আঁধারে আলো
ছবি: সন্দীপন নন্দী
এক ঘর আঁধারে প্রদীপ হাতে এগিয়ে এলেন রাজা। এক পৃথিবী প্রত্যয়ের চেতনায় উপনিষদ সামনে রেখে ১৮২৯-এ রামমোহন রায় ব্রাহ্মসমাজ গড়লেন। লক্ষ্য খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকদের প্রকট হিন্দুবিদ্বেষ মোচন আর রক্ষণশীল হিন্দুসমাজে কুসংস্কার অবলুপ্তির মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের অস্তিত্ব রক্ষা। ফলে অন্ধকারের উৎসেই উৎসারিত হল আলো। রামমোহনের মৃত্যুর পর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, শিবনাথ শাস্ত্রীরা ব্রাহ্মসমাজের হাল ধরেন। মতাদর্শগত কারণে বিভেদ তৈরি হওয়ায় ১৮৬৬-তে ব্রাহ্মসমাজ দু’ভাগ হয়ে গেল, কেশবচন্দ্র ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ গড়লেন। ১৮৭৭-এ হঠাৎ শোনা গেল, কেশবচন্দ্র তাঁর বড় মেয়ে সুনীতি দেবীর বিয়ে দিতে চলেছেন কোচবিহারের যুবরাজ নৃপেন্দ্রনারায়ণের সঙ্গে, যা ১৮৭২-এ তাঁর ব্রাহ্ম বিবাহ আইন-এর পরিপন্থী। সমাজে প্রবল আলোড়ন উঠল। সুনীতি তখন চৌদ্দো এবং যুবরাজ মাত্র পনেরোর বালক। ১৮৭৮-এ স্থির হল, (১) যুবরাজ বিলেত যাওয়ার আগেই বিয়ে হবে, (২) হিন্দু শাস্ত্রানুযায়ী বিয়ে হলেও পৌত্তলিক অংশ বাদ থাকবে, (৩) কেশব হিন্দুধর্মে কৌলীন্য হারানোয় তাঁর ভাই কৃষ্ণবিহারী সম্প্রদান করবেন এবং (৪) কোচবিহারের পুরোহিতগণ বিবাহ পরিচালনা করবেন, এতে ব্রাহ্মসমাজের করণীয় কিছু থাকবে না। এর পর প্রবল বাদানুবাদের প্রেক্ষিতে ২৩ জন ব্রাহ্ম এর প্রতিবাদে এক পত্রে স্বাক্ষর করলেও কেশব তা পড়েও দেখলেন না। বিয়ে যথারীতি হয়ে গেল, তবে কেশবের সম্মানে পৌত্তলিক মন্ত্রোচ্চারণ এবং শালগ্রাম শিলা থাকল না। তবে বিয়ের পর পরই নবদম্পতি রাজপরিবারে বহুবিবাহ ও রাজ্যে সশ্রম কারাদণ্ড রদ করেন। শুধু তাই নয়, আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কোচবিহারে আসার ক’বছর আগেই ১৮৮২-তে রাজা-রানির ঐকান্তিক প্রয়াসে কোচবিহারে দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে বড় ব্রাহ্মমন্দির নির্মিত হয় এবং এর দেখভালের জন্য রাজকোষ থেকে বাৎসরিক ৫ হাজার টাকা মঞ্জুর হয়। ১৮৮৮-তে নৃপেন্দ্রনারায়ণ ব্রাহ্মধর্মকে রাজ্যের ধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন। ৪৯ বছর বয়সে প্রয়াত হন নৃপেন্দ্রনারায়ণ, তাঁর ইচ্ছানুসারে সৎকার হয় ব্রাহ্মমতে, এবং অস্থিভস্মের উপর গড়া হয় স্মৃতিসৌধ। আজও তোর্ষার পাড়ে সে স্মৃতি অমলিন। আর সুনীতি রোডে দাঁড়িয়ে আছে সেই ব্রাহ্মমন্দির, উত্তরবঙ্গের চেতনা-উন্মেষের প্রার্থনাঘর।

নাজিরপুরের স্তূপ
দক্ষিণ দিনাজপুরের পতিরামের কাছে রয়েছে নাজিরপুর। সেখান থেকে পাঁচশো মিটার দক্ষিণে গেলেই দেখা যাবে একটি স্তূপ। এটিই নাজিরপুরের স্তূপ। সুপ্রাচীন স্তূপটি প্রায় ১৫-২০ ফুট উঁচু এবং দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট ও প্রস্থ ৭০ ফুট। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, আগে এই স্তূপটি আরও উঁচু ছিল, এখন কিছুটা বসে গিয়েছে। আগে এখানে একটি পাকুড় গাছ ছিল, বর্তমানে সেটা আর নেই। অনুমান করা যায় এখানে আগে কোনও প্রাচীন সৌধ ছিল, আজ তা সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত। স্তূপের পাশে রয়েছে একটি পুকুর। এখানে আগে বৈশাখ মাসে কালীপুজো হত। পুজো উপলক্ষে মেলাও বসত। বছর কুড়ি হল মেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই স্তূপ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। ক্ষেত্রসমীক্ষা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। উঁচু ঢিবিটি বৌদ্ধবিহার বলে অনেকে মনে করেন। স্তূপের সামান্য অংশ খনন করলেই মাটির ফলক পাওয়া যায়। দেখতে অনেকটা বর্তমান টালির মতো। অনেকে আবার বলেন, স্তূপটি পাল-সেন যুগের সমসাময়িক। হয়তো এটি বাণগড়ের ক্ষুদ্র একটি প্রশাসনিক বিভাগ ছিল। স্থানীয়দের মতে, স্তূপটির ওপর সৌধটি মোগল যুগের হতে পারে। স্তূপটি কোন সময়ের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে, তার জন্য প্রয়োজন প্রত্ন খননের।

বোলঞ্চার মসজিদ
শুধু রাস্তাঘাট দিঘি খননই নয়, বাংলার অন্য জমিদারদের মতো বোলঞ্চার জমিদাররাও দান-ধ্যানে এগিয়ে এসেছিলেন। কথায় বলে কীর্তির্যস্য স জীবতি। তাঁদের উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল বোলঞ্চার এক গম্বুজের মসজিদ। ইসলামপুর থেকে মাটিকুণ্ডা যেতে পথের ধারে দেখা যাবে এই মসজিদ। মসজিদের পাশেই পশ্চিম দিকে জমিদার জাবাহের আলির জরাজীর্ণ বাড়ি। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জমিদার জাবাহের আলি এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্বমুখী এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট, প্রস্থ ২১ ফুট এবং উচ্চতা ৩০ ফুট। তার ২৫ ইঞ্চি চওড়া দেওয়াল ইট-বালি-চুন-সুরকির। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বের দেয়াল কারুকার্যময়। বিশেষ করে পূর্বের অর্থাৎ সামনের দেওয়ালে লতাপাতার কারুকার্য দেখার মতো। সহজে চোখ ফেরানো যাবে না। চারটি খিলানের ওপর স্থাপিত রয়েছে একটি সুবৃহৎ গোলাকার গম্বুজ এবং ন’টি মিনার। এদের শীর্ষদেশে দেখা যায় কলসি আর পদ্মফুল। এদেরও কারুকার্য লক্ষণীয়। সুরম্য এই মসজিদের অভ্যন্তরে ঢুকলেই চোখে পড়বে কুলঙ্গি আর মেহরাব। মেহরাবের পাশে বসে মৌলবি মফিজুদ্দিন সাহেব কোরান পাঠ করেন। বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ মনোযোগ সহকারে সেই কোরানপাঠ শুনে থাকেন। প্রতি শুক্রবার সেখানে নমাজ হয়। ইদের দিনের নমাজে বহু মানুষ যোগ দেন।


উত্তরের কড়চা
এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.