন না রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের কোনও আধিকারিকও। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে প্রেমজি অমিতবাবুর সঙ্গে আর এক দফা আলোচনা করেন। কী আলোচনা হল? |
উইপ্রো-চেয়ারম্যান এ দিন কোনও বৈঠকের পরেই মুখ খোলেননি। তিনি মহাকরণ ছেড়ে যাওয়ার পরে রাজারহাটে উইপ্রোর প্রস্তাবিত নতুন ক্যাম্পাস এবং পশ্চিমবঙ্গে তাদের বিনিয়োগ-পরিকল্পনা সম্পর্কে বক্তব্য জানান অমিতবাবু। অর্থমন্ত্রীর কথায়, “প্রেমজি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তাঁর সংস্থা এ রাজ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। ১৫ হাজার কর্মসংস্থান হবে। এখন সেক্টর ফাইভে সংস্থার ক্যাম্পাসে সাড়ে ৭ হাজার কর্মী রয়েছেন।” উপরন্তু উইপ্রো রাজ্য সরকারের ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পেও যুক্ত হতে চায় বলে দাবি করে অমিতবাবু বলেন, “ই-অফিস ও কর সংক্রান্ত বিভিন্ন ই-পরিষেবাদানের ক্ষেত্রে উইপ্রো-ইনফোসিসের মতো সংস্থাকে শরিক করতে পারলে সরকারের কাজ অনেকটাই মসৃণ হবে।”
উইপ্রো-র দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে জমি বরাদ্দ করতে পেরেছিল পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার। ওই সংস্থাকে কাঠাপিছু আড়াই লক্ষ টাকা দরে ৫০ একর জমি লিজে দিচ্ছে রাজ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর: জমির দাম পড়ছে ৭৫ কোটি টাকা। আরও সাড়ে ৬২ লক্ষ টাকা পাবে হিডকো, পরিষেবা ও অন্যান্য খাতে। ২০০৯-এর ডিসেম্বরের গোড়ায় প্রেমজি এসে রাজারহাটের জমিটি দেখে যান। এবং তখনই তিনি জানিয়ে দেন, ১৮ মাসের মধ্যে প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হবে। ২০১০-এর প্রথম দিনেই উইপ্রো জমির দাম বাবদ জমা দিয়ে দেয় প্রথম কিস্তির চেক ১৮ কোটি ৯০ লক্ষ ৬২ হাজার ৫০০ টাকার।
নির্ধারিত পরিকল্পনাসূচি অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। কেন? |
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর: পঞ্চাশ একরের উপরে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের আগে রাস্তা-সহ
অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরি করে দিতে সরকারকে আর্জি জানিয়েছিল উইপ্রো। না-হলে তারা টাকা মেটাতে রাজি নয়। তাই নতুন ক্যাম্পাসের কাজও শুরু হয়নি। তবে হিডকো-সূত্রের দাবি, জমি হস্তান্তরের লক্ষ্যে দ্রুত কাজ শেষ করা হবে। ইতিমধ্যে রাস্তা প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। এ দিন বিমানবন্দর থেকে সংস্থার অফিসে যাওয়ার পথে হরিপ্রসাদ হেগড়েও রাজারহাটে জমিটি দেখতে যান।
উইপ্রো-কে জমি হস্তান্তর বা নতুন ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ শুরুর ‘সময়সীমা’ প্রসঙ্গে অমিতবাবু মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু তাঁর দাবি, “প্রকল্প যে ঠিক পথে এগোচ্ছে, আজ মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া প্রেমজির প্রতিশ্রুতিতেই তা স্পষ্ট।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু অবশ্য এতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ কৃতিত্ব দিতে নারাজ। এ দিনের বৈঠক সম্পর্কে বিমানবাবুর প্রতিক্রিয়া, “উইপ্রো-র আজিমজি যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, তা পুরনো। এক বছর আগে বামফ্রন্টের সময়েই তাঁকে জমি দেখানো হয়েছিল। তখনই তিনি বলেছিলেন, ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেড় বছর বাদে সেই একই প্রকল্পের কথা তিনি বলেছেন। তবে টাকার অঙ্ক বেড়ে গিয়েছে!”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব অবশ্য বলেন, “রাজ্যে বিনিয়োগ হলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। বেকারদের মুখে হাসি ফুটলে আমরা খুশি। রাজ্য সরকার যদি ভাল কাজ করে, তাকে আমরা নিশ্চয় কৃতিত্ব দেব। এ ক্ষেত্রেও দিচ্ছি।” |