মহরমের তাজিয়ার মিছিলে যোগ দেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও। হাসান হোসেনের শোকে আকুল মানুষ যখন দুটি সুদৃশ্য তাজিয়া নিয়ে স্থানীয় কারবালা মাঠের দিকে এগিয়ে যান, তখনও দুপাশে ভিড় করেন দুই সম্প্রদায়েরই মানুষ। কেবল শ্রদ্ধা জানানোই নয়, সংস্কারের বশে তাজিয়া পারাপার করে প্রার্থনাও জানান। ওই মিছিল দেখলে বোঝা ভার কে, কোন সম্প্রদায়ের মানুষ। এক-দু বছর নয়, কয়েকশো বছর ধরে এ ভাবেই সম্প্রীতির মহরম পালিত হয়ে আসছে মালদহের রতুয়ার পরানপুর এলাকায়। মহরম উৎসবের ২৪ ঘন্টা আগে থেকেই জেলা পুলিশ, প্রশাসনে রীতিমতো সাজসাজ রব। জেলা জুড়ে মহরমে বিশৃঙ্খলা এড়াতে সোমবার জরুরি বৈঠকও সেরে নিয়েছেন জেলা পুলিশের কর্তারা। মঙ্গলবার দিন সর্বত্রই রাখা হয় কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। পরানপুরের মহরম উৎসবে তার প্রয়োজন হয় না। ওই এলাকার সম্প্রীতির মহরম উৎসবের কথা অজানা নয় স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনেরও। চাঁচলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক অশোক সরকার বলেন, “একে অন্যের ধর্মসংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সহিষ্ণুতা দেখালে তো কোনও সমস্যাই থাকে না। আমাদের কাজও অনেক সহজ হয়ে যায়। পরানপুরে দুই সম্প্রদায়ের মানুষই উৎসবে যোগ দেন বলে শুনেছি। তাই কোনও সমস্যা হয় না। রতুয়ার ভারপ্রাপ্ত ওসি শঙ্কর দাসও বলেন, “ওখানে উৎসবের চেহারাটাই আলাদা। খুব ভাল ভাবে উৎসব পালিত হয়। |
পরানপুরে শুধু যে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরাই মহরমের মিছিলে যোগ দেন তাই নয়, দুর্গাপুজা-সহ সব অনুষ্ঠানে সমান ভাবে অংশ নেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও। দুর্গাপুজার মেলাতেও তাই দেখা যায় সুষ্ঠুভাবে উৎসব সম্পন্ন করতে দুই সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবকরাই মিলিত ভাবে পুজা পরিচালনা করছেন। একই সঙ্গে পুজায় মেতে উঠেছেন প্রত্যেকেই। সেই একই ছবি দেখা যায় মহরম উৎসবেও। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রেই জানা যায়, অনুষ্ঠানের দিন দুপুরে মুসলিম অধ্যুষিত নাদাবপাড়া থেকে দুটো তাজিয়া নিয়ে মিছিল বের হয়। ওই তাজিয়াকে সুদৃশ্য করে তুলতে কয়েকদিন আগে থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েন দুই সম্প্রদায়েরই মানুষ। মিছিল নিয়ে যাওয়া হয় এক কিলোমিটার দূরে কারবালা মাঠে। মন্দির পেরিয়ে, হিন্দু পাড়া দিয়ে সম্প্রীতির ওই তাজিয়া কারবালা মাঠে পৌঁছানোর পর শুরু হয় লাঠিখেলা। এলাকার প্রবীণব্যক্তি তামিজ মিঁয়া বলেন, “কোনও উৎসবেই আমরা হিন্দু, মুসলিম পৃথক ভাবে কিছু ভাবি না। সব উৎসবই একসঙ্গে পালন করি। একই সঙ্গে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করি। স্থানীয় পরানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সত্যজিত দাসও বলেন, “দুর্গাপুজার মতো মহরমও এখানে সম্প্রীতির উৎসব। এলাকার মহরম নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনেরও দুশ্চিন্তা নেই। কয়েকশো বছরের ঐতিহ্য আমরা দুই সম্প্রদায়ের মানুষই মিলিত ভাবে ম্লান হতে দিইনি।” |