সুখের উত্তর
গাঁয়ে বসেই গাড়িতে ফসল তুলে লাভের কড়ি রুস্তমদের
ত দশ মাসে বদলে গিয়েছে ছবিটা।
এত দিন দালালদের কাছে সব্জি বেচে কারও লাভ ছিল নামমাত্র। কেউ তো ক্ষতি হওয়ায় এক বছর চাষ করতেই পারেননি। কিন্তু দশ মাস আগে ‘মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’ সরাসরি তাঁদের কাছে আসার পর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার পূর্ব খিলকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চাষিদের জীবনে এখন ‘পরিবর্তনের’ হাওয়া। এই সংস্থা চাষিদের গ্রামে এসে ফসল তো কিনছেই, তার আগে কী ভাবে ভাল ফলন হবে, সে ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিচ্ছে।
সংস্থার কৃষিবিজ্ঞানীদের পরামর্শ মেনে আজিজুলের খেতে এ বার তিন গুণেরও বেশি ফসল। পকেটে লাভের মোটা টাকা।
পূর্ব খিলকাপুর পঞ্চায়েতের বাজিতপুর গ্রামের চাষি আজিজুল। বছর তিরিশেক বয়স। জমির পরিমাণ তিন বিঘা। এর মধ্যে এক বিঘে জমিতে পালং শাক চাষ করেছেন তিনি। বীজ, সার, কীটনাশক মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে ৪ হাজার টাকা। পালং হয়েছে ৫০ মণের মতো। ‘মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’-র কাছে সেই পালং ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন আজিজুল। অর্থাৎ, ১২ হাজার টাকা লাভ।
অথচ গত বছরেই হিসেবটা ছিল অন্য রকম। আজিজুলের কথায়, “এক বিঘে জমিতে পালং চাষ করতে সে বার খরচ পড়েছিল ৪ হাজার টাকার মতোই। পালং হয়েছিল মাত্র ১৫ মণ। হাটে গিয়ে ৬ হাজার টাকায় তা বেচে এসেছিলাম ফড়েদের কাছে। লাভ ছিল মাত্র ২ হাজার টাকা!”
তা হলে একই জমিতে এ বার তিন গুণের বেশি ফলন হল কী ভাবে? আজিজুলের জবাব, “এ বার তো সংস্থার লোকেরা মাঠে গিয়ে দেখিয়ে দিলেন, কী ভাবে চাষ করতে হবে, কী ভাবে ইউরিয়া সার দিতে হবে, সব কিছুই। পালংয়ে হাজা লাগলে কতটা ওষুধ দিলে পোকা মরে যায়, তা-ও শিখিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এ জন্যই ফলন এতটা বেড়েছে।”
শুধু পালংই নয়, ওই সংস্থার কাছে বেগুন আর ফুলকপিও বেচেছেন তিনি। এবং ভালই লাভ করেছেন। বুধবার লোকসভায় যখন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ স্থগিত রাখা হল, সেই সকালেই ‘মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’-কে এক বস্তা ফুলকপি বেচলেন আজিজুল। ৫০০ গ্রাম ওজনের ৫০টি ফুলকপির প্রতিটির জন্য দাম পেলেন আড়াই টাকা। আজিজুলই জানালেন, এর আগে হাটে ফড়েদের কাছে কপি প্রতি এক থেকে দেড় টাকা পেতেন। “গত বারে তো এক একটা কপি মাত্র ১০ পয়সা লাভেও বেচেছি।” আর এ বার? তাঁর জবাব, “এ বার খরচাখরচ বাদ দিয়ে প্রতি কপিতে লাভ এক টাকার একটু বেশি!”
নগদে উচিত দাম
গ্রামে বসেই বিক্রিবাটা
কৃষিবিজ্ঞানীর পরামর্শ

দু’বছর আগে ফড়েদের কাছে ফুলকপি বেচে এমনই লোকসান হয়েছিল যে, একটা বছর চাষই করতে পারেননি মহিউদ্দিন মণ্ডল। এই পঞ্চায়েতেরই জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা, বছর চল্লিশের এই চাষি এ দিন ‘মেট্রো’-কে ফুলকপি বেচে ফিরছিলেন। বললেন, “এ বছর এক বিঘা জমিতে সাড়ে তিন হাজার ফুলকপি হয়েছে। চাষ করতে খরচ পড়েছে ৫ হাজার টাকা। কোম্পানির কাছে সেই কপি ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। লাভ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।” আগের বছরগুলো এখন ভুলতে চান মহিউদ্দিন। বলছিলেন, “২০০৯ সালে কপি ফলিয়ে ফড়েদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল। এক বিঘে জমিতে ফুলকপি ফলাতে খরচ পড়েছিল সাড়ে ৫ হাজার টাকা। ফড়েদের কাছে তা বিক্রি করি দেড় হাজার টাকায়। সাড়ে ৩ হাজার টাকা লোকসান! পরের বছর তাই চাষই করিনি।” এ বার ‘মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’ গ্রামে এসে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি সব্জি কিনবে বলে জানিয়েছিল। মহিউদ্দিনের বক্তব্য, “ওঁদের কথা শুনেই এ বছর ফের চাষ করি।”
মহিউদ্দিনের মতোই এক বিঘা জমিতে এ বার চাষ করেছেন এই গ্রামেরই আর এক চাষি রুস্তম আলি। তবে তিনি ফলিয়েছেন বাঁধাকপি। তাতেও ভালই লাভের কড়ি গুনেছেন তিনি। রুস্তমের কথায়, “চাষ করতে খরচ হয়েছে ৪ হাজার টাকা। সংস্থার কাছে তা বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার টাকায়। লাভ পাক্কা ৫ হাজার। আগের বছর ওই জমিতে বাঁধাকপি ফলিয়ে হাটের ফড়েদের লাভ হয়েছিল মাত্র ২ হাজার টাকা!”
শুধু ঘরে বসে লাভের মুখ দেখাই নয়, আজিজুল, মহিউদ্দিন, রুস্তমদের আর দু’কিলোমিটার ঠেঙিয়ে ময়নার হাটেও যেতে হচ্ছে না। সহ্য করতে হচ্ছে না ভ্যান রিকশার দৌরাত্ম্য আর হাটে চাঁদার জুলুম। মহিউদ্দিন জানালেন সে কথা। জানালেন, যে দিন ময়নায় হাট বসে না, সে দিন যেতে হোত আরও দূরের কোনও হাটে। তাতে খরচ আরও বাড়ত। রুস্তম বলেন, “ফড়েরা অনেক সময় ইচ্ছে করেই ফসল রোদে ফেলে রেখে টাটকা জিনিসের দাম কম করে দেয়।” আর এখন? আজিজুল জানালেন, “এখন গ্রাম থেকে সব্জি কিনে এলাকাতেই তা ঝাড়াই-বাছাই করে ট্রাকে চাপিয়ে কলকাতা নিয়ে যাচ্ছেন সংস্থার কর্মীরা। আমরা পেয়ে যাচ্ছি নগদ টাকা। সেই সঙ্গে পাচ্ছি বিনামূল্যে কৃষিবিজ্ঞানীদের পরামর্শ।” ফল? “এখন ফুলকপি, বাঁধাকপিও অনেক বড় মাপের হচ্ছে। বেড়েছে ফলনও।” মহিউদ্দিনরা তাই ঠিক করেছেন, শীত চলে গেলেই সব্জি চাষ বন্ধ করে দেবেন না। বললেন, “এ বার গরমেও সংস্থার পরামর্শে আমরা টম্যাটো, লঙ্কার মতো অসময়ের সব্জিও চাষ করব। তার প্রশিক্ষণও দিচ্ছে সংস্থা।”
লাভের অঙ্ক বাড়ছে বলেই ভবিষ্যতের কথা এখন ভাবতে শুরু করেছেন ওঁরা, আর নিজেদের ‘খুশনসিব’ মনে করে ধন্যবাদ দিচ্ছেন সংস্থাকেও। ওরা না এলে তো আজিজুলরা থেকে যেতেন দালালরাজের সেই তিমিরেই!

ছবি: সুদীপ ঘোষ



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.